মানুষের জন্য ভালো কিছু করার স্বপ্ন হয়তো সবাই দেখে, তবে সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবার পথ একরকম হয়না। কেউ সাহিত্য রচনা করে, কেউবা গান করে কিংবা কেউ সমাজসেবা করে। আবার, কেউ স্বপ্ন দেখে আরও বড় পরিসরে। যারা খুব বড় পরিসরে দেশ ও সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন, তারাই হয়তো রাজনীতিকে বেছে নেন স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার হিসেবে। আজ […]

রাজনীতির রহস্যপুরুষ : আব্দুল আওয়াল মিন্টু

মানুষের জন্য ভালো কিছু করার স্বপ্ন হয়তো সবাই দেখে, তবে সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবার পথ একরকম হয়না। কেউ সাহিত্য রচনা করে, কেউবা গান করে কিংবা কেউ সমাজসেবা করে। আবার, কেউ স্বপ্ন দেখে আরও বড় পরিসরে। যারা খুব বড় পরিসরে দেশ ও সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন, তারাই হয়তো রাজনীতিকে বেছে নেন স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার হিসেবে। আজ ঠিক এমন একজন মানুষের কথা বলবো যিনি দেশ ও দশের কল্যানের কথা চিন্তা করে নিজেকে যুক্ত করেছেন রাজনীতিতে। অবশ্য তিনি শুধু রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, নিজের পড়াশোনার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন শিল্প ও কৃষির উন্নয়নে। তিনি হলেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ আব্দুল আওয়াল মিন্টু।

আব্দুল আওয়াল মিন্টু ১৯৪৯ সালে ফেনী জেলায় জন্মগ্রহন করেন। তার পিতাও ছিলেন একজন সমাজ সেবক। তাই হয়তো জন্মগতভাবেই পেয়েছেন মানুষের সেবা করার মতো মহান গুণটি। ফেনীতেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন। ১৯৫৮ সালে চট্টগ্রামের মার্কেন্টাইল মেরিন একাডেমি থেকে নৌ বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা ডিগ্রী নেন তিনি। নিউইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে মেরিন ট্রান্সপোর্টেশন বিজ্ঞানে বিএসসি ও এমএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে এগ্রিকালচার অব ইকোনোমিস এ মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে এল.এল.এম এ অধ্যয়ন করছেন ৭৪ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ।

আব্দুল আওয়াল মিন্টু প্রথমেই রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন না। কিছুদিন মেরিনে চাকরি করে চাকরির পাঠ চুকিয়ে দেশে ফিরে ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোনিবেশ করেন তিনি। তারপর ধীরে ধীরে রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বর্তমানে ব্যবসা ও রাজনীতির পাশাপাশি দেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে কাজ করছেন তিনি। কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে কিভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় এবং কিভাবে কৃষিখাতকে উন্নত করা যায়, এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে।
আব্দুল আওয়াল মিন্টু ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড ও জেনারেল লাইফ ইনস্যুরেন্সের পরিচালক। তিনি এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সহ-সভাপতি।

আব্দুল আওয়াল মিন্টু রাজনীতিতে এক রহস্যময় স্থানে অবস্থান করে আছেন। তার রাজনীতি চর্চার শুরুতে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর একজন নিষ্ঠাবান সমর্থক ও নেতা ছিলেন। তবে বিভিন্ন কারনে দলের সাথে ভিন্নমত পোষন করতেন তিনি । এ নিয়ে দলের মাঝে তাকে নিয়ে গুঞ্জনও ছিলো। একটা সময় পর দেখা যায় তিনি দল পরিবর্তন করেন এবং বিএনপিতে যোগদান করেন। তবে বিএনপির সদস্যরাও যে তাকে সাদরে গ্রহণ করেন বিষয়টি এমন নয়। বিএনপির সদস্যরা তাকে আওয়ামীলীগের চর ভাবতেন। এই বি্ষয়ে তিনি বলেন, দলের বিভিন্ন বিষয় তার পছন্দ হতো না, তিনি চাইতেন জনগণের কল্যান। এখানে তিনি আপোষহীন তাই দলের মতের বাইরে গিয়ে তিনি কথা বলতেন। এরজন্য কে কী ভাবলো তাতে তার খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না।

আব্দুল আওয়াল মিন্টুর কাছে প্রশ্ন ছিলো, এইযে ইদানীং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিভিন্ন কার্যকলাপে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের বর্তমান সহিংস রাজনীতির প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে কতটুকু সহায়ক বলে মনে করেন তিনি? উত্তরে তিনি জানান, “আমাদের মূল সমস্যা আসলে রাজনৈতিক। আমরা মুখে নিজেদের গণতান্ত্রিক মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়। বাংলাদেশে বর্তমানে একদলীয় শাসন ব্যাবস্থা বিরাজমান। তবে তিনি অন্যান্য একদলীয় শাসন ব্যবস্থার সাথে তুলনা করে বলেন, বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশ রয়েছে যেখানে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বিদ্যমান। কিন্তু সেসব দেশে অন্যান্য বিরোধীদলের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাদের ভাবনাকে সম্মান জানানো হয় কিন্তু বাংলাদেশে এসব হয় না। তিনি আরও বলেন, আগের বছর নির্বাচন হয়নি। একটি ভালো নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ কিন্তু বাংলাদেশে সেই ধরণের নির্বাচন হয়না। জনগণের কোন ধরণের অধিকার নেই। মানুষ নিজের স্বাধীনমতো মত প্রকাশ ক্রতে পারে না। আর এসব বিষয় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দৃশ্যমান, তাই আমেরিকান সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। তিনি আরও বলেন, তারা যেই আন্দোলন করেন নিষেধাজ্ঞার সাথে তাঁদের আন্দোলনের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তবে তিনি এটা স্বীকার করেন যে, এই নিষেধাজ্ঞা তাদের আন্দোলনের ক্ষেত্রে একটা সুবিধা হতে পারে, তবে এর উপর ভিত্তি করে তারা কোন আন্দোলন করছে না।

রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিরতা এসব হুট করে হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের আগেও ছিলো এখনও আছে। শাসন ব্যবস্থার এই সংকট উত্তরণের জন্য বিএনপির ভাবনা কী এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, একটি দেশের উন্নয়নের জন্য সবার আগে যা প্রয়োজন তা হলো আইনের শাসন। একমাত্র আইনের শাসনের মধ্য দিয়েই গণতান্ত্রিক উপায়ে দেশ পরিচালনা সম্ভব। বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক শুন্যতা, অস্থিরতা ও সহিংসতা বিরাজ করছে। বাংলাদেশকে এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। আর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা জরুরী।

বাংলাদেশে বর্তমানে যে নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে এইসব নির্বাচন থেকে নতুন প্রজন্ম কী শিক্ষা লাভ করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ গত ৫০ বছরে যা অর্জন করেছিলো তা এখন ভঙ্গুর করে ফেলেছে, নিজের দলের মাঝে দলাদলির সৃষ্টি করছে।
বর্তমানে নির্বাচনগুলোতে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে আসলেই তারা সফল হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আর সম্ভন নয়। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের ফলে সরকার সকল প্রতিষ্ঠানকে ভঙ্গুর ও দুর্বল করে ফেলেছে। এদেশে সুশাসন নেই, তাই চাইলেও এই দেশে আর সু্ষ্ঠূ নির্বাচন সম্ভব না বলে জানান তিনি।

আব্দুল আওয়াল মিন্টুর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, বিএনপি যদি আবার ক্ষমতায় আসে তবে তাদের দলীয় এজেন্ডা কী হতে পারে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখনো তারা কিছু ভাবেন নি। যখন নির্বাচন হবে আর তারা অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকবেন তখনই এজেন্ডা নিয়ে ভাববেন। তিনি আরও বলেন, দেশকে পূনরোদ্ধার করা ও দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা বিএনপির দায়িত্ব এখন। তিনি আরও মনে করেন, বর্তমানে বিএনপির সমর্থক অনেক। আওয়ামীলীগের অন্যায় ও অনাচারে দেশবাসী এখন মন থেকে চায় বিএনপি আসুক। এখন শুধু উপযুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যায় বাংলাদেশ দূর্নীতিতে শীর্ষে অবস্থান করছে। অন্যান্য দেশও পূর্বে এমন ছিল; যেমন দূর্নীতিগ্রস্থ দেশ রুয়ান্ডা এখন এসব কাটিয়ে উঠে উন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। বর্তমানে রুয়ান্ডাকে আফ্রিকার সিংগাপুর বলা হয়। বাংলাদেশও এভাবে ঘুরে দাড়াতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আবারও সুশাসনের কথা বলেন। তিনি মনে করেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত কোনধরণের ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার জিডিপির যেই বিবরণ দেন তা মোটেও সঠিক নয় বরং অন্য সরকারের সময় জিডিপির প্রবৃদ্ধি আরও বেশি ছিলো বলে মনে করেন তিনি।

বিএনপি নতুন নেতৃত্ব নিয়ে কিছু ভাবছে কি না এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি প্রতিনিয়ত দলকে সুসংগঠিত করছে। অনেক তরুন রাজনীতিবিদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, বিএনপির মাঝে তরুন প্রজন্মকে নেতৃত্বে এনে দেশের সামাজিক, প্রশাসনিক ও ব্যবসার পূর্ণগঠন করার প্রবণতা রয়েছে।

আব্দুল আওয়াল মিন্টু চান মৃত্যুর পর মানুষ তার কর্মের মাধ্যমে তাকে মনে রাখুক। একজন ভালো মানুষ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চান তিনি।