সফল অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ

সফল অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ

ফেরদৌস আহমেদ একজন জনপ্রিয় বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা। তাঁর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র বুকের ভিতর আগুন এরপর ১৯৯৮ সালে তিনি খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার বাসু চ্যাটার্জি পরিচালিত হঠাৎ বৃষ্টি ছবিতে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশপাশি তিনি মডেলিং, টিভি উপস্থাপনা ও টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে  অনবদ্য অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার পাঁচবার ফেরদৌস আহমেদকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতার পুরস্কারে ভূষিত করেছে।

করোনা মহামারীর সময়ে ফেরদৌস আহমেদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে করোনা সম্পর্কিত সচেতনতা তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেনবাংলাদেশের মত দেশে যেখানে প্রথাগতভাবে লকডাউন মানা সম্ভব হয় না সেক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার, ঘন ঘন হাত ধোয়ার মত বিষয়গুলো নিয়ে তিনি সচেতনতা তৈরিতে অংশগ্রহণ করেনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগের সাবের শিক্ষার্থী ফেরদৌস আহমেদ হতে চেয়েছিলেন একজন পাইলটতবে ভাগ্যের ফেরে হয়ে ওঠেন তুমুল জনপ্রিয় একজন অভিনেতাতবে ফেরদৌস আহমেদের পাইলট না হতে পারা বিষয়ে কিছুটা অনুশোচনা কাজ করে৷ তবে তিনি ভাগ্যে বিশ্বাস করেনতিনি বিশ্বাস করেন ভাগ্যই তাকে একজন চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে পরিচিত করেছেন তার ফ্লাইং ক্লাবে অবস্থানকালীন সময়ে একজন চলচ্চিত্র পরিচালকের দ্বারা নায়ক হওয়া বা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ব্যাপারে অনুপ্রাণিতে হনএছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সময়ে একবার এফডিসি ভ্রমণে গিয়েও যথেষ্ট অনুপ্রেরণা পানএছাড়াও তার নিজেকে নায়ক হিসেবে পর্দায় দেখার একটি সুপ্ত বাসনাও ছিলএরপর বিবি রাসেলের আমন্ত্রণে ফেরদৌস আহমেদ প্রথম ফ্যাশন শো এর মডেল হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেনএভাবেই পথচলা শুরু হয় তারএরপর প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার বাসু  চ্যাটার্জির হঠাৎ বৃষ্টি  সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দুই বাংলাতেই সমান জনপ্রিয়তা লাভ করেনএভাবে তিনি একসময় সিনেমাতে নিয়মিত হয়ে ওঠেন ফলে তার আর শেষপর্যন্ত পাইলট হয়ে ওঠা হয় নি। 

নিজে পাইলট না হতে পারলেও বিয়ে করেছেন একজন পাইলটকেস্ত্রী তানিয়া সম্পর্কে ফেরদৌস বলেন স্ত্রী তানিয়ার ফ্লাইটে তিনি সবথেকে নিরাপদ বোধ করেনকারণ মানুষ বা পাইলট দুইক্ষেত্রেই তার স্ত্রী খুবই আত্নবিশ্বাসীখুব কম কাজ করলেও কাজগুলো খুব মনযোগ দিয়ে করেন। 

আরেক জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পূর্নিমার সাথে ফেরদৌস আহমেদের রয়েছে অসাধারণ রসায়নএর কারণ হিসেবে তিনি বলেন তাদের দুজনের ক্যারিয়ার প্রায় একই সময়ে শুরু হয়দুজনে একসাথে মধু পূর্নিমা সিনেমায় অভিনয় করে জুটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেনব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত বন্ধু পরায়ণ তিনিমজা বা আড্ডায় জমিয়ে রাখতে পারেন চারপাশএভাবেই পূর্নিমার সাথে তার বন্ধন তৈরি হয়নিয়মিত কাজের ফলে তাদের বোঝাপড়া বিশ্বাসের জায়গাটা অত্যন্ত সুদৃঢ় হয়প্রথম আলো থেকে পাওয়া উপস্থাপনার প্রস্তাবে নিজেই সহ উপস্থাপক হিসেবে পূর্নিমাকে নির্বাচনের পরামর্শ দেনউপস্থাপনাতেও জুটি পরে অসম্ভব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে৷  ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস করেন, নিয়মিত কাজ করার ফলের তাদের দুজনের রসায়ন এত দৃঢ় এবং তাদের কাজ এতটা দর্শকপ্রিয়। 

নায়করাজ রাজ্জাক চিত্রনায়ক ফেরদৌসের আইডলএছাড়াও ওপার বাংলার উত্তম কুমারের বিশাল ভক্ত ফেরদৌসতাদের অভিনয় এবং ব্যক্তিত্ব দ্বারা প্রভাবিত তিনিফেরদৌস বিশ্বাস করেন পৃথিবীর সকল সমস্যার সমাধান করা যায় ভালবাসা দিয়েতিনি যুদ্ধ বা অস্ত্র থেকে বেশি বিশ্বাস করেন ভালবাসায়তিনি সবকিছুই ভালবাসার মাধ্যমে মূল্যায়নে বিশ্বাসীফেরদৌস আহমেদের জীবনে প্রথম প্রেম মহানায়িকা সুচিত্রা সেনপর্দায় সুচিত্রাকে প্রথম দেখাতেই ছেলেবেলাতেই তার প্রেমে পরেন এই নায়কতবে বাস্তব জীবনে সে অর্থে প্রথম দেখায় প্রেম হয়নি তারবর্তমান স্ত্রীর সাথে অনেক দিনের পরিচয় রূপ নেয় প্রেমে এরপর তারা বিয়ে করেন

ফেরদৌস আহমেদ বেড়ে ওঠেন ভালবাসা মিশ্রিত, শিক্ষিত এবং সাংস্কৃতিক একটি পরিবেশেতিনি বড় হন একটি একান্নবর্তী পরিবারে৷বাবার শিক্ষা এবং মা এর ভালবাসা এখনো অন্তরে ধারণ করেন তিনিফেরদৌসের মা এখনো তাকে সেই ছোটবেলার মতই ভালবাসেন। 

হঠাৎ বৃষ্টি সিনেমার কাজ শেষ হতে বছরখানেক সময় লাগেশ্যুটিং এর কাজে প্রায় ১০ বারের মত কলকাতায় যেতে হয় তাকেপ্রথম ধাপের শ্যুটিং থেকে ফেরার পর অনেকেই বিশ্বাস করেননি যে তিনি এত বড় একজন পরিচালকের সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন৷ তবে সিনেমা মুক্তির পর ইতিহাসেরই অংশ হয়ে যান ফেরদৌস৷ 

শুরুর দিকের মত এখনো নতুন সিনেমা বা চরিত্র নিয়ে ভাবনায় থাকে তিনিনতুন চরিত্র কিভাবে তিনি নিজের মাঝে ধারন করবেন নিয়ে সবসময় নিজের সাথে দ্বন্দ্ব হয় তারতবে এই দ্বন্বই তাকে চরিত্রকে বুঝতে সাহায্য করে বলে তিনি মনে করেন। 

ফেরদৌস আহমদের সবথেকে বড় অনুপ্রেরণা তার মা এবং বাবাফেরদৌসের বাবা ছিলেন একজন পরোপকারী মানুষ,তিনি সকলের বিপদে পাশে দাঁড়াতেনতার মা ব্যাপারে সব সময় তার বাবার পাশে থেকেছেন৷ তাদের কর্মকান্ড দেখে সেই ছেলে বেলা থেকেই বিস্মিত হতেন এই চিত্রনায়ক।  সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এখনো বাবা মা কেই অনুপ্রেরণা হিসেবে নেন তিনি। 

অবসর সময়ে ফেরদৌস আহমেদ বই পড়েন এবং সিনেমা দেখেনকিভাবে ফেরদৌস আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় ব্যাপারে তিনি বলেন, নিজস্ব ব্যক্তিত্ব মনের কথা বলতে পারলেই তার দৃষ্টি আকর্ষণ সম্ভব। 

নিজের জীবনের সেরা মুহূর্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিটি মুহূর্তকেই উপভোগ করেন তিনিতবে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়াকে সবথেকে আনন্দের স্মরণীয় মুহূর্ত মনে করেন তিনিমানুষের থেকে পাওয়া ভালবাসাকে নিজের শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখেন তিনিসবথেকে বেদনার সময় হিসেবে ফেরদৌস উল্লেখ করেন, যেদিন ফেরদৌস আহমেদের বাবা মারা যান সেদিনটি তার কাছে সবথেকে বেশি কষ্টেরব্যক্তি ফেরদৌস একজন বন্ধুসুলভ মানুষতিনি সম্পর্কের মাঝে দেয়াল তৈরিতে বিশ্বাসী নাতিনি নতুন সম্পর্ক গড়া এবং তা রক্ষায় বিশ্বাস করেনএজন্য তার সম্পর্কগুলো নষ্ট হয় না কিংবা সম্পর্কে ফাটল ধরে না। 

ফেরদৌস আহমেদ নিজের কাজের মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চানতবে তিনি মনে করেন চিরস্মরণীয় হয়ে থাকার মত কোনো কাজ এখনো তিনি করতে পারেননি।  তিনি স্বপিন দেখেন বাংলাদেশি হিসেবে অস্কারের লাল গালিচায় যাওয়ারতিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করতে চান যাতে করে পুরো পৃথিবীর মানুষের কাছে তিনি পরিচিত হতে পারেনএই কাজের মাধ্যমেই তিনি শিল্পী হিসেবে আজীবন বাঁচতে চান। 

মনিরা মিঠু : প্রাণবন্ত এক চরিত্রাভিনেত্রী

মনিরা মিঠু : প্রাণবন্ত এক চরিত্রাভিনেত্রী

অভিনেত্রী মনিরা মিঠু। উৎসব হোক আর না হোক টিভি পর্দা, ইউটিউব ও ওটিটিতে উজ্জল উপস্থিতি থাকে তার। মা কিংবা ভাবিদের চরিত্রে নির্মাতাদের ভরসার জায়গার মনিরা মিঠু থাকেন তালিকার শীর্ষে।হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত টেলিভিশন নাটক “অপেনটি বায়োস্কোপ” দিয়ে মনিরা মিঠুর অভিনয় জীবনের শুরু ।হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত এ নাটকে  জাহিদ হাসানের বিপরীতে অভিনয়ের মাধ্যমে মনিরা মিঠু যাত্রা শুরু করেন। এর পর হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত বেশিরভাগ নাটকেই অভিনয় করেছেন। হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় নীল তোয়ালে তার প্রথম ধারাবাহিক নাটক। চন্দ্রকথা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। পরবর্তীকালে তিনি আমার আছে জল, গহীনে শব্দ, জোনাকির আলো, পোড়ামন, দহন, বিশ্বসুন্দরী প্রভৃতি চরিত্রে অভিনয় করে তার দক্ষতার পরিচয় দেন।সেই থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে তুমুল দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন। তিনি ২০০৮ সালে এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের সমালোচক শাখায় সেরা টেলিভিশন অভিনেত্রী বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন।

মনিরা মিঠুর করা জনপ্রিয় ধারাবাহিক ফ্যামিলি ক্রাইসিসের গুরুত্বপূর্ণ এবং দর্শকপ্রিয় চরিত্র শেফালি খালার মৃত্যু ছুয়ে যায় সব দর্শকের অন্তর। মনিরা মিঠুর কাছে এই ভালোবাসা ভাষায় প্রকাশ করার মতন না। যেদিন ফ্যামিলি ক্রাইসিসের শেষ পর্ব প্রচারিত হয় সেদিন তিনি একটি নাটকের শ্যুটিং এ নেটওয়ার্ক এর বাইরে ছিলেন। শ্যুটিং শেষে ফেরার পথে তিমি অজস্রে ফোন পেতে থাকেন। সেই নাটকের প্রোডাকশন হাউসের মালিকের কান্না তাকে আপ্লুত করে তোলে। মনিরা মিঠু বলেন, তিনি নাকি বাস্তবতা আর অভিনয় গুলিয়ে ফেলেছিলেন। অপরিচিত নাম্বারের ফোন, দর্শকের কান্না এবং ভালবাসা সব কিছুরই সাক্ষী হন মনিরা মিঠু এই চরিত্রের কল্যাণে।

মনিরা মিঠুর অভিনয়ে আসা হুমায়ুন আহমেদের হাত ধরে৷ ওপেনটি বায়োস্কোপ নাটকের একটি চরিত্রের জন্য হুমায়ুন আহমেদ নতুন মুখ খুঁজছিলেন। এই নতুন মুখ সন্ধানের দায়িত্ব পরে মিঠুর বড় ভাই চ্যালেঞ্জারের উপর। লাজুক মিঠুর কথা তিনিই প্রথম হুমায়ুন আহমেদকে বলেন৷ সেই থেকে শুরু, এরপর থেকেই নিয়মিত কাজ করে চলছেন তিনি। নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য অনেক প্রস্তাব পান মিঠু। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে চরিত্রাভিনেত্রীরা অনেক সময় অসম্মানজনক পারিশ্রমিক পান। সে কারণে অনেক সময় চলচ্চিত্রে অভিনয় করা হয়ে ওঠে না তার।

মাত্র ৯ মাস বয়সে মাকে হারান মনিরা মিঠু। তার বেড়ে ওঠা তার দাদি এবং ফুফুর কাছে। সে কারণে মিঠু বয়স্ক চরিত্রে অভিনয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন বলে জানান। এ কারণেই এত অল্প বয়সেই তিনি একজন দর্শকপ্রিয় চরিত্রাভিনেত্রী হয়ে উঠতে পেরেছেন । তার কাছে এই চরিত্রগুলো অনেক বেশি মজাদার ও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মূল চরিত্র দিয়ে তার অভিনয় জীবন শুরু না হওয়ার জন্য। তার মতে, এমন কিছু হলে তিনি আজকের জনপ্রিয়তা কখনোই হয়ত পেতেন না।

ফ্যামিলি ক্রাইসিস নাটকে পরিচালক মোস্তফা কামাল রাজ অভিনেত্রী মনিরা মিঠুকে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। যার কারণেই শেফালী খালা চরিত্রটি এত সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছিলেন মিঠু। চরিত্রটি নেতিবাচক হওয়ায় শুরুতে অভিনয় করতে কিছুটা দোটানায় ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত রাজি হন এবং নাটকের সেট থেকে ভাল লাগার শুরু হয় আর শেষ পর্যন্ত চরিত্রটি হয় তুমুল দর্শকপ্রিয়।

পূর্বে দেখা গেছে ডলি জহুর তার করা নীলু ভাবি চরত্রের কারণে জনপ্রিয়তা পেলেও এরপর আর কখনোই সেই চরিত্রটি থেকে বের হতে পারেননি। মনিরা মিঠুর ক্ষেত্রে তিনিও এমন কিছু আশংকা করেন কি না এ বিষয়ে মিঠুর অভিমত হল, ভয় কিছুটা থাকলেও তিনি তার কাজগুলো নিয়ে আশাবাদী। তিনি একই সাথে দর্শকপ্রিয় দুটি ধারাবাহিক ফ্যামিলি ক্রাইসিসে শেফালী খালা এবং ব্যাচেলর পয়েন্ট এ শিরিন চরিত্রে অভিনয় করেন। দুটো চরিত্রই দর্শকপ্রিয়তা পায় যদিও চরিত্রগুলো ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। এছাড়াও মোস্তফা কামাল রাজের রোমিও জুলিয়েট নাটকে তিনি শিক্ষিকার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। এরপর অ্যাওয়ার্ড বা মানিমেশিন এরপর নাটকগুলো পর পর করেছেন। নাটকগুলোতে তার চরিত্রগুলর মধ্যে কোনোপ্রকার মিল ছিল না। এ থেকে মিঠুর বিশ্বাস তিনি নির্দিষ্ট কোনো একটি চরিত্রে হারিয়ে যাবেন না।

প্রয়াত নাজমা আনোয়ার, ফেরদৌসী মজুমদার, শমী কায়সার, বিপাশা হায়াত বা হালের জাকিয়া বারী মম, রুনা খান, সাবিলা নূর এবং মেহজাবিন চৌধুরী অভিনেত্রী হিসেবে ভীষণ প্রিয় মনিরা মিঠুর। আর অভিনেতাদের মাঝে হুমায়ুন ফরিদী, আসাদুজ্জামান নূর, আলী জাকের, আবুল খায়ের, জাহিদ হাসান এবং এখনকার মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, শতাব্দী ওয়াদুদ, অপূর্ব বা আফরান নিশো তার পছন্দের৷

টেলিভিশন নাটক বা সিনেমার বাইরে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তবে অভিযোগ আছে যে পরিচিত কিছু মুখের বাইরে অন্যদের খুব একটা সুযোগ দেওয়া হয় না ওটিটি প্ল্যাটফর্ম গুলোয়। মনিরা মিঠু নিজেও এ ব্যাপারটিকে আংশিক সত্য মনে করেন৷ শতাব্দী ওয়াদুদ, মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, শ্যামল মওলা, অপূর্ব, মেহজাবিন বা নিশোর মত অভিনেতারা এখানে বেশি গুরুত্ব পান। তবে তারা নিজেদের চেষ্টায় এবং দক্ষতায় এই অবস্থানে আসতে পেরেছেন। এছাড়া নতুনরাও সুযোগ পাচ্ছেন এবং সাধ্যমত নিজেদের মেলে ধরছেন বলেই তার বিশ্বাস।

অভিনয় জীবনে মনিরা মিঠুর অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা ঘটে হুমায়ুন আহমেদের বৃক্ষমানব নাটকের সেটে। সে সময়ে মনিরা মিঠুর শ্যুটিং বা অভিনয় নিয়ে তেমন কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না । নাটকের একটি দৃশ্যে তার অভিনয় দেখে স্বয়ং হুমায়ুন আহমেদ চোখের পানি ফেলেন। এই ঘটনাটি মিঠুর জীবনের স্মরণীয় ঘটনাগুলোর একটি। এছাড়াও সাপ নিয়ে অভিনয় বা অনেক উঁচু থেকে গড়িয়ে পুকুরে পরে যাওয়ার মত ঘটনাগুলোও তার কাছে স্মরনীয়।

জীবন নিয়ে খুব বেশি স্বপ্ন তিনি দেখেন না। তিনি আদতে একজন স্বপ্নহীন ছন্নছাড়া গোছের মানুষ। তবে তার একান্ত বাসনা তিনি যেন সুস্থ থেকে চিরবিদায় নিতে পারেন। আর তার বিদায়ের পর দুই সন্তানের যেন কখনো অভাব না হয় এটিই তার স্বপ্ন। চরিত্রগুলোর জন্য অনেক ত্যাগ শিকার করলেও যখন দর্শকদের ভালবাসা অর্জন করতে পারেন তখন সব ত্যাগ বা সংগ্রাম ভুলে নতুন কাজের আগ্রহ জন্মায় মিঠুর।

চয়নিকা চৌধুরী : একজন রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী, লেখক ও পরিচালক 

চয়নিকা চৌধুরী : একজন রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী, লেখক ও পরিচালক 

১৯৯৮ সালে ‘বোধ’ নাটক দিয়ে স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন চয়নিকা চৌধুরী। এরপর ২০০১ সালে ‘শেষ বেলায়’ নাটকের মধ্য দিয়ে নির্মাতার খাতায় নাম লেখান। গেল বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি তার ক্যারিয়ারের ২০ বছর পার করেন। এই ২০ বছরের ক্যারিয়ারে চয়নিকার নির্মিত এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০০টির মতো নাটক বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে তিনিই সবথেকে বেশি নাটক ও ধারাবাহিক নির্মাণ করেছেন, যা এখন পর্যন্ত তার দখলেনির্মাতা কাজের স্বীকৃতি হিসেবে চয়নিকা চৌধুরী বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে- ২০০৩ সালে কালচারাল রিপোর্টার্স অ্যাওয়ার্ড এবং ২০০৪ সালে কালচারাল জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের সেরা সমালোচক পুরস্কার। এ ছাড়া ২০১০ সালে চাড়ুনীড়ম ইনস্টিটিউট অব অ্যাক্টিং অ্যান্ড রিসার্চ থেকে বিশেষ পুরস্কার পান তিনি।

 আড্ডার শুরুতেই চয়নিকা চৌধুরী তার নিজের করোনা অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেনতিনি করোনা মহামারীকে  অদৃশ্য শত্রুর সাথে তুলনা করেন যার সাথে বুদ্ধি এবং সচেতনতা দিয়ে লড়াই করতে হয় এর সাথে নিজের করোনা আক্রান্ত হওয়ার সময়গুলোতে তার সন্তানদের ভালবাসা নিয়েও বলেন 

চয়নিকা চৌধুরী তার নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়ে গল্পের শুরুতে বলেন  ,তার স্বপ্ন ছিল একজন রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী হওয়ার সংগীত বা গানের পরিবেশেই তার বেড়ে ওঠা রবীন্দ্র সংগীতে তার আদর্শ হিসেবে মিতা হক,রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা,সঞ্জিতা খাতুনদের  কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেনপাশাপাশি তার মা এর অনুপ্রেরণার কথাও বিশেষভাবে স্মরণ করেনশান্তি নিকেতন থেকে ফেরার পর মাত্র ১৯ বছর দিন বয়সে তার বিয়ে হয়এরপর পরিবারকে সময় দিতে গিয়ে আর শান্তি নিকেতনে ফেরা হয়নি তার। 

একটি দীর্ঘ বিরতির পর লেখালেখি শুরু করেন চয়নিকা চৌধুরীতার পরিচালনায় আসা লাইট এন্ড শটের মুজিবুর রহমানের হাত ধরেতবে সে নাটকটি আর প্রচারিত হয় নিতার প্রথম প্রচারিত নাটক এক জীবনে,যা বিটিভিতে প্রচারিত হয় ২০০১ এ৷ সেই থেকেই পরিচালক হিসেবে তার পথচলা শুরুএই নাটকের জন্য তিনি তার বোন তমালিকার কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। 

চয়নিকা চৌধুরী এখনো বিভিন্নভাবে তার পেশাগত জীবনে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন বলেও জানাননাটক প্রচারের নিশ্চয়তাকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেন তিনি পর্যায়ে এসেও তার  নাটকগুলো প্রচারিত হওয়ার জন্য প্রিভিউ কমিটিতে জমা দিতে হয় বলেও জানানতবে এই চ্যালেঞ্জগুলোই তাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে, তিনি অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন বলেই তার বিশ্বাস। 

চয়নিকা চৌধুরী কাজের ক্ষেত্রে সফল এবং সম্ভাবনাময় সকলকে নিয়েই কাজ করেননাট্য বা চলচ্চিত্র শিল্পের স্বার্থে তার নিজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই নতুনদের সুযোগ দেন তিনিসুযোগ কাজে নতুন শিল্পীরাই তাদের দক্ষতা, মেধা এবং পরিশ্রম দিয়েই সবার মনে জায়গা করে নেন বলে মনে করেন তিনি। 

চয়নিকা চৌধুরীর মা তাকে অনেক সিনেমা দেখিয়েছেন সেই ছোটবেলা থেকেইঅনেক ভাল সিনেমার সাথে তার পরিচয় হয় মা এর হাত ধরেই৷তিঞ্জ অপর্ণা সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ, মোস্তফা কামাল সৈয়দ ,হুমায়ুন আহমেদ, নওয়াজেশ আলী খান, বরকতউল্লাহ, জিয়া আনসারী , আখতার ফেরদৌস রানা, মোহন খানদের কাজ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন বা শেখার চেষ্টা করেছেন৷ এসব গুনী পরিচালকদের পাশাপাশি সুবর্ণা মুস্তাফা ,ফেরদৌসী মজুমদার , শর্মিলী আহমেদ, ডলি জহুর, আবুল হায়াত, আব্দুল্লাহ আল মামুন এর মত গুণী অভিনেতাদের কাছে থেকেও তিনি শিখেছেন। 

মাহফুজ আহমেদ, অপি করিম, তারিন, অপূর্ব, নুসরাত ইমরোজ তিশা, রিচি সোলায়মান, জাকিয়া বারী মম, আনিসুর রহমান মিলন, আফরান নিশো, মেহজাবিন চৌধুরী, তানজিন তিশা বা মনোজ কুমারএদের সবার অভিনয় দক্ষতাই চয়নিকা চৌধুরীকে মুগ্ধ করে৷ তার বোঝাপড়া সবথেকে বেশি মাহফুজ আহমেদ আর হালের আপূর্বর সাথেচলচ্চিত্র অভিনয় শিল্পীদের মধ্যে সিয়াম, পরীমনি আর শাকিব খানের অভিনয়ের প্রশংসা করেন তিনি। 

সিনেমাতে কাজ শুরু করলেও নাটক তৈরি কখনো ছাড়তে চান না চয়নিকাপাশাপাশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও নিজেকে মেলে ধরতে চান তিনিচলচ্চিত্রের সুদিন ফিরিয়ে আনতে ভাল নির্মাণ , অসাধারণ গল্প, দক্ষ অভিনয়শিল্পীর পাশাপাশি সিনেমা হল নির্মাণ এবং এই হলগুলোর পরিবেশের গুরুত্ব অপরিসীম বলে মনে করেন তিনিচলচ্চিত্রের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে নতুন সিনেমা হল নির্মাণে প্রধানন্ত্রীর উদ্যোগেকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন তিনি। 

চয়নিকা চৌধুরী গুণী অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার কাজের ভক্ততার মতে সুবর্ণা মুস্তাফার কোনো বিকল্প নেইতিনি তার ভুবনে অদ্বিতীয়তবে হুমায়ুন ফরিদী এবং এস এম মোহসীন এর সাথে কাজ করতে না পারার আক্ষেপ সবসময় থেকে যাবে তার। 

নিজের মূল্যায়নে চয়নিকা চৌধুরী নিজেকে সর্বোচ্চ নম্বরই দেনএর কারণ হিসেবে তার কাজের প্রতি আত্মনিবেদন, ভালো কাজ করার ইচ্ছা, পরিশ্রম এবং নির্মাণ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি তার ভালবাসাকে উল্লেখ করেনতার নিজের করা কাজ গুলোর মধ্যে মায়া, বিকেলের আলো, তালপাতার পাখা, আবেগ, এসো হাত ধর, শেষ প্রাণে, দুই বোন, শেষের পরে, সোনার কাঠি রূপার কাঠি, সবুজ রুমাল, ইতি তোমার মা, নীল ফুল, আলো ছায়া বা ওপারে একা ইত্যাদি তার পছন্দের। 

চয়নিকা চৌধুরী সবসময় ভালো নির্মানের চেষ্টা করেন অথবা বিপদে সবার পাশে দাঁড়ানএই গুণ গুলোর কারণে বিচক্ষণতা সম্পন্ন মানুষ তাকে সবসময় মনে রাখবে বলেই তার বিশ্বাসমানুষের প্রাণ থাকতে মানুষ প্রাপ্য প্রশংসা বা সম্মান পায় না নিয়েও আক্ষেপ ঝরে চয়নিকার কণ্ঠে। 

 

পণ্ডিত তুষার দত্ত : নজরুল চর্চার এক মহীরুহ 

পণ্ডিত তুষার দত্ত : নজরুল চর্চার এক মহীরুহ 

তুষার দত্ত বাংলাদেশের নাটোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি খুব অল্প বয়সে দুর্গাপুরের পণ্ডিত বিমল মিত্রের কাছ থেকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত শিখতে শুরু করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি আইটিসি সংগীত রিসার্চ একাডেমিতে যোগদান করেছিলেন। তিনি কিরানা ঘরানায় পণ্ডিত এ.কানন ও পণ্ডিত অরুন ভাদুরীর এর কাছ থেকে তালিম নিয়েছিলেন ।তিনি পন্ডীত কে জি গিন্ডে ও সুনীল বোস এর কাছ থেকে আগ্রার ঘরানার প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন। শুভ্রা গুহ এর কাছে প্রশিক্ষণ ও নিয়েছিলেন। তুষারকে ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় বৃত্তিতে ভূষিত করা হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে, ভারতের সকল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আয়োজিত খেয়াল প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। মুম্বাই সুর শ্রীনগর সমসদ তাকে “সুরমণি” উপাধি দিয়েছেন তিনি সমগ্র ভারতে এবং অন্যান্য দেশে পারফর্ম করেছেন, বিড়লা একাডেমি অফ আর্ট অ্যান্ড কালচার এবং আইটিসি সংগীত সম্মেলন সহ বিভিন্ন কনসার্টে পারফর্ম করছেন।বাংলা ওয়েব সিরিজ ” তানসেনের তানপুরা”তেও  অভিনয় করেছেন। 

সংগীত পরিবারে জন্ম নেওয়া তুষার দত্ত একদম ছোটবেলায় গান থেকে প্রায় পালিয়েই বেড়াতেন। কিন্তু বাবার চেষ্টায় তিনি গানের জগতে আসেন এবং একসময় আবিষ্কার করেন তিনি গান প্রচণ্ড রকম ভালবাসেন। তার সংগীত জীবনের হাতেখড়ি হয় সন্তোষ চৌধুরী মাস্টারের কাছে মাত্র দশ বছর বয়সে  সংগীত শিক্ষার কারণে ভারতের কলকাতায় চলে আসেন তুষার দত্তসেখানে আইটিসি সংগীত রিসার্চ একাডেমিতে ১৮ বছর শিখেছেন গানএরপর থেকে নিয়মিতই গানের সাথে আছেন তিনিতার মতে  প্রতিটি শিল্পীর শাস্ত্রীয় সংগীত শেখা উচিতএতে করে কণ্ঠ মস্তিষ্ক পরিপক্ব হয়শাস্ত্রীয় সংগীত না জানলে নজরুল সংগীত বা নজরুল গীতি গাওয়াটা কঠিন হয়ে পরেকারণ নজরুল গীতিতে মূলসুর রেখে শিল্পী তার স্বকীয়তা দেখাতে পারেএজন্য  তার শিক্ষার্থীদের দুটো ধারারই চর্চা করানকলকাতা দুর্গাপুরে দুটি আশ্রম আছে তুষার দত্তের এবং তার প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আছেবর্তমানে তিনি কাজ করছেন নজরুলের অজানা অথবা কম পরিচিত সৃষ্টিগুলো সম্পর্কে এবং এগুলোকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেতিনি শাস্ত্রীয় সংগীতের পাশাপাশি ৪০ ৫০ দশকের কিছু অত্যন্ত জটিল গান রেকর্ড করতে চান যেগুলো সময়ের পর কেউই আর গায় নি

নজরুলের বিভিন্ন অঙ্গের গান রয়েছেনজরুল শাস্ত্রীয় সংগীতেও বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেনগানগুলোর আদি রেকর্ড একদম সরাসরি গাওয়া যেকারণে সেখান থেকে সুর বের করা খুবই দুরহ কাজএই গানগুলো বিভিন্ন সময় যারা গেয়েছেন প্রতিবার গানগুলোতে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যেততবে গানগুলো পুরোপুরি বিকৃত হয়নি এবং যেহেতু নজরুল সংগীতে প্রতিটি শিল্পীর স্বকীয়তা থাকে সেকারণে এই ভিন্নতা স্বাভাবিক বেধে রাখা সম্ভব না। 

তুষার দত্ত ৪৫ বছর হক সংগীতের সাথে আছেনগান গাইতে  যেয়ে অনেক সময় তার মনে হয় নজরুল হয়ত গানে এটিই চেয়েছেন, তিনি বেচে থাকলে হয়ত তুষার দত্তকে তার সন্তোষের কথাটাও বলতেনতুষার দত্ত সব সময় চান শিল্পী হিসাবে সবাই তাকে ভালবাসুক এবং তার গাওয়া গানগুলো মনে রাখুকতিনি স্বপ্ন দেখেন যেভাবে উর্দু না জানা মানুষ  উর্দু গানের প্রেমে পরে ঠিক সেভাবেই বাংলা না জানা মানুষও নজরুল সংগীতের প্রেমে পরবে একটা সময়তুষার দত্তের প্রিয় গান আমার আপনার চেয়ে আপন যে জনসেই বছর বয়স থেকে তিনি এই গানটি গান৷ এই গানটি দাদরা শৈলীর একটি গান৷ ছেলেবেলায় গানটির অর্থ না বুঝলেও এখন তিঞ্জ সত্যিকার অর্থেই তার নিজের থেকেও আপন মানুষটিকে খুজতে চানআর এই প্রশ্নটাই তাকে সবসময় ভাবায়

নজরুলের গান লেখাগুলোর মাঝেই বিদ্রোহ প্রতিবাদের সুর আছেনিজের জায়গা থেকে সবাই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয় এবং নজরুলের গানগুলো সবাইকে নতুন উদ্যাম, সাহস বিদ্রোহের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেছে৷ এজন্য বিদ্রোহের কথা বললে কাজী সাহবের নাম আসবেই

নজরুলের গানগুলোর মধ্যে শাস্ত্রীয় ঘরানার গান, গজল কিছু কিছু প্রেমের গান নিয়েই বেশি চর্চা করেন তুষার দত্ত৷ মন খারাপ থাকলে ময়দানে ঘুরতে বের হন তিনিতাছাড়া বাকিটা সময় গানের মধ্যেই থাকেনগান শুনেন অথবা গানের চর্চা করেনতিনি তার দিন শুরু করেন সুর সাধনার মাধ্যমেতিনি বিশ্বাস করেন নিয়মিত চর্চা করলে গলা কখনো খারাপ হবে নাতার মতে শিল্পীর শিল্প চর্চা ছাড়া অন্য কিছুতে জড়ানো উচিত নয় কখনোই। 

তুষার দত্ত তার গানগুলোর মাধ্যমেই বেচে থাকতে চানতার স্বপ্নই যতদিন বেচে থাকবেন ততদিন সংগীত চর্চা করারগানের মাধ্যমেই দিন যাপন করারএই কামনার পাশাপাশি তিনি চান নজরুলের দুষ্প্রাপ্য কিছু গান সংগ্রহ করে রেখে যেতে৷ আর উদ্দ্যেশ্যে তিনি সকলের কাছে সহায়তা চান যাতে করে তার উদ্দ্যেশ সফলে আরো বেগবান হতে পারেন৷ 

সরকার কবির উদ্দিন : একজন কিংবদন্তি বেতার ও টিভি

সরকার কবির উদ্দিন : একজন কিংবদন্তি বেতার ও টিভি

১৯৬০ বা ৭০ এর দশকে রেডিও শুনেছেন অথচ সরকার কবির উদ্দিনকে চিনবেন না এমন লোক পাওয়া দুষ্কর তৎকালীন রেডিও পাকিস্তান করাচি থেকে প্রচারিত বাংলা খবর ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর ও সিলেট কেন্দ্র থেকে রিলে করা হতো। যাদুকরী কন্ঠের মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে সংবাদ পাঠক হিসেবে সবাই মনের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছিলেন তাকে তিনি ব্রডকাস্ট মিডিয়ার অতি নন্দিত জন তথা বেতারের কিংবদন্তি সংবাদ পাঠক সরকার কবির উদ্দিন। রেডিও পাকিস্তান থেকে পরবর্তীতে বাংলাদেশ বেতার ঢাকা অতঃপর ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা বিভাগে সুদীর্ঘ চার দশক কর্মজীবন শেষ করে এখন অবসরে। তিনি ভিওএ বাংলার সাবেক ম্যানেজিং এডিটর। তিনি একটা সময় ছিলেন বিখ্যাত নায়ক

সরকার কবির উদ্দিনের ছোটবেলা থেকেই শখ ছিল চলচ্চিত্রে অভিনয়েরছেলে বেলার এই স্বপ্ন একটা সময় পূরণ হলেও পরে সেখান থেকে সরে আসেনকারণ মিডিয়াতে মানুষ যেভাবে চায় সবসময় সেভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে না৷ দর্শক শ্রোতারা যেভাবে যে পরিচয়ে চায় সেই পরিচয়েই প্রতিষ্ঠিত হতে হয়তাকেও দর্শক শ্রোতারাই টিভি বেতার শিল্পী হিসেবেই প্রতিষ্টিত করেছেএছাড়াও পারিবারিক কারণে সিনেমা থেকে সরে আসতে হয় সরকার কবির উদ্দিনকে। 

সরকার কবির উদ্দিন সাংবাদিকতা শুরু করেন চলচ্চিত্রে আসার অনেক আগেই সেই ১৯৬০ এর দশকেশুরুটা হয় করাচি সেন্ট্রাল কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায়সেই সময়ই রেডিও তে খবর পড়া শুরু করেনতিনি নিখিল পাকিস্তান সংবাদে খবর পাঠ করতেন যা পুরো পাকিস্তানের সব রেডিও স্টেশনে প্রচার করা হত সুযোগ লাভের জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলেন এবং সেখানে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেনএরপর ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান টিভি চালু হলে সেখানে বাংলায় সংবাদ পাঠ শুরু করেন তিনিপাশাপাশি তিনি পি আই তেও প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেনএভাবেই পেশাগত জীবন শুরু করেন সরকার কবির উদ্দিন৷ এরপর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন এবং বাংলাদেশ বিমানে যোগদান করেনভয়েস অব আমেরিকাতে যোগদানের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমানের জনসংযোগ দপ্তরের প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি১৯৮৪ সালে তিনি ভয়েস অব আমেরিকাতে যোগদান করেনকন্যার মৃত্যু এবং একারণে স্ত্রীর দেশ ছাড়তে চাওয়া তাকে এই চাকরিতে যোগদানের একটা বড় কারণ

৬০ বছরের কর্মজীবন সরকার কবির উদ্দিনেরটিভি রেডিওতে কাজ করা প্রতিটি মুহূর্ত তিনি উপভোগ করেছেনতিনি যাদেরকে অনুসরণ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ভয়েস অব আমেরিকার এরিক ওয়ার্নার, দিল্লী রেডিওতে কাজ করা বিজন বোস, বাংলাদেশের আব্দুর রউফ পাকিস্তানে তার শিক্ষক প্রফেসর মুজিবুর রহমান খানএই মানুষগুলোকে সবসময় শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন তিনিতারা নিজেদের অজান্তেই কবির উদ্দিনকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন এবং সঠিক পথ নির্দেশনা দিয়ে গেছেনপাশাপাশি তিনি য়ার সাথে কাজ করা সকল সহকর্মীর কাছেও কৃতজ্ঞ কারণ তাদের কাছেও অনেক কিছু শিখেছেন এবং অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। 

নিজে অনেক সাক্ষাৎকার নিলেও যারা তার নিজের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তাদের মধ্যে শ্যামল রোধ, কি কথা তাহার সাথে অনুষ্ঠানে ইমদাদুল হক মিলন, তৃতীয় মাত্রায় সাইফুল ইসলাম এবং আনকাট ৫৫ মিনিটে মুন্নী সাহার নেওয়া সাক্ষাৎকার তিনি স্মরণে রেখেছেন৷ সবাইকে তিনি অসম্ভব স্নেহ শ্রদ্ধা করেন। 

৬০ বছরের পেশাগত জীবনে তিনি অনেক শিখেছেন এবং অনেক কিছুর পরিবর্তন দেখেছেনঅনেক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছেহালের মোবাইল ফোন অনেক পরিবর্তন এনেছে বলেও তার মততবে এখন নিরপেক্ষতা অনেক ক্ষেত্রেই বজায় রাখা যায় নাকারণ এখন নিয়ন্ত্রণের অনেক অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতেএজন্য নিয়ন্ত্রণ জরুরি৷ তবে তিনি এটাও মনে করেন না যে পুরো নিয়ন্ত্রণ রাখা উচিতসবার উচিত ভেবে চিন্তে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করাতাহলেই পরিবর্তন সম্ভব। 

নিজের ব্যক্তিজীবনে একজন সাহিত্য প্রিয় মানুষ তিনিতারসেন্টু ভাইঅর্থাৎ প্রখ্যাত সাহিত্যিক আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর লেখা আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি তার প্রিয় কবিতানিজের পেশাগত জীবনে তিনি সবসময় মানুষের ভালবাসা পেয়েছেনরাস্তায় আনসার সদস্যরা তাকে চিনতে পেরে একসাথে ছবি তুলেছিলেন, বঙ্গোপসাগরের মাঝি তাকে বলেছিলেন তার পাঠ করা খবর তিনি নৌকায় বসে শুনেনএইসব কবির উদ্দিনের জীবনের বড় পাওয়াএই মানুষগুলোর কারণেই তার সাফল্যতিনি বেচে থাকতে চান একজন অত্যন্ত সাধারণ মানুষ হিসেবেএকজন বন্ধু, ভাই, সহকর্মী বা দেশের নাগরিক হিসেবে৷ তরুণদের তিনি বলেন ক্যামেরা মাইক্রোফোনের সামনে বসলে মনে করতে হবে এটাই উপাসনালয় এবং এরসাথে কখনোই বেঈমানি করা যাবে না। 

লিখেছেনঃ রোমান উদ্দীন

আরেফিন শুভ : একজন অভিনেতা আরেফিন শুভ থেকে বঙ্গবন্ধু হওয়ার গল্প

আরেফিন শুভ : একজন অভিনেতা আরেফিন শুভ থেকে বঙ্গবন্ধু হওয়ার গল্প

আরিফিন শুভ ১৯৮২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ বিভাগীয় জেলার ভালুকা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। আংগারগাড়া গ্রামে পৈতৃক নিবাস হলেও তার জন্ম ময়মনসিংহ শহরেবাবা এস এম শামসুল হক ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সরকারি কর্মকর্তা, মা ছিলেন একজন ছোট চাকুরিজীবী। শুভ’রা দুই ভাই, মাহবুবুল আরিফিন শুভ অর্থাৎ আমাদের আরেফিন শুভ ছোট এবং বড় ভাই মাহমুদুল খান সজীব। 

শুভ  ২০০৭ সালে প্রথম মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর হ্যাঁ-না নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু করেন। ২০০৮ সালে ইজ ইকুয়াল টু ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে তার অবস্থান শক্ত করেন। ২০১০ সালে খিজির হায়াত খান পরিচালিত জাগো চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার বড় পর্দায় অভিষেক হয়। কয়েক বছর বিরতির পর ২০১৩ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী চলচ্চিত্রে খলচরিত্রে অভিনয় করেন।এই চলচ্চিত্র গুলোর মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু করেনতার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী, অগ্নি, তারকাঁটা, কিস্তিমাত, ছুঁয়ে দিলে মন, মুসাফির, অস্তিত্ব, নিয়তি, ঢাকা অ্যাটাক, আহারে, সাপলুডু, মিশন এক্সট্রিম এর মতো চলচ্চিত্র। 

এ সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক আরেফিন  শুভ মডেলিং এর মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০০৫ সালে পাশাপাশি ছিলেন  জনপ্রিয় একজন আর জে ওএর বাইরে তিনি  অসাধারণ একজন গায়ক বটেবর্তমানে খ্যাতির চূড়ায় অবস্থান করছেন বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকে স্বয়ং বঙ্গবন্ধু চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়ার পরএর আগে চরিত্রের খাতিরে সিক্স প্যাক বানিয়েও তিনি এসেছিলেন আলোচনায়বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকে অভিনয়ের আগে তিনি কাজ করেন মিশন এক্সট্রিম

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মিত সিনেমাটির পরিচালক শ্যাম বেনেগাল কেন আরেফিন শুভকেই বঙ্গবন্ধু চরিত্রের জন্য মনোনীত করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের একটি প্রচলিত ধারণা আছে যে প্রতিটি অভিনেতার নির্দিষ্ট  একটি সেট লুক থাকে এবং তিনি সেভাবেই কাজ করে যানতবে আরেফিন শুভ-ই প্রথম যিনি চরিত্রের খাতিরে দৈহিক গড়নে পরিবর্তন আনেন এবং মিশন এক্সট্রিম চলচ্চিত্রে চরিত্রের খাতিরে মানানসই লুকে পর্দার সামনে হাজির হনসিনেমার শ্যুটিং শেষ হতে না হতেই আরেফিন শুভর ডাক পরে কলকাতায় বঙ্গবন্ধু চরিত্রে অডিশনের জন্যমিশন এক্সট্রিম সিনেমায় অভিনয়ের সময় পাওয়া আঘাত নিয়েই অডিশনের জন্য কলকাতা যান শুভতাঁকে দেখে পরিচালক শ্যাম বেনেগাল মজা করে বলেন খোঁড়া মুজিবযদিও আরেফিন শুভর দৈহিক গড়ন নিয়ে তিনি মোটেও চিন্তিত ছিলেন নাএই অডিশনের পর আরো টি অডিশন দিয়ে তিনি শেষপর্যন্ত বঙ্গবন্ধু চরিত্রের জন্য মনোনীত হনএছাড়াও বঙ্গবন্ধু চরিত্রের মেকআপ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শুভ বলেন, প্রসথেটিকস মেকআপ এর জন্য মোটামুটি আড়াই ঘন্টা সময় লাগত। 

আরেফিন শুভ কিভাবে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কিভাবে বিস্তারিত  জেনেছেন সম্পর্কে বলেন, দেখে ,পড়ে শুনে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেনএর অংশ হিসেবে টেরাবাইটের বেশি ভিডিও ফুটেজ দেখেছেন, বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা  এবং তাঁকে নিয়ে লেখা বই গুলো পড়েছেনএছাড়া বঙ্গবন্ধুর সেসময়কার সহযোদ্ধাদের কাছে থেকেও  বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জেনেছেন শুভমাননীয়  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও এই বায়োপিকের কলাকুশলীদের ডেকেছিলেন এবং প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা যাবত তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেনএই আলোচনার ফাকে আরেফিন শুভর একটি প্রশ্নের জবাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলেও তিনিও এভাবেই নিজেকে বর্ণনা করতেন। 

চরিত্রটি থেকে শুভর অর্জন কি হবে এর উত্তরে শুভ বলেন, পুরো সিনেমাটি দেখে এক মুহূর্তের  জন্য ও যদি বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা অর্থাৎ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানার শুভকে বঙ্গবন্ধু হিসেবে মনে হয় তাহলেই তিনি সফলএছাড়াও নিজের মা এর প্রতি শুভর ভালবাসা সম্পর্কে তিনি বলেন সন্তানের জন্য মা অনেক সংগ্রাম করেনআর এজন্য মা এর জন্য নিবেদিত প্রাণ হওয়া প্রতিটি সন্তানের দায়িত্ব। 

নিজের ছেলেবেলা নিয়ে বলতে গিয়ে শুভ বলেন, মানুষের শিকড় কখনো ভুলে যেতে নেইভালো মানুষের সংজ্ঞা হিসেবে বলেন যিনি নিজের অতীতকে মনে রাখেন তিনিই ভালো মানুষশুভ বলেন তিনি এখনো স্ট্রাগল করছেনতবে চলার পথে তিনি অনেকের সাহায্য পেয়েছেন এবং এখনো পাচ্ছেনসবার সাহায্য ছাড়া তিনি কখনো আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে পারতেন না। 

কারিয়ারের শুরু গল্পে বলেন, অর্থের অভাবে তিনি হেটে যাতায়াত করতেনএকটি ফ্যাশন শোর রিহার্সেলের জন্য তিনি নিয়মিত মিরপুর থেকে পান্থপথ হেটে আসতেনশুভর সম্পর্কে এমন শোনা যায় যে তিনি সাইকেলে যাতায়াত করতেন একসময়। 

প্রথম মিডিয়ায় আসা প্রসঙ্গে বলেন, ঢাকায় আসার জন্য তার কাছে টাকা ছিল না৷ দুই বন্ধুর দেওয়া টাকা নিয়ে ঢাকায় আসেন বিটিভির একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্যসেই পুরোনো বন্ধুত্ব শুভ এখনো বজায় রেখেছেন। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে শুভ বলেন , তিনি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বিশ্বাস করেন নাদীর্ঘমেয়াদি কোনো লক্ষ্যও নির্ধারণ করেন নাতিনি বর্তমানে বিশ্বাসীপ্রতিদিনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেন এবং পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা করেনতিনি অনেক মানুষকেই নিজের আদর্শ মনে করেন এবং চলার পথে অনেকের থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজে নেননিজের বডি ট্রান্সফরমেশন এবং ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, সব কিছুর জন্য মূল্য দিতে হয়সফলতা একদিনে আসে নাসবকিছু শুরু থেকে শুরু করতে হয়৷ আজ থেকে ১০ বছর পর কি হবে তা নিয়ে শুভ ভাবতে চান নাতিনি শুধুই মানুষের ভালবাসা অর্জন করতে চান। 

 লিখেছেনঃ রোমান উদ্দীন