ডা. মুহিউদ্দীন আহমেদ মিড-আটলান্টিক কায়জার পার্মানেন্ট মেডিকেল গ্রুপের ফিজিশিয়ান এবং অ্যাসিস্টেন্ট সার্ভিস চীফ। তিনি অ্যাশবার্ন, ভার্জিনিয়ার একজন অভ্যন্তরীণ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। তিনি ১৯৮০ সালে মেডিকেল স্কুলে যোগদান করেন এবং স্নাতক সম্পন্ন করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৯১ সালে প্রখ্যাত সেন্ট হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। চিকিৎসার বিভিন্ন বিষয়ে, বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ মেডিসিনে তার ৪৩ বছরেরও […]

ডা. মুহিউদ্দীন আহমেদ: মানবসেবায় নিয়োজিত একজন নিবেদিত প্রাণ

ডা. মুহিউদ্দীন আহমেদ মিড-আটলান্টিক কায়জার পার্মানেন্ট মেডিকেল গ্রুপের ফিজিশিয়ান এবং অ্যাসিস্টেন্ট সার্ভিস চীফ। তিনি অ্যাশবার্ন, ভার্জিনিয়ার একজন অভ্যন্তরীণ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। তিনি ১৯৮০ সালে মেডিকেল স্কুলে যোগদান করেন এবং স্নাতক সম্পন্ন করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৯১ সালে প্রখ্যাত সেন্ট হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। চিকিৎসার বিভিন্ন বিষয়ে, বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ মেডিসিনে তার ৪৩ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। ডাঃ মুহিউদ্দীন আহমেদ মিড-আটলান্টিক স্টেটস ইনকর্পোরেটেডের কায়জার ফাউন্ডেশন হেলথ প্ল্যানসহ মেডিকেল গ্রুপের অন্যান্য ডাক্তার এবং চিকিত্সকদের সাথে নানা কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন। করোনা চলাকালীন সময়ের সাক্ষাৎকারে আমাদেরকে সময় দিয়েছিলেন ডা. মুহিউদ্দীন আহমেদ।

ওমিক্রন ও করোনার অন্যান্য রূপভেদ নিয়ে তিনি জানান, প্রাকৃতিক নিয়মেই প্রত্যেক প্রজাতি টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন আনুসারে পরিবর্তিত হয়। যখনই কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির সম্মূখীন হয় সেই প্রাণী নিজেকে পরিবর্তন করে নতুন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এখানেও ঠিক তাই হয়েছে। 

করোনার ভয়াবহতা নিয়ে তিনি বলেন, তার নিজের কর্মক্ষেত্রে মহামারীর শুরুতে দৈনিক দেড়শ থেকে দু’শ বা সর্বোচ্চ তিনশ রোগী আক্রান্ত হিসেবে সনাক্ত হত সেখানে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল দুই থেকে তিন হাজারে। তিনি জানিয়েছিলেন, তখন দুটি বা তিনটি ভ্যাক্সিন নেয়া অনেকেই দ্বিতীয়বারের মতো সংক্রমিত হয়েছিল কিন্তু যারা ভ্যাক্সিন নিয়েছিল এমন রোগীদেরকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বললেই চলে। এই সংক্রমণের পেছনে আরেকটি কারণ হিসেবে তিনি দায়ী করেছিলেন মানুষের অসচেতনতাকে।

একজন চিকিৎসক হিসেবে তিনি মনে করেন, সুযোগ থাকলে সবারই বুস্টারসহ প্রয়োজনীয় প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ করা উচিৎ। পূর্ববর্তী পরিস্থিতি বিবেচনায় দেখা যায়, প্রতিষেধক গ্রহনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা শূন্য না হলেও আক্রান্তের মাত্রা অনেকখানি কমে যায়। তিনি বলেন, প্রতিষেধক গ্রহণের পরও যদি কেউ আক্রান্ত হয় তবে সে কিছুটা ভুগলেও তার প্রাণনাশের সম্ভাবনা থাকে না। এক্ষেত্রে বুস্টার নেয়ার সময়সীমার মধ্যে যদি কেউ আক্রান্ত হন তবে অন্তত দশদিন অপেক্ষা করে তবেই বুস্টার ডোজ নেয়া উচিৎ। 

কোভিড-১৯ এর বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট সংক্রান্ত বিভ্রান্তি নিয়ে তিনি বেশ পরিষ্কার ধারণা উপস্থাপন করেন। কোভিড-১৯ সনাক্তকরণে যে পিসিআর পরীক্ষাটি করা হয় সেখানে একইসাথে কোভিডের সকল ভ্যারিয়েন্টের জন্য পরীক্ষা করা হয় বলে তিনি জানান। এবং কোনো একটি ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তও হলেই রোগীকে কোভিড আক্রান্ত হিসেবে সনাক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত তা জানা অপ্রয়োজনীয় এবং অর্থহীন। কারণ আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসাপদ্ধতি কিংবা বিধিনিষেধ ভ্যারিয়েন্ট অনুসারে পরিবর্তিত হয় না। এছাড়া নির্দিষ্ট কিছু ল্যাবই শুধুমাত্র নির্দিষ্ট করে ভ্যারিয়েন্ট নির্ণয়ের কাজ করে। কাজেই রোগী কোন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত তা বলা খুবই শক্ত।

একজন চিকিৎসকের হাতে যখন রোগীর বাঁচা-মরা খুব জটিলভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে তখন অনেকসময়ই কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসে না। এমন অপ্রিয় মূহুর্তে রোগীর স্বজনদের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে বলার মতো কঠিন কাজও করতে হয়। তিনি বলেন, অনেক সময়ই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কোনোভাবে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখার চেয়ে একটি সম্মানজনক মৃত্যুই অধিকতর মানবিক সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের সাথে কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং অন্যান্য কর্তা-ব্যক্তিরা কথা বলে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে হয়। সেদিক দিয়ে তার কর্মক্ষেত্রে আমেরিকাতে খুব কম সমস্যার সম্মূখীন হতে হয় বলে তিনি জানান। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর স্বজনরা সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে একটি বাস্তবিক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। বিজ্ঞানের এই আধুনিক যুগেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের কিছু বেদনাদায়ক সীমা অবশ্যই আছে। তাই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ডা. মুহিউদ্দীন সবাইকে ধৈর্য্যধারণ করার পরামর্শ দেন। ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে যারা মহামারীতে মারা যায় কিংবা আক্রান্ত এলাকায় ধৈর্য ধরে অবস্থান করে, তারা শহীদের মর্যাদা পায়। তাই এধরণের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতে তিনি নিজেও ধৈর্য্যের সাথে কাজ করেন এবং অন্যদেরও ধৈর্য্যধারণ করতে বলেন।

তিনি একজন চিকিৎসক হিসেবে সবসময়ই নিজের আত্মাকে, নিজের বিবেককে পরিশুদ্ধ রাখতে চান। সবসময় চিন্তা করেন, যে আচরণ নিজের জন্য ও আপন কারও জন্য প্রত্যাশা করেন না, তা যেন তিনিও অন্য কারও সাথে না করেন। আত্মশুদ্ধির প্রথম ধাপ হল বিশ্বাস। নিজের বিবেকের প্রতি ও মতবাদের প্রতি বিশ্বাস না থাকলে কখনোই পরিশুদ্ধ হওয়া যায় না। সঠিক এবং ভুলের সাধারণ ধারণা সৃষ্টিকর্তা সবার মাঝেই দিয়েছেন। যা আমরা নিজের জন্য প্রার্থনা করিনা মানুষের সাথে এমন কিছুই না করা, এই চিন্তার মধ্য দিয়েই সমাজের অনেক অনাচার দূর করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। 

সবশেষে, ডা. মুহিউদ্দীন আহমেদ এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন যে, মৃত্যুর পর কেউ যেন তাকে নেতিবাচকভাবে মনে না রাখেন। মানুষ হিসেবে আমরা প্রত্যেকেই কখনও না কখনও ভুল করি, কাউকে কষ্ট দেই, তিনি চান, তার এই ঘটনাগুলো মাফ করে দিয়ে সবাই যাতে শুধুই তাকে ভালোবাসার সাথে স্মরণ করেন। তার জন্যে প্রত্যাশা রইল, তিনি যেন তার এই সাধারণ অথচ অনন্য চিন্তাধারা নিয়ে আরও বহুবছর মানবসেবায় কাজ করে যেতে পারেন।

লিখেছেন – রোমান উদ্দিন