প্রতিটা মানুষ কোন না কোন স্বপ্নে বিভোর। কল্পনায় কিংবা বাস্তবে সবাই সেই স্বপ্নের পিছে ছুটে। কিন্তু কারোর স্বপ্ন পূরণ হয় আর কারোরটা হয় অংকুরেই বিনষ্ট। মানুষের স্বপ্ন যাতে অংকুরে বিনষ্ট না হয় সেই স্বপ্ন বুনছেন আরেকজন স্বপ্নবাজ যিনি নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পাশাপাশি কাজ করছেন অন্যের স্বপ্ন রঙ্গিন করতে। যিনি পেশাগত জীবনে একজন প্রকৌশলী। তবে, তিনি খুব গর্ব করে আরেকটি পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, সেটি হলো তিনি ‘আগামী’র সহ পরিচালক ড.সাবির মজুমদার।
ড. সাবির মজুমদার ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়াসন বিভাগে। সেখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি পিএইচডি করেছেন বায়োফিজিক্যাল ক্যামেস্ট্রি থেকে এবং পোস্ট ডক্টরেট করেন এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ। বর্তমানে তিনি প্রসেস ডেভলপমেন্ট ইন্টারগ্রেশন ইঞ্জিনিয়ার স্পেশালাইজড ইন এম.আই কন্ট্রাক্টর ইন্ড্রাস্ট্রিতে।
‘আগামী’র স্বপ্ন কোথা থেকে আসে এ প্রশ্নের উত্তরে ড. মজুমদার জানান, আগামীর স্বপ্ন তার একার নয়। তিনি ও তার দুই বন্ধু ড. বাবু রহমান ও ড. মাহমুদুল হাসান তিনজন মিলে সিলিকন ভ্যালিতে বসে গল্প করতে করতে তাদের মাথায় আসে দেশের কাছে তারা দায়বদ্ধ। দেশের উন্নয়নে কিছু করার চিন্তা থেকেই তারা ‘আগামী’ প্রতিষ্ঠা করেন।
আগামীর উদ্দ্যেশ্য কী এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন তারা যখন ভাবছিলেন দেশের উন্নয়নে কী করা যায় তখন তাদের সবার মাথায় একটা বিষয়ই আসে – শিক্ষা। শিক্ষা হলো এমন একটা বিষয় যার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে দেশের উন্নয়ন সম্ভব। তাই আগামীর উদ্যেশ্য মূলত সমাজের উন্নয়ন, শিক্ষার উন্নয়ন তথা সমগ্র দেশের উন্নয়ন। সমাজকে আলোকিত করার উদ্যেশ্যেই আগামীর সূচনা।
‘আগামী’ নতুন কোন উদ্যোগ নয়, দীর্ঘদিন ধরে ‘আগামী’ তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও এটি একটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের পারিশ্রমিক দিয়ে নিয়োগ করতে হয়। সেই জায়গাতে বাজেট কিভাবে আসে বা কিভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, শুধু দেশ নয় দেশের বাইরের বিভিন্ন জায়গা থেকে আগামীর সাথে ভলান্টিয়াররা যুক্ত হচ্ছে। এরা সবাই নেতৃত্ব দিচ্ছে কিন্তু প্রজেক্ট মনিটরিং, প্রজেক্ট ইম্পলিমেনটেশন এসবের ক্ষেত্রে সবসময় ডেডিকেটেড ফুল টাইম কাউকে পাওয়া যায় না। এসব জায়গাগুলোতে তারা পেইড স্টাফ নিয়োগ করে থাকেন বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, সেই প্রেক্ষিতেই ঢাকায় তাদের আগামীর একটি অফিস রয়েছে এবং সেখানে প্রায় ২০ জনের মতো পেইড স্টাফ রয়েছে তাদের। তাছাড়া আগামীর একটি সিস্টার অর্গানাইজেশন রয়েছে যার টাইটেল হলো, ‘আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশন’। এটার কাজও ভলান্টিয়ার বেসড কাজ। তারা লোকাল ম্যানেজমেন্টশিপ অফার করে ভলান্টিয়ার ম্যানেজ করে। আগামী মূলত প্রয়োজন অনুসারে তাদের কর্মী নিয়োগ দেয়। তাদের বিভিন্ন রকমের প্রজেক্ট রয়েছে, এসব প্রজেক্টে স্কিলড ও ডেডিকেটেড মানুষ দরকার হয় বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, বর্তমানে ১০/১২ টি জেলার মাঝে প্রায় ১২ টি বিদ্যালয়ে আগামী তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সংগঠনটি নতুন কোন স্কুল তৈরি করে না। জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী যেসব স্কুল সুবিধা বঞ্চিত, সংগঠনটি সেসব স্কুলের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, স্কুলগুলো বিভিন্ন প্রজেক্ট প্রপোজাল রেডি করে আগামীর কাছে সাবমিট করে তারপর আগামী সেসব স্কুলের হালচাল পর্যবেক্ষণ করে তাদের সাথে কাজ করে। তাছাড়া আগামী যে একই স্কুলের সাথে বছরের পর বছর কাজ করে বিষয়টি এমনও নয়। কোন স্কুল যদি এম্পিওভুক্ত হয়ে যায় কিংবা ডোনেশন আসে কিংবা অসহযোগীতা করে তাহলে আগামী সেইসব স্কুলে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
সংগঠনটির প্রজেক্টের অন্তর্ভূক্ত শিশুরা সবাই সুবিধাবঞ্চিত। তারা শুধুমাত্র যে শিক্ষার সুযোগ পায় না এমন নয়, বাড়িতেও তারা অনেক সময় পড়াশোনার পরিবেশ পায় না। এসব ক্ষেত্রে আগামী কাজ করছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যাতে শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত সুযোগ পায়, যাতে ড্রপ আউট না হয়ে যায় এসব বিষয় দেখাশোনা করার জন্য আগামী একটি সাপোর্টিভ টিম ইনিশিয়েট করছে। এসব বিষয় দেখাশোনা করার জন্য তাদের কিছু প্রজেক্ট রয়েছে যাকে পিবিআই বলা হয়। কয়েকটি প্রজেক্ট মিলিয়ে ১০ টির মতো পিবিআই রয়েছে তাদের।
সংগঠনটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে ড.মজুমদার বলেন, আগামী ৫০ বছরের মাথায় যাতে বাংলাদেশে সুবিধাবঞ্চিত কোন স্কুল না থাকে সেই লক্ষ্য নিয়ে আগামী কাজ করে যাচ্ছে। তবে সেটি বাস্তবায়ন করা তাদের একার পক্ষে সম্ভব হবে না। তিনি মনে করেন, এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য সরকারী ও বেসরকারি সহায়তা দরকার। তিনি আরও বলেন, আপাতত আগামী ১০ বছরের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তাদের প্রধান পরিকল্পনা হলো আগামীর শিশুরা এবং তাদের পরিবার বিশেষ করে তাদের মায়েরা যেনো ইনকাম ওরিয়েন্টেড হয়। সেই লক্ষ্যে ‘অদম্য নারী’ নামক একটি প্রকল্পও হাতে নিয়েছেন বলে জানান তিনি। এই প্রকল্পটির উদ্যেশ্য হলো মুলত, মায়েদের সেলাই শেখানো এবং সেগুলোকে মার্কেটিং এ সহায়তা করবে আগামী। এর মাধ্যমে আগামীও কিছুটা লাভবান হবে বলে মনে করেন তিনি।
এই ছিলো ড. সাবির মজুমদার এর আগামীর গল্প। আগামী নিয়ে তিনি তার স্বপ্নের চেয়েও বেশিদূর এগিয়েছেন বলে মনে করেন। তিনি সংগঠনটিকে আরও অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চান।
জানতে চেয়েছিলাম ড.সাবির মজুমদার মৃত্যুর পর কিভাবে স্মরনীয় হতে চান। এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্মরণীয় হবার বিষয়টি আপেক্ষিক। কে কাকে কিভাবে মনে রাখে কেউ জানে না। তবে তিনি এখানে পরিবারকে প্রাধান্য দেন। তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো তার পরিবার তাকে কিভাবে মনে রাখবে। তিনি আরও জানান তিনি চান, আগামীর মাধ্যমে মানুষ তাকে মনে করুক। তিনি আগামীর মাঝে স্মরণীয় হতে চান।
লিখেছেন – রোমান উদ্দিন