সাপ্লাইচেইন এর সমস্যায় জর্জরিত সারাবিশ্বই; উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তা আরও প্রকট। এ সমস্যা সমাধানে প্রায় ৪০ বছর ধরে কাজ করে চলেছেন জনাব হুমায়ুন রশিদ। এনার্জিপ্যাক এর পরিচালক হুমায়ুন রশিদ জড়িত রয়েছেন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এফবিসিসিআই এ এবং ফ্রান্স চেম্বার অব কমার্সের পরামর্শদাতা হিসেবে। বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাঁকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে কমার্শিয়ালি ইমপরটেন্ট পারসন হিসেবে।
নিজের প্রতিষ্ঠান এনার্জি প্যাক সম্পর্কে এর পরিচালক হুমায়ুন রশিদ বলেন তাদের মূল মন্ত্র হল,’ pack the energy for the future generation.’ একটি চৈনিক জনশ্রুতি আছে যে প্রতিটি ব্যবসা নির্ভর করে সংখ্যাগত মানের উপর। এনার্জি প্যাকের জন্য এই মান হল ৬ যা নির্দেশ করে পদার্থ ও খনিজ সংক্রান্ত ব্যবসা। এনার্জি প্যাক এর মূল কাজ ও এটি নিয়েই। তিনি ও এনামুল হক চৌধুরি যিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিলে প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেন৷ প্রতিষ্ঠানটি এখন শক্তির উৎপাদন, পরিবহন ও পরিচালনা, যন্ত্রপাতি ও সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করে। তবে তাদের গার্মেন্টস সেক্টরেও বিনিয়োগ আছে৷ তারা এখন বিশ্বে সব থেকে বড় স্যুট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান । তাদের প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১০ হাজার কর্মী নিয়োজিত যার মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই নারী।
পুরো বিশ্বেই এখন জ্বালানির সংকট চলমান। যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপেও জ্বালানির মূল্য বাড়ছে এবং সাথে সাথে প্রাপ্যতার সংকটেও পরছে দেশগুলো। বৈশ্বিক যে সরবরাহের ধারা তার কারণে আমাদের বাংলাদেশ ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে তবে আমাদেরকে এখনো সংকটের মুখোমুখি হতে হয় নি৷ চলমান ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ ও অনেক বড় প্রভাব ফেলছে এনার্জি সেক্টরে। এনার্জি প্যাক বর্তমানে ৩ টি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করছে। যার ভেতর দুইটি ফার্নেস ওয়েল পরিচালিত এবং অপরটি প্রাকৃতিক গ্যাস দ্বারা পরিচালিত। ঠাকুরগাঁও ও চট্টগ্রামে অবস্থিত দুটি ফার্নেস ওয়েল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যথাক্রমে ১১৮ মেগা ওয়াট ও ১০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে এবং হবিগঞ্জে অবস্থিত একমাত্র প্রাকৃতিক গ্যাস চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে ১১.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এই বিদ্যুৎ তারা জাতীয় গ্রিডে বিক্রি করছে৷ তবে সামগ্রিকভাবে উৎপাদন কমার বিষয় নিয়ে হুমায়ুন রশিদ বলেন, জ্বালানির মূল্য বাড়ায় সরকারকে অনেক ডিজেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করতে হচ্ছে যার প্রভাব পড়ছে উৎপাদনে।
জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বলেন, তারা এ নিয়ে সেমিনার করেছেন এ থেকে উত্তরণের উপায় কি কি হতে পারে তা নিয়ে এবং পাশাপাশি সরকারকে পরামর্শ দিতে। তারা প্রথমত দক্ষতা বা কার্যক্ষমতা বাড়ানোর ব্যাপারে বলেছেন। এর সাথে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্য ও দিয়েছেন। এছাড়া জ্বালানি নিরাপত্তাকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলেছেন৷ শক্তির যোগানের পাশাপাশি ভর্তুকি থেকেও বেরিয়ে আসতে সরকারকে তারা পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশের পার ক্যাপিটা কার্বন নির্গমন হার প্রতিবেশি প্রায় সব দেশের থেকেই কম। পরিবেশ দূষণের দিক দিয়ে ভারত ও চীনের মত দেশগুলো অনেক এগিয়ে আছে। তবে বৈশ্বিক জ্বালানি ঘাটতি দেশগুলোকে আরো এদিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশে ও কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে ঝুঁকে পরছে৷ এছাড়াও এ বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। আর দূষণ কমাতে এখন অনেক আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। তবে সরকারের বিভিন্নখাতে সামঞ্জস্য না থাকায় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
এনার্জি প্যাক নিয়ে হুমায়ুন রশিদ আরো বলেন, এটিই বাংলাদেশের প্রথম কোম্পানি যারা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী লাইট ও ফ্যান বাজারে এনেছে৷ এছাড়াও তার সৌরশক্তি নিয়ে কাজ করে৷নিজেদের অফিসেও এই ধারা তারা অব্যাহত রেখেছে। তারা এজন্য যে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে তা জ্বালানি সাশ্রয়ে বিশেষভাবে তৈরি।
এলপিজি নিয়ে তিনি বলেন বাংলাদেশেও এলপিজির ব্যবহার বাড়ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে, বিনিয়োগ আসছে সাথে সাথে এর সরবরাহ ও বাড়ছে। কিন্তু এ খাতে এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। যার মধ্যে অবকাঠামোগত এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আছে। তবে এর উৎপাদনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি ডিটিও ৪ স্ট্যান্ডার্ড মেনে চালানো হয়।
ব্যবসার পাশাপাশি এনার্জি প্যাক সামাজিক দায়িত্বের দিকটিও এড়িয়ে যায় না। দক্ষিণাঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম দা কোপে তারা মিঠা পানির ব্যবস্থা করছেন ৪ বছর ধরে৷ মাটির প্রায় ১২০০ ফুট থেকে তারা এ পানি উত্তোলন করেন। এছাড়াও প্রতি শনিবার তারা নদীর প্লাস্টিক সংগ্রহ করেন। এ কাজের জন্য তারা পুরষ্কার ও পেয়েছেন৷এছাড়া গাজীপরে তারা একটি স্কুলে তাদের ব্যবহার করা ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ সরবরাহ করেন। শীতকালে শীতবস্ত্র ও বিতরণ করেন তারা। এছাড়া প্রতিবছর ৩০০ জন ইলেকট্রিশিয়ানকে তারা নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।
হুমায়ুন রশিদের ইচ্ছা তিনি আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে অবসর নিবেন এবং একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করবেন। যেখানে মাধ্যমিকে যারা পাশ করতে পারবে না তাদের ভর্তি করাবেন এবং বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলবেন। কাজের পাশাপাশি সংগীতের ভক্ত তিনি সাথে সাথে কবিতাও পড়েন৷ তার পূর্বপুরুষের বাড়ি ছিল শান্তি নিকেতনের কাছে। তিনি মনে করেন নিজের দায়িত্ব সবাই ঠিকভাবে পালন করলে তবেই তা পুরো বিশ্বের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।