রাশেদা রওনক খান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ তম (নৃবিজ্ঞান) ব্যাচের ছাত্রী। থাকতেন জাহানারা ইমাম হলে। হলের জুনিয়রদের যেমন স্নেহ করতেন তেমনি সিনিয়রদের প্রতি ছিল অগাধ সম্মান। ফলে সহজেই সবার প্রিয় ও আস্থা ভাজন হয়ে উঠেছিলেন অল্প সময়ে। নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিটা পরিক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন তিনি। এছাড়াও ক্লাসমেটদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, বিভাগের বিভিন্ন প্রোগ্রাম আয়োজন ও অংশগ্রহণসহ […]

রাশেদা রওনক খান :  গবেষক, লেখক, উপস্থাপিকা এবং একজন শিক্ষক

রাশেদা রওনক খান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ তম (নৃবিজ্ঞান) ব্যাচের ছাত্রী। থাকতেন জাহানারা ইমাম হলে। হলের জুনিয়রদের যেমন স্নেহ করতেন তেমনি সিনিয়রদের প্রতি ছিল অগাধ সম্মান। ফলে সহজেই সবার প্রিয় ও আস্থা ভাজন হয়ে উঠেছিলেন অল্প সময়ে। নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিটা পরিক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন তিনি। এছাড়াও ক্লাসমেটদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, বিভাগের বিভিন্ন প্রোগ্রাম আয়োজন ও অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মকান্ড তাঁকে বিভাগের শিক্ষক,শিক্ষার্থীদের মাঝে স্নেহের ও সম্মানের পাত্রে পরিণত করে।রওনক খান ২০০৬ সালে জাবিতে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। বেশ কয়েক বছর জাবিতে পড়িয়ে পরবর্তিতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  নৃবিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন।

রাশেদা রওনক খান এর মা প্রফেসর জোহরা আনিস রত্নগর্ভা পুরষ্কার, রোকেয়া পদক, গুণীজন সম্মাননা সহ অনেক পদক পেয়েছেনতিনি ছিলেন কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের প্রিন্সিপালছেলেবেলা থেকে মায়ের কড়া শাসনে তিনি বড় হয়েছেনখুব ভয়ও পেতেন মা কেতবে এখন তার সবথেকে কাছের বন্ধু তার মা৷ ছোট বেলা থেকেই তিনি তার মা কে দেখেছেন বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকতে, সমাজসেবার কাছে নিয়োজিত থাকতেএরপর ও মা এর কাছে থেকে সর্বোচ্চ সময়ই পেয়েছেন তিনি

শিক্ষার্থীদের স্কুলে আনার ব্যাপারে রাশেদা রওনক খান বলেন, স্কুলে শিক্ষার্থী আনার ব্যাপারে নীতিগত দিকগুলো ঠিক করেছে সরকারতবে শিক্ষার্থীরা ঠিকমত স্কুলে যাচ্ছে কি না কিংবা বিভিন্ন বৃত্তির টাকা তারা ঠিকভাবে পাচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ এ সমস্যাটা মূলত দেখা যাচ্ছে নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুদের ক্ষেত্রেঅর্থনীতির বিকাশের সাথে সাথে  অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডগুলো ব্যাপকতা লাভ করেছে আর এই সেক্টরে প্রাধান্য পাচ্ছে শিশুরাকারণ তাদের অল্প খরচে কাজে লাগানো যায়এতে করে শিশুদের পরিবারে কিছুটা স্বচ্ছলতা আসছে এবং অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু শিশুরা স্কুলমুখী হচ্ছে নাএতে করে শিশুদের সম্পদে পরিণত করা যাচ্ছে নাএ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

ছাত্ররাজনীতি নিয়েও বিস্তর লেখা আছে রাশেদা রওনক খানেরইদানীংকালে ছাত্ররাজনীতিতে বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পরেআদর্শের বাইরে অন্য কি কি কারণে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, রাজনৈতিক মতাদর্শের বাইরে গিয়ে কিভাবে রাজনীতি করছে এবং এর ফলে নিজেকে বিশেষ কিছু মনে করা এই বিষয়গুলো নিয়েই লিখেছেন তিনি

সবকিছু সম্ভবের দেশ বাংলাদেশবাংলাদেশে ইতিবাচক বা নেতিবাচক যেকোনো ঘটনাই ঘটতে পারেধর্ষণ যৌন নির্যাতনের মত বিষয়গুলো নিয়মিতই চোখে পড়েক্ষতিগ্রস্ত নারীদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার, এনজিও, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহ সকলকেই এগিয়ে আসতে হবেরাশেদা রওনক খানের মতে ধর্ষণের কারণগুলোকে সংজ্ঞায়িত করা খুব কঠিন৷পতিতালয় না থাকলে একদিকে যেমন ধর্ষণ বেড়ে যেত বলে মনে করা হয় কারণ এখানে মানুষ তার যৌন লালসা মেটাতে পারে কিন্তু ঠিক অপরদিকে শিশু ধর্ষণ বা মৃতদেহকে ধর্ষণের বিষয়গুলোও সামনে উঠে আসছে৷ 

রাশেদা রওনক খান মনে করেন আমাদের উচিত ছিল নিজেদের সংস্কৃতি আঁকড়ে ধরা, সেটাকে লালন করাকিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের সংস্কৃতিতে পশ্চিমা আগ্রাসন, আরব সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ, ভারতীয় সিনেমাগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়এর ফলে আমাদের সংস্কৃতি পরিণত হয়েছে একটি সংকর বা হাইব্রিড সংস্কৃতিতেবিভিন্ন উৎসব এখনো উদযাপন করা হয় তবে সেই উদযাপনে আগের সেই আবেগ কিংবা সৌহার্দ্য  দেখা যায় নাসাংস্কৃতিক বিভিন্ন ব্যাবহারেও এখন অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছেএতে করে আমাদের সংস্কৃতি পরিবর্তিত হচ্ছেতবে আমাদের উচিত নিজেদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখার চেষ্টা করা। 

টক শো এর মাধ্যমে ভীষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন রাশেদা রওনক খানএক্ষেত্রে তিনি সবসময় মাথায় রেখেছেন, বাংলাদেশে গতানুগতিক  অনেক টক শো হয় তার অনুষ্ঠানটি যেন সেরকম না হয়মন থেকে যা সায় দিয়েছে তিনি তাই করেছেনশুরুতে তার কাছে প্রস্তাব ছিল শুধুমাত্র অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করারতবে তিনি এমন অনুষ্ঠান করেছেন যা তার আদর্শের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যে বিষয়গুলো তিনি নিজের অন্তরে ধারন করেনচ্যানেল আই তে প্রচারিত মুক্তিযুদ্ধের কথা তার করা প্রথম অনুষ্ঠান এবং থেকেই তার শুরুএও অনুষ্ঠান গুলো করার পিছনে তার উউদ্দেশ্য ছিল তরুণদের রাজনীতি সচেতন করে গড়ে তোলার প্রয়াস৷ বাংলাদেশে ধরনের অনুষ্ঠান করতে অনেক বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়তবে তার ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটেনিতিনি পরিপূর্ণ স্বাধীনতা পেয়েছেন। 

মানব পাচারের ভয়াবহতা রোধে তিনি মনে করেন সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণএই সচেতনতা তৈরি জন্য সর্বস্তরে প্রচারণা  প্রয়োজনএছাড়াও সরকারের ভূমিকাও এক্ষেত্রে অনস্বীকার্যযারা এই মানব পাচারের সাথে জড়িত সরকারের উচিত তাদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা। 

নিম্ন আয়ের মানুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানবেতর জীবন যাপন করছে শ্রেণীর মানুষ প্রচুর পরিশ্রম করলেও তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারছে নাতবে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া বা সিস্টেমের মধ্যে ধরনের মানুষকে আনলে তারা যেমন উপকার পাবে তার সাথে সাথে অর্থনীতির পরিবর্তন ঘটবে৷এর সাথে সাথে শ্রমবাজারে থাকা শিশুদের স্কুলে আনার ব্যবস্থা করতে হবে৷ আমাদের বিষয়গুলো নিয়ে বাস্তবিক অর্থেই চিন্তা করতে হবেআলোচনা শুধুমাত্র টক শো বা বিভিন্ন সভা সমাবেশে আবদ্ধ থাকলে চলবে না, অন্তরে ধারণ করতে হবেরাষ্ট্রসহ সকল প্রতিষ্ঠানকে ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যেতাহলেই সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব। 

আমরা সকলেই এই রাষ্ট্র, সমাজ পরিবারের কাছে দায়বদ্ধরাশেদা রওনক খান এই দায়বদ্ধতা থেকেই দেশের জন্য, সমাজের জন্য কিংবা নিজের পরিবারের জন্য কিছু করতে চানতিনি বিশ্বাস করেন তিনি তার এগিয়ে চলার পথে সর্বস্তরের মানুষের কাছে ঋণী এবং এর প্রতিদান দেওয়াটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

লিখেছেনঃ রোমান উদ্দীন