মৃদুভাষী, নিভৃতচারী এক সাংবাদিক চিন্ময় মুৎসুদ্দি। আমার সাংবাদিকতা বিষয়ক অন্যতম শিক্ষক। ১৯৭২ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রা’য় সাংবাদিকতা শুরু করেন এবং ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত যুক্ত ছিলেন সাপ্তাহিক বিচিত্রা এবং পাক্ষিক আনন্দ বিচিত্রা’র সঙ্গে। বাংলাদেশে “ফটো সুন্দরী” বিষয়টির অন্যতম কারিগর চিন্ময় মুৎসুদ্দি। চিন্ময় মুৎসুদ্দির সাংবাদিক পরিচয় ছাড়াও তিনি একজন লেখক। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সামাজিক […]

চিন্ময় মুৎসুদ্দি : সাংবাদিকতা জগতের এক দিকপাল 

মৃদুভাষী, নিভৃতচারী এক সাংবাদিক চিন্ময় মুৎসুদ্দি। আমার সাংবাদিকতা বিষয়ক অন্যতম শিক্ষক। ১৯৭২ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রা’য় সাংবাদিকতা শুরু করেন এবং ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত যুক্ত ছিলেন সাপ্তাহিক বিচিত্রা এবং পাক্ষিক আনন্দ বিচিত্রা’র সঙ্গে। বাংলাদেশে “ফটো সুন্দরী” বিষয়টির অন্যতম কারিগর চিন্ময় মুৎসুদ্দি। চিন্ময় মুৎসুদ্দির সাংবাদিক পরিচয় ছাড়াও তিনি একজন লেখক। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সামাজিক অঙ্গিকার, অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, সংস্কৃতি সাংবাদিকতার স্বরূপ, সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন প্রকাশনার কৌশল, সমকালীন গণমাধ্যম: স্বাধীনতা দ্বায়িত্ব কর্পোরেট পুঁজি ইত্যাদি। এর পাশাপাশি অনুন্নত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে তিনি কাজ করে চলেছেন নিরলসভাবে।

চিন্ময় মুৎসুদ্দির সাংবাদিকতায় আসা এক ধরনের রোমান্টিসিজম থেকেএকটা সময় তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত হন এবং পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোয় নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেনসে অনুষ্ঠান সম্পর্কে ঢাকা চট্টগ্রামের পত্রিকাগুলোয় লেখা ছাপা হতঅনেক সময় লেখকের নাম ছাপা হতএই প্রেরণা থেকেই চট্টগ্রামে আজাদী পত্রিকায় অনুষ্ঠানগুলো নিয়ে লেখা শুরু করেনএভাবে একসময় খেলার রিপোর্টিং শুরু করেনসেখানকার সম্পাদকের সাথে কিছুটা মনোমালিন্য হওয়ার পর চিন্তা করেন ঢাকার পত্রিকাগুলোয় লেখা শুরু করার এরপর তার লেখা গুলো একইভাবে সংবাদ, আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকাগুলোয় ছাপা হতে থেকেচট্টগ্রামে লেখার জন্য কোনো পারিশ্রমিক না পেলেও দৈনিক পাকিস্তান থেকে পারিশ্রমিক পেতে শুরু করেনসাপ্তাহিক হলি ডে তে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন নিয়ে একটি লেখা পাঠান এবং তা বড় করে তার নাম সহ ছাপা হয় থেকে তিনি নতুন উদ্যম অনুপ্রেরণা পান

কলেজের শিক্ষকের সাথে কিছুটা সমস্যা হওয়ায় চট্টগ্রাম ছেড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে আসেন এবং সেখানে কলেজ শেষ করেনএরপর চলে আসেন ঢাকায়ঢাকায় আসার পর বন্ধুদের সাথে যাতায়াত শুরু করেন দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকার অফিসেএকসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হনএরপর একসময় কাজ শুরু করেন চিত্রিতা পত্রিকায় ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর গণ বাংলা, জনপদ বিচিত্রার সাথে যুক্ত হন১৯৭৩ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৯৭ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি একটানা বিচিত্রার সাথে কাজ করেনস্বাধীনতার আগে বিচিত্রা ছিল মাসিক পত্রিকা যা রম্য চরিত্রগুলো নিয়ে কাজ করতকিন্তু স্বাধীনতার পরে প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন আসে ফজল শাহাবুদ্দীন আবারো সম্পাদকের দায়িত্ব নেনবিচিত্রার সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য শাহাদাৎ চৌধুরীকে প্রস্তাব দেন, তিনিও রাজি হনএবারো শুরুটা হয় রম্য চরিত্র দিয়েইতবে বিচিত্রার প্রধান দিক হল এটি বাংলা ভাষায় প্রথম নিউজ ম্যাগাজিন যাকে এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাগাজিন জনপ্রিয়তা বা মানে ছাড়িয়ে যেতে পারে নিবিচিত্রা দুটো বড় অবদান রাখে যার প্রথমটি হল এই ম্যাগাজিনের মাধ্যমে বাংলার তাঁত শিল্প নতুন জীবন পায়এছাড়াও ফটো সুন্দরী প্রতিযোগিতা শুরু করে এই বিচিত্রা ম্যাগাজিনযার মূল ভাবনার অনেকটা অংশ জুড়েই ছিলেন চিন্ময় মুৎসুদ্দিবিচিত্রা ম্যাগাজিনই প্রথম বৃহৎ আকারে ইদ সংখ্যা করার  প্রবণতাটা শুরু করে ১৯৭৫ সালেকভারে ছিল শম্পা রেজা, রেহনুমা আহমেদ, শামীমা পারভীন দিতা শশফিউল্লাহদের মত তারকাদের ছবিম্যাগাজিনের ভেতরে ইদ বাজার নিয়ে লিখতেন চিন্ময় মুৎসুদ্দিবাজার পরিস্থিতি দেখে  শাহাদাৎ চৌধুরী স্থানীয় পণ্য গুলো এগিয়ে নেবার চিন্তা শুরু করেনতা থেকেই শুরু হয় দেশিয় কাপড়ের মাধ্যমে উঠে আসার প্রতিযোগিতা। 

সাংবাদিকতা জীবনে অনেকের কাছে থেকে শিখেছেন এবং আত্মবিশ্বাস পেয়েছেন চিন্ময় মুৎসুদ্দিফজল শাহাবুদ্দীন তাকে বিভিন্ন সময় আত্নবিশ্বাস যুগিয়েছেন, আহমেদ হুমায়ুন বিভিন্ন সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেনতার বিভাগে লেখার সুযোগ করে দিয়েছেনশাহাদাৎ চৌধুরী নানা সময়ে প্রশংসার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস সাহস যুগিয়েছেনএছাড়াও হেদায়েত হোসেন মোর্শেদ ফয়েজ আহমেদের গুণমুগ্ধ তিনিফয়েজ আহমেদ ছিলেন একজন রঙিন চরিত্রসাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন সাহিত্যিক এছাড়াও নীতির ব্যাপারে তিনি ছিলেন অটল

বর্তমান সাংবাদিকতা প্রসঙ্গে চিন্ময় মুৎসুদ্দি বলেন, অনেক প্রকার প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হয়েছেঅবয়বগত সুবিধা বেড়েছেছাপানোর দিক থেকেও অনেক পরিবর্তন এসেছেএটাকেই তিনি প্রযুক্তিগত বা অবয়বগত পরিবর্তন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেনতবে এর পাশাপাশি লেখার বিষয়বস্তু বা কনটেন্টগত তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো অধঃপতন লক্ষ্য করা যাচ্ছেএর কারণ হিসেবে তিনি দেখেন, মালিকরা যেভাবে মিডিয়াগুলো দখল করে নিচ্ছে এবং পেশাগত সাংবাদিকদের অবস্থান আর সেভাবে নেই এখনমালিকরা সবসময় মুনাফার খোঁজে থাকছেনএর পাশাপাশি গ্রুপ  ব্যবসা থেকে আশা মালিকরা মিডিয়াকে অন্য ব্যবসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেযার ফলে কনটেন্ট এর গুণগত উন্নয়ন এর বদলে অধঃপতন হচ্ছে। 

পুনর্জন্ম হলে তিনি মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চানতিনি স্মরণ করেন কাঙাল হরিনাথকেযিনি ঊনিশ শতক বিংশ শতকের শুরুর দিকে কুষ্টিয়াতে পত্রিকা বের করতেনযেখানে তিনি লিখতেন প্রজাদের উপর ইংরেজদের অত্যাচার নিয়েবিভিন্ন সময় অত্যাচারীদের পরিচয় প্রকাশ করতেননিজের জমি বিক্রি করে তিনি এই পত্রিকা চালাতেন৷ চলার পথে তিনি এভাবেই অনেকের কাছে থেকে অনুপ্রেরণা পানভাসানীর সাথে তিনি একসাথে উত্তরবঙ্গের গ্রামগুলোয় ঘুরেছেন এবং অনুপ্রেরণা খুঁজেছেন৷ বাবা মা এর কাছে থেকেও পেয়েছেন অনুপ্রেরণাএখন স্ত্রী কন্যার কাছে থেকেও অনুপ্রেরণা পান তিনিএখন পুরোদমে সাংবাদিকতা না করলেও তিনি পরামর্শ দেন এবং কিছু লেখালেখি করেন।