ফেরদৌস আহমেদ একজন জনপ্রিয় বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা। তাঁর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র বুকের ভিতর আগুন। এরপর ১৯৯৮ সালে তিনি খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার বাসু চ্যাটার্জি পরিচালিত হঠাৎ বৃষ্টি ছবিতে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশপাশি তিনি মডেলিং, টিভি উপস্থাপনা ও টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে  অনবদ্য অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার পাঁচবার ফেরদৌস আহমেদকে […]

সফল অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ

ফেরদৌস আহমেদ একজন জনপ্রিয় বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা। তাঁর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র বুকের ভিতর আগুন এরপর ১৯৯৮ সালে তিনি খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার বাসু চ্যাটার্জি পরিচালিত হঠাৎ বৃষ্টি ছবিতে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশপাশি তিনি মডেলিং, টিভি উপস্থাপনা ও টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে  অনবদ্য অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার পাঁচবার ফেরদৌস আহমেদকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতার পুরস্কারে ভূষিত করেছে।

করোনা মহামারীর সময়ে ফেরদৌস আহমেদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে করোনা সম্পর্কিত সচেতনতা তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেনবাংলাদেশের মত দেশে যেখানে প্রথাগতভাবে লকডাউন মানা সম্ভব হয় না সেক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার, ঘন ঘন হাত ধোয়ার মত বিষয়গুলো নিয়ে তিনি সচেতনতা তৈরিতে অংশগ্রহণ করেনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগের সাবের শিক্ষার্থী ফেরদৌস আহমেদ হতে চেয়েছিলেন একজন পাইলটতবে ভাগ্যের ফেরে হয়ে ওঠেন তুমুল জনপ্রিয় একজন অভিনেতাতবে ফেরদৌস আহমেদের পাইলট না হতে পারা বিষয়ে কিছুটা অনুশোচনা কাজ করে৷ তবে তিনি ভাগ্যে বিশ্বাস করেনতিনি বিশ্বাস করেন ভাগ্যই তাকে একজন চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে পরিচিত করেছেন তার ফ্লাইং ক্লাবে অবস্থানকালীন সময়ে একজন চলচ্চিত্র পরিচালকের দ্বারা নায়ক হওয়া বা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ব্যাপারে অনুপ্রাণিতে হনএছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সময়ে একবার এফডিসি ভ্রমণে গিয়েও যথেষ্ট অনুপ্রেরণা পানএছাড়াও তার নিজেকে নায়ক হিসেবে পর্দায় দেখার একটি সুপ্ত বাসনাও ছিলএরপর বিবি রাসেলের আমন্ত্রণে ফেরদৌস আহমেদ প্রথম ফ্যাশন শো এর মডেল হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেনএভাবেই পথচলা শুরু হয় তারএরপর প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার বাসু  চ্যাটার্জির হঠাৎ বৃষ্টি  সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দুই বাংলাতেই সমান জনপ্রিয়তা লাভ করেনএভাবে তিনি একসময় সিনেমাতে নিয়মিত হয়ে ওঠেন ফলে তার আর শেষপর্যন্ত পাইলট হয়ে ওঠা হয় নি। 

নিজে পাইলট না হতে পারলেও বিয়ে করেছেন একজন পাইলটকেস্ত্রী তানিয়া সম্পর্কে ফেরদৌস বলেন স্ত্রী তানিয়ার ফ্লাইটে তিনি সবথেকে নিরাপদ বোধ করেনকারণ মানুষ বা পাইলট দুইক্ষেত্রেই তার স্ত্রী খুবই আত্নবিশ্বাসীখুব কম কাজ করলেও কাজগুলো খুব মনযোগ দিয়ে করেন। 

আরেক জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পূর্নিমার সাথে ফেরদৌস আহমেদের রয়েছে অসাধারণ রসায়নএর কারণ হিসেবে তিনি বলেন তাদের দুজনের ক্যারিয়ার প্রায় একই সময়ে শুরু হয়দুজনে একসাথে মধু পূর্নিমা সিনেমায় অভিনয় করে জুটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেনব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত বন্ধু পরায়ণ তিনিমজা বা আড্ডায় জমিয়ে রাখতে পারেন চারপাশএভাবেই পূর্নিমার সাথে তার বন্ধন তৈরি হয়নিয়মিত কাজের ফলে তাদের বোঝাপড়া বিশ্বাসের জায়গাটা অত্যন্ত সুদৃঢ় হয়প্রথম আলো থেকে পাওয়া উপস্থাপনার প্রস্তাবে নিজেই সহ উপস্থাপক হিসেবে পূর্নিমাকে নির্বাচনের পরামর্শ দেনউপস্থাপনাতেও জুটি পরে অসম্ভব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে৷  ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস করেন, নিয়মিত কাজ করার ফলের তাদের দুজনের রসায়ন এত দৃঢ় এবং তাদের কাজ এতটা দর্শকপ্রিয়। 

নায়করাজ রাজ্জাক চিত্রনায়ক ফেরদৌসের আইডলএছাড়াও ওপার বাংলার উত্তম কুমারের বিশাল ভক্ত ফেরদৌসতাদের অভিনয় এবং ব্যক্তিত্ব দ্বারা প্রভাবিত তিনিফেরদৌস বিশ্বাস করেন পৃথিবীর সকল সমস্যার সমাধান করা যায় ভালবাসা দিয়েতিনি যুদ্ধ বা অস্ত্র থেকে বেশি বিশ্বাস করেন ভালবাসায়তিনি সবকিছুই ভালবাসার মাধ্যমে মূল্যায়নে বিশ্বাসীফেরদৌস আহমেদের জীবনে প্রথম প্রেম মহানায়িকা সুচিত্রা সেনপর্দায় সুচিত্রাকে প্রথম দেখাতেই ছেলেবেলাতেই তার প্রেমে পরেন এই নায়কতবে বাস্তব জীবনে সে অর্থে প্রথম দেখায় প্রেম হয়নি তারবর্তমান স্ত্রীর সাথে অনেক দিনের পরিচয় রূপ নেয় প্রেমে এরপর তারা বিয়ে করেন

ফেরদৌস আহমেদ বেড়ে ওঠেন ভালবাসা মিশ্রিত, শিক্ষিত এবং সাংস্কৃতিক একটি পরিবেশেতিনি বড় হন একটি একান্নবর্তী পরিবারে৷বাবার শিক্ষা এবং মা এর ভালবাসা এখনো অন্তরে ধারণ করেন তিনিফেরদৌসের মা এখনো তাকে সেই ছোটবেলার মতই ভালবাসেন। 

হঠাৎ বৃষ্টি সিনেমার কাজ শেষ হতে বছরখানেক সময় লাগেশ্যুটিং এর কাজে প্রায় ১০ বারের মত কলকাতায় যেতে হয় তাকেপ্রথম ধাপের শ্যুটিং থেকে ফেরার পর অনেকেই বিশ্বাস করেননি যে তিনি এত বড় একজন পরিচালকের সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন৷ তবে সিনেমা মুক্তির পর ইতিহাসেরই অংশ হয়ে যান ফেরদৌস৷ 

শুরুর দিকের মত এখনো নতুন সিনেমা বা চরিত্র নিয়ে ভাবনায় থাকে তিনিনতুন চরিত্র কিভাবে তিনি নিজের মাঝে ধারন করবেন নিয়ে সবসময় নিজের সাথে দ্বন্দ্ব হয় তারতবে এই দ্বন্বই তাকে চরিত্রকে বুঝতে সাহায্য করে বলে তিনি মনে করেন। 

ফেরদৌস আহমদের সবথেকে বড় অনুপ্রেরণা তার মা এবং বাবাফেরদৌসের বাবা ছিলেন একজন পরোপকারী মানুষ,তিনি সকলের বিপদে পাশে দাঁড়াতেনতার মা ব্যাপারে সব সময় তার বাবার পাশে থেকেছেন৷ তাদের কর্মকান্ড দেখে সেই ছেলে বেলা থেকেই বিস্মিত হতেন এই চিত্রনায়ক।  সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এখনো বাবা মা কেই অনুপ্রেরণা হিসেবে নেন তিনি। 

অবসর সময়ে ফেরদৌস আহমেদ বই পড়েন এবং সিনেমা দেখেনকিভাবে ফেরদৌস আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় ব্যাপারে তিনি বলেন, নিজস্ব ব্যক্তিত্ব মনের কথা বলতে পারলেই তার দৃষ্টি আকর্ষণ সম্ভব। 

নিজের জীবনের সেরা মুহূর্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিটি মুহূর্তকেই উপভোগ করেন তিনিতবে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়াকে সবথেকে আনন্দের স্মরণীয় মুহূর্ত মনে করেন তিনিমানুষের থেকে পাওয়া ভালবাসাকে নিজের শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখেন তিনিসবথেকে বেদনার সময় হিসেবে ফেরদৌস উল্লেখ করেন, যেদিন ফেরদৌস আহমেদের বাবা মারা যান সেদিনটি তার কাছে সবথেকে বেশি কষ্টেরব্যক্তি ফেরদৌস একজন বন্ধুসুলভ মানুষতিনি সম্পর্কের মাঝে দেয়াল তৈরিতে বিশ্বাসী নাতিনি নতুন সম্পর্ক গড়া এবং তা রক্ষায় বিশ্বাস করেনএজন্য তার সম্পর্কগুলো নষ্ট হয় না কিংবা সম্পর্কে ফাটল ধরে না। 

ফেরদৌস আহমেদ নিজের কাজের মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চানতবে তিনি মনে করেন চিরস্মরণীয় হয়ে থাকার মত কোনো কাজ এখনো তিনি করতে পারেননি।  তিনি স্বপিন দেখেন বাংলাদেশি হিসেবে অস্কারের লাল গালিচায় যাওয়ারতিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করতে চান যাতে করে পুরো পৃথিবীর মানুষের কাছে তিনি পরিচিত হতে পারেনএই কাজের মাধ্যমেই তিনি শিল্পী হিসেবে আজীবন বাঁচতে চান।