আরিফিন শুভ ১৯৮২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ বিভাগীয় জেলার ভালুকা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। আংগারগাড়া গ্রামে পৈতৃক নিবাস হলেও তার জন্ম ময়মনসিংহ শহরে।বাবা এস এম শামসুল হক ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সরকারি কর্মকর্তা, মা ছিলেন একজন ছোট চাকুরিজীবী। শুভ’রা দুই ভাই, মাহবুবুল আরিফিন শুভ অর্থাৎ আমাদের আরেফিন শুভ ছোট এবং বড় ভাই মাহমুদুল খান সজীব।
শুভ ২০০৭ সালে প্রথম মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর হ্যাঁ-না নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু করেন। ২০০৮ সালে ইজ ইকুয়াল টু ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে তার অবস্থান শক্ত করেন। ২০১০ সালে খিজির হায়াত খান পরিচালিত জাগো চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার বড় পর্দায় অভিষেক হয়। কয়েক বছর বিরতির পর ২০১৩ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী চলচ্চিত্রে খলচরিত্রে অভিনয় করেন।এই চলচ্চিত্র গুলোর মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু করেন। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী, অগ্নি, তারকাঁটা, কিস্তিমাত, ছুঁয়ে দিলে মন, মুসাফির, অস্তিত্ব, নিয়তি, ঢাকা অ্যাটাক, আহারে, সাপলুডু, মিশন এক্সট্রিম এর মতো চলচ্চিত্র।
এ সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক আরেফিন শুভ মডেলিং এর মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০০৫ সালে। পাশাপাশি ছিলেন জনপ্রিয় একজন আর জে ও ।এর বাইরে তিনি অসাধারণ একজন গায়ক ও বটে। বর্তমানে খ্যাতির চূড়ায় অবস্থান করছেন বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকে স্বয়ং বঙ্গবন্ধু চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়ার পর। এর আগে চরিত্রের খাতিরে সিক্স প্যাক বানিয়েও তিনি এসেছিলেন আলোচনায়। বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকে অভিনয়ের আগে তিনি কাজ করেন মিশন এক্সট্রিম এ।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মিত সিনেমাটির পরিচালক শ্যাম বেনেগাল কেন আরেফিন শুভকেই বঙ্গবন্ধু চরিত্রের জন্য মনোনীত করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের একটি প্রচলিত ধারণা আছে যে প্রতিটি অভিনেতার নির্দিষ্ট একটি সেট লুক থাকে এবং তিনি সেভাবেই কাজ করে যান।তবে আরেফিন শুভ-ই প্রথম যিনি চরিত্রের খাতিরে দৈহিক গড়নে পরিবর্তন আনেন এবং মিশন এক্সট্রিম চলচ্চিত্রে চরিত্রের খাতিরে মানানসই লুকে পর্দার সামনে হাজির হন। সিনেমার শ্যুটিং শেষ হতে না হতেই আরেফিন শুভর ডাক পরে কলকাতায় বঙ্গবন্ধু চরিত্রে অডিশনের জন্য। মিশন এক্সট্রিম সিনেমায় অভিনয়ের সময় পাওয়া আঘাত নিয়েই অডিশনের জন্য কলকাতা যান শুভ । তাঁকে দেখে পরিচালক শ্যাম বেনেগাল মজা করে বলেন খোঁড়া মুজিব। যদিও আরেফিন শুভর দৈহিক গড়ন নিয়ে তিনি মোটেও চিন্তিত ছিলেন না। এই অডিশনের পর আরো ৪ টি অডিশন দিয়ে তিনি শেষপর্যন্ত বঙ্গবন্ধু চরিত্রের জন্য মনোনীত হন। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু চরিত্রের মেকআপ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শুভ বলেন, প্রসথেটিকস মেকআপ এর জন্য মোটামুটি আড়াই ঘন্টা সময় লাগত।
আরেফিন শুভ কিভাবে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কিভাবে বিস্তারিত জেনেছেন এ সম্পর্কে বলেন, দেখে ,পড়ে ও শুনে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। এর অংশ হিসেবে ১ টেরাবাইটের বেশি ভিডিও ফুটেজ দেখেছেন, বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা এবং তাঁকে নিয়ে লেখা বই গুলো পড়েছেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর সেসময়কার সহযোদ্ধাদের কাছে থেকেও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জেনেছেন শুভ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও এই বায়োপিকের কলাকুশলীদের ডেকেছিলেন এবং প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা যাবত তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন। এই আলোচনার ফাকে আরেফিন শুভর একটি প্রশ্নের জবাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলেও তিনিও এভাবেই নিজেকে বর্ণনা করতেন।
চরিত্রটি থেকে শুভর অর্জন কি হবে এর উত্তরে শুভ বলেন, পুরো সিনেমাটি দেখে এক মুহূর্তের জন্য ও যদি বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা অর্থাৎ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানার শুভকে বঙ্গবন্ধু হিসেবে মনে হয় তাহলেই তিনি সফল। এছাড়াও নিজের মা এর প্রতি শুভর ভালবাসা সম্পর্কে তিনি বলেন সন্তানের জন্য মা অনেক সংগ্রাম করেন। আর এজন্য মা এর জন্য নিবেদিত প্রাণ হওয়া প্রতিটি সন্তানের দায়িত্ব।
নিজের ছেলেবেলা নিয়ে বলতে গিয়ে শুভ বলেন, মানুষের শিকড় কখনো ভুলে যেতে নেই ।ভালো মানুষের সংজ্ঞা হিসেবে বলেন যিনি নিজের অতীতকে মনে রাখেন তিনিই ভালো মানুষ। শুভ বলেন তিনি এখনো স্ট্রাগল করছেন। তবে চলার পথে তিনি অনেকের সাহায্য পেয়েছেন এবং এখনো পাচ্ছেন। সবার সাহায্য ছাড়া তিনি কখনো আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে পারতেন না।
কারিয়ারের শুরু গল্পে বলেন, অর্থের অভাবে তিনি হেটে যাতায়াত করতেন। একটি ফ্যাশন শোর রিহার্সেলের জন্য তিনি নিয়মিত মিরপুর থেকে পান্থপথ হেটে আসতেন। শুভর সম্পর্কে এমন ও শোনা যায় যে তিনি সাইকেলে যাতায়াত করতেন একসময়।
প্রথম মিডিয়ায় আসা প্রসঙ্গে বলেন, ঢাকায় আসার জন্য তার কাছে টাকা ছিল না৷ দুই বন্ধুর দেওয়া টাকা নিয়ে ঢাকায় আসেন বিটিভির একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য। সেই পুরোনো বন্ধুত্ব শুভ এখনো বজায় রেখেছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে শুভ বলেন , তিনি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বিশ্বাস করেন না। দীর্ঘমেয়াদি কোনো লক্ষ্যও নির্ধারণ করেন না। তিনি বর্তমানে বিশ্বাসী ।প্রতিদিনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেন এবং পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা করেন। তিনি অনেক মানুষকেই নিজের আদর্শ মনে করেন এবং চলার পথে অনেকের থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজে নেন। নিজের বডি ট্রান্সফরমেশন এবং ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, সব কিছুর জন্য মূল্য দিতে হয়। সফলতা একদিনে আসে না। সবকিছু শুরু থেকে শুরু করতে হয়৷ আজ থেকে ১০ বছর পর কি হবে তা নিয়ে শুভ ভাবতে চান না। তিনি শুধুই মানুষের ভালবাসা অর্জন করতে চান।
লিখেছেনঃ রোমান উদ্দীন