বিনোদন মানুষের মনের খোরাক। এই বিনোদন মানুষ বিভিন্ন মাধ্যমে পেয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো নাটক ও সিনেমা। আর এই নাটক সিনেমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো অভিনয় শিল্পীরা। আজকে এমনই একজন দর্শকপ্রিয় অভিনয়শিল্পীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো যিনি কেবল অভিনয়ের জন্য জনপ্রিয়তা লাভ করেন নি, তিনি একাধারে একজন অভিনেত্রী, নৃত্যশিল্পী, মডেল, উপস্থাপিকা ও লেখক। তিনি তার অভিনয়ের মাধ্যমে যেমন দর্শকের মন কেড়ে নিয়েছেন তেমনি তার নাচের মাধ্যমে মুগ্ধ করেছেন শত শত দর্শককে। তিনি হলেন আশনা হাবিব ভাবনা। তিনি ১৯৯৪ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ঢাকাতেই তার বেড়ে উঠা। বাংলাদেশ লিবারেল আর্টস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি তার উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন।
ভাবনার কাছে প্রথম প্রশ্ন, ভাবনা কী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করে? উওরে ভাবনা বলেন, “আমি কোন পরিচয়েই পরিচিত হতে চাইনা। আমি ভাবনা হিসেবেই থাকতে চাই”। ভাবনাকে বিভিন্ন ইস্যুতে সোশ্যাল মিডিয়াতে কথা বলতে দেখা যায়। মানুষের বিপদে বা যেকোন সমস্যায় ভাবনা নিজের মতামত দেয়। কেন? এই প্রশ্নের জবাবে ভাবনা বলেন, মানুষের জন্য মানুষের যা করা উচিত ভাবনা তাই করে। তিনি মনে করেন একজন আরেকজনের বিপদে পাশে থাকা উচিত। বিশেষ করে তিনি মেয়েদের পাশে থাকা উচিত বলে মনে করেন। কেননা, তিনি মনে করেন মেয়েরা চুপ থাকবে, মেয়েরা নমনীয় থাকব এটাই সমাজ চায়। ভাবনা চুপ করে থাকতে চায় না।
একজন শিল্পী হিসেবে ভাবনার বেড়ে ওঠা কখন এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কখন তিনি শিল্পী হয়ে উঠেন ঠিক মনে নেই কেননা ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বেড়ে উঠেছেন তিনি। তার বাবা হাবিবুল ইসলাম হাবিব একজন নির্মাতা ও প্রযোজক ছিলেন। সেই সূত্রে অনেক অভিনেতা অভিনেত্রীর সাথে তার পরিচয় ছিলো। ছোটবেলা থেকেই তিনি শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। ৩ বছর বয়স থেকে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নাচ শেখেন। তিনি জানান, নৃত্যশিল্পী হতে গিয়ে একসময় মডেলিং শুরু করেন এবং মডেলিং করতে করতে একটা সময় অভিনয়ে যাত্রা শুরু করেন। একটা সময় পরে অভিনয়ের প্রেমে পড়ে যান তিনি। সেই থেকেই অভিনয়ের সাথে নিজেকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ফেলেন।
বর্তমানে কী নিয়ে কাজ করছেন ভাবনা? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, লাল মোরগের ঝুটি সিনেমাটি শেষ করেছেন। সম্প্রতি তিনি দামপাড়া নামক একটি সিনেমার শ্যুটিং শেষ করেছেন। সিনেমাটি মুক্তিযুদ্ধের প্লট নিয়ে। চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ এই সিনেমাটির প্রযোজনা করেন। এই সিনেমাটিতে তিনি শামসুল হকের স্ত্রী মাহমুদা হকের চরিত্রে অভিনয় করেন। মাহমুদা হক বাংলাদেশের প্রথম মহিলা এম্বাসেডর ছিলেন।
ভাবনা তো অনেক চরিত্রে অভিনয় করেছে। এখন পর্যন্ত কোন চরিত্র সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে? উত্তরে তিনি বলেন, সবগুলো চরিত্রই তার কাছে প্রিয়। তবে অনিমেষ আইচের পরিচালিত তার প্রথম সিনেমা ভয়ংকর সুন্দরের চরিত্রটি তার সবচেয়ে পছন্দের। তিনি জানান, লাল মোরগের ঝুটি সিনেমাটিতে পদ্ম চরিত্রটি মুক্তিযোদ্ধার চরিত্র। পদ্ম আদিবাসী একজন মেয়ে। এই চরিত্রটি করার সময় ভাবনার অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। আদিবাসী ভাষায় কথা বলা, তার মতো চলাফেরা করা এসব অনেক কষ্ট করে শিখতে হয়েছে। এমনকি টানা তিনমাস নিজের বাসায় একটা মোরগের সাথে থাকতে হয়েছে তাকে। চরিত্রটি তার কাছে অনেক আদরের। এখন তো ভাবনা একজন বড় পর্দার অভিনেত্রী। এখন যদি ভাবনাকে নাটক করতে দেওয়া হয়, নাটক করতে গেলে ভাবনা কী করবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কাজের ক্ষেত্রে তিনি কোন কম্প্রোমাইজ করেন না। তিনি সবসময় সেরা কাজটিই করবেন।
ভাবনার কাছে জানতে চেয়েছিলাম তিনি ডিরেক্টরের ডিরেকশনে কাজ করেন নাকি নিজের মতো কাজ করেন? এই প্রশ্নের উওরে তিনি বলেন, তিনি সবসময় ডিরেক্টরের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেন। তাকে কোন এজেন্সি বা প্রডিউসাররা নিতে চাননা। কেননা, তিনি ইন্ড্রাস্টিতে কোন দরকারি বন্ধুও বানান না আবার কাউকে মেইন্টেইন করেও চলেন না বলে মন্তব্য করেন। তাই সাধারনত তাকে কেউ কাস্ট করতে চায়না। খুবই বলিষ্ঠ পরিচালকরাই তাকে পছন্দ করেন। তাই তিনিও সবসময় পরচালকদের নির্দেশনা অনুযায়ীই কাজ করেন। তবে তার কাছে যদি মনে হয় স্ক্রিপ্টটা অন্যভাবে করা যায় তবে তিনি ডিরেক্টর ও লেখক দুজনের সাথেই আলোচনা করেন।
ভাবনার কাছে প্রশ্ন ছিলো তার প্রিয় সহ-শিল্পী কে? উত্তরে ভাবনা বলেন, অনেকেই তার প্রিয় যেমন রাইসুল ইসলাম আসাদের সাথে কাজ করতে ভাবনার খুব ভালো লাগে। এছাড়াও মামুনুর রশিদ, শিল্পী সরকার অপু, নাজনীন, তমালিকা কর্মকার উনাদের সাথে কাজ করতে তিনি খুবই স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করেন। এছাড়াও তিনি সজল, মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরি ও ফেরদৌস এর কথা বলেন। তার সম্প্রতী করার কাজটির সহ-শিল্পী ছিলেন ফেরদৌস। এখনো পর্যন্ত ভাবনার কাছে সহ-শিল্পী হিসেবে ফেরদৌসকে সেরা বলে মনে করেন তিনি।
প্রতিটা মানুষের কোন না কোন ব্যক্তিগত মানুষ থাকে যার কাছে নিজের সকল কথা শেয়ার করে একটু স্বস্তি পাওয়া যায়। ভাবনার জীবনে এমন ব্যক্তিগত মানুষ কে? এই প্রশ্নের উওরে ভাবনা জানান, তিনি তার ছোট বোনের সাথে সব শেয়ার করেন। এছাড়াও তার আরও একজন ব্যক্তিগত মানুষ আছেন এবং সেই মানুষটি তার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী। তিনি জীবনের সুখ দুঃখ সবকিছু তার বান্ধবীর কাছে বলেন। সম্পর্কের কথা শুনতে শুনতে জানতে চেয়েছিলাম এই সম্পর্ক নিয়ে কখনো বিরম্বনায় পড়তে হয়েছে নাকি ভাবনাকে? উত্তরে ভাবনা জানান, কোন কিছু আড়াল করতে চাইলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তাইতো তিনি তার সম্পর্কের ব্যাপারে কিছু আড়াল করতে চাননা। তবে সেলিব্রিটি হবার কারনে তিনি এবং তার সঙ্গী অনিমেশ আইচকে অনেক জায়গাতেই দর্শকদের সাথে একটু তিক্ত অভিজ্ঞতার মতো পরিবেশের সম্মুখীন হতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
ভাবনা অভিনয়ের পাশাপাশি লেখালেখিও করছেন। ভাবনার লেখালেখির বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন, ভাবনা এখনো পর্যন্ত ৪ টা উপন্যাস লিখেছেন। গত বছর ছবি আঁকায় মনযোগী ছিলেন বলে কোন বই লিখতে পারেন নি বলে জানান তিনি। তবে আগামী বছর একসাথে দুটো বই লিখার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন তিনি। ভাবনার পছন্দের লেখক কে? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেন প্রিয় কবি, ঔপন্যাসিক অনেকেই আছেন। তবে শাহাদুজ্জামান তার খুব পছন্দের একজন।
ভাবনার প্রিয় সিনেমা কোনটি? এর জবাবে ভাবনা জানান, রোমান হলিডে তার খুবই পছন্দের একটি সিনেমা। আর এন্ড্রো হেনরি তার পছন্দের একজন নায়িকা। মৃত্যুর পর ভাবনা কিভাবে স্মরণীয় হতে চান এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ভাবনা বলেন, তিনি লেখালেখির মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করেন। তিনি যা অনুভব করেন, তিনি যা ভাবেন সবকিছুই তার লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করেন। ভাবনার উপন্যাসের নামগুলো যেমন- গুলনাহার, তারা, গোলাপী জমিন দেখলেই বুঝা যায় উপন্যাসের সবগুলো চরিত্র নারী চরিত্র। ভাবনা মনে করেন পুরুষরা পুরুষ হবার কারনেই অনেক ভাগ্যবান। পুরুষরা সবকিছু খুব সহজে পায় কিন্তু মেয়েদের কষ্ট করে, সংগ্রাম করে অর্জন করতে হয়। মেয়েরা অধিকার ছিনিয়ে আনে। তাই ভাবনা চায় তার বইয়ের মাধ্যমে সে স্মরণীয় হয়ে থাকুক। তার বই পড়ে তার ভাবনাগুলোকে মানুষ জানুক এইটাই তার চাওয়া।