তুষার দত্ত বাংলাদেশের নাটোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি খুব অল্প বয়সে দুর্গাপুরের পণ্ডিত বিমল মিত্রের কাছ থেকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত শিখতে শুরু করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি আইটিসি সংগীত রিসার্চ একাডেমিতে যোগদান করেছিলেন। তিনি কিরানা ঘরানায় পণ্ডিত এ.কানন ও পণ্ডিত অরুন ভাদুরীর এর কাছ থেকে তালিম নিয়েছিলেন ।তিনি পন্ডীত কে জি গিন্ডে ও সুনীল বোস এর কাছ থেকে আগ্রার ঘরানার প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন। শুভ্রা গুহ এর কাছে প্রশিক্ষণ ও নিয়েছিলেন। তুষারকে ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় বৃত্তিতে ভূষিত করা হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে, ভারতের সকল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আয়োজিত খেয়াল প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। মুম্বাই সুর শ্রীনগর সমসদ তাকে “সুরমণি” উপাধি দিয়েছেন। তিনি সমগ্র ভারতে এবং অন্যান্য দেশে পারফর্ম করেছেন, বিড়লা একাডেমি অফ আর্ট অ্যান্ড কালচার এবং আইটিসি সংগীত সম্মেলন সহ বিভিন্ন কনসার্টে পারফর্ম করছেন।বাংলা ওয়েব সিরিজ ” তানসেনের তানপুরা”তেও অভিনয় করেছেন।
সংগীত পরিবারে জন্ম নেওয়া তুষার দত্ত একদম ছোটবেলায় গান থেকে প্রায় পালিয়েই বেড়াতেন। কিন্তু বাবার চেষ্টায় তিনি গানের জগতে আসেন এবং একসময় আবিষ্কার করেন তিনি গান প্রচণ্ড রকম ভালবাসেন। তার সংগীত জীবনের হাতেখড়ি হয় সন্তোষ চৌধুরী মাস্টারের কাছে। মাত্র দশ বছর বয়সে সংগীত শিক্ষার কারণে ভারতের কলকাতায় চলে আসেন তুষার দত্ত। সেখানে আইটিসি সংগীত রিসার্চ একাডেমিতে ১৮ বছর শিখেছেন গান। এরপর থেকে নিয়মিতই গানের সাথে আছেন তিনি। তার মতে প্রতিটি শিল্পীর শাস্ত্রীয় সংগীত শেখা উচিত। এতে করে কণ্ঠ ও মস্তিষ্ক পরিপক্ব হয়। শাস্ত্রীয় সংগীত না জানলে নজরুল সংগীত বা নজরুল গীতি গাওয়াটা কঠিন হয়ে পরে। কারণ নজরুল গীতিতে মূলসুর রেখে শিল্পী তার স্বকীয়তা দেখাতে পারে। এজন্য তার শিক্ষার্থীদের দুটো ধারারই চর্চা করান। কলকাতা ও দুর্গাপুরে দুটি আশ্রম আছে তুষার দত্তের এবং তার প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আছে। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন নজরুলের অজানা অথবা কম পরিচিত সৃষ্টিগুলো সম্পর্কে এবং এগুলোকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে। তিনি শাস্ত্রীয় সংগীতের পাশাপাশি ৪০ ও ৫০ দশকের কিছু অত্যন্ত জটিল গান রেকর্ড করতে চান যেগুলো এ সময়ের পর কেউই আর গায় নি।
নজরুলের বিভিন্ন অঙ্গের গান রয়েছে। নজরুল শাস্ত্রীয় সংগীতেও বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। গানগুলোর আদি রেকর্ড একদম সরাসরি গাওয়া যেকারণে সেখান থেকে সুর বের করা খুবই দুরহ কাজ। এই গানগুলো বিভিন্ন সময় যারা গেয়েছেন প্রতিবার গানগুলোতে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যেত ।তবে গানগুলো পুরোপুরি বিকৃত হয়নি এবং যেহেতু নজরুল সংগীতে প্রতিটি শিল্পীর স্বকীয়তা থাকে সেকারণে এই ভিন্নতা স্বাভাবিক ও বেধে রাখা সম্ভব না।
তুষার দত্ত ৪৫ বছর হক সংগীতের সাথে আছেন। গান গাইতে যেয়ে অনেক সময় তার মনে হয় নজরুল হয়ত গানে এটিই চেয়েছেন, তিনি বেচে থাকলে হয়ত তুষার দত্তকে তার সন্তোষের কথাটাও বলতেন। তুষার দত্ত সব সময় চান শিল্পী হিসাবে সবাই তাকে ভালবাসুক এবং তার গাওয়া গানগুলো মনে রাখুক। তিনি স্বপ্ন দেখেন যেভাবে উর্দু না জানা মানুষ উর্দু গানের প্রেমে পরে ঠিক সেভাবেই বাংলা না জানা মানুষও নজরুল সংগীতের প্রেমে পরবে একটা সময়। তুষার দত্তের প্রিয় গান আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন। সেই ৪ বছর বয়স থেকে তিনি এই গানটি গান৷ এই গানটি দাদরা শৈলীর একটি গান৷ ছেলেবেলায় গানটির অর্থ না বুঝলেও এখন তিঞ্জ সত্যিকার অর্থেই তার নিজের থেকেও আপন মানুষটিকে খুজতে চান। আর এই প্রশ্নটাই তাকে সবসময় ভাবায়।
নজরুলের গান ও লেখাগুলোর মাঝেই বিদ্রোহ ও প্রতিবাদের সুর আছে। নিজের জায়গা থেকে সবাই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয় এবং নজরুলের গানগুলো সবাইকে নতুন উদ্যাম, সাহস ও বিদ্রোহের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেছে৷ এজন্য বিদ্রোহের কথা বললে কাজী সাহবের নাম আসবেই ।
নজরুলের গানগুলোর মধ্যে শাস্ত্রীয় ঘরানার গান, গজল ও কিছু কিছু প্রেমের গান নিয়েই বেশি চর্চা করেন তুষার দত্ত৷ মন খারাপ থাকলে ময়দানে ঘুরতে বের হন তিনি। তাছাড়া বাকিটা সময় গানের মধ্যেই থাকেন। গান শুনেন অথবা গানের চর্চা করেন। তিনি তার দিন শুরু করেন সুর সাধনার মাধ্যমে । তিনি বিশ্বাস করেন নিয়মিত চর্চা করলে গলা কখনো খারাপ হবে না। তার মতে শিল্পীর শিল্প চর্চা ছাড়া অন্য কিছুতে জড়ানো উচিত নয় কখনোই।
তুষার দত্ত তার গানগুলোর মাধ্যমেই বেচে থাকতে চান। তার স্বপ্নই যতদিন বেচে থাকবেন ততদিন সংগীত চর্চা করার। গানের মাধ্যমেই দিন যাপন করার। এই কামনার পাশাপাশি তিনি চান নজরুলের দুষ্প্রাপ্য কিছু গান সংগ্রহ করে রেখে যেতে৷ আর উদ্দ্যেশ্যে তিনি সকলের কাছে সহায়তা চান যাতে করে তার উদ্দ্যেশ সফলে আরো বেগবান হতে পারেন৷