সাদাত হোসাইন : একজন তুমুল জনপ্রিয় গল্পকার

সাদাত হোসাইন : একজন তুমুল জনপ্রিয় গল্পকার

সাদাত হোসাইন নিজেকে বলেন গল্পের মানুষ। তার কাছে চারপাশের জীবন ও জগৎ, মন ও মানুষ সবই গল্প । গল্প বলার সেই আগ্রহ থেকেই একের পর এক লিখেছেন-তুমুল জনপ্রিয় সব উপন্যাস। নির্মাণ করেছেন, স্বল্প ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, তথ্যচিত্র, টিভি ফিকশন। নিজের অভ্যস্ত পরিসরের পাশাপাশি শুরু করেছেন, মৌলিক থ্রিলার রেজা সিরিজ, কিশাের উপন্যাস, শিশুদের জন্য বই ইত্যাদি। জিতেছেন জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকার পুরস্কার, এসবিএসপিআরপি ফাউন্ডেশন সাহিত্য পুরস্কার, ভারতের চোখ সাহিত্য পুরস্কার, শুভজন সাহিত্য সম্মাননা।। ‘২০১৯-এ জিতেছেন এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন । হুমায়ুন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার। ২০২১-এ পেয়েছেন অন্যদিন সম্ভাবনার বাংলাদেশ (কথাসাহিত্য) সম্মাননা ও Marvel of Tomorrow Influencers Award. জিতেছেন আইএফআইসি ব্যাংক-কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার ২০২১ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগ। থেকে স্নাতকোত্তর সাদাত হােসাইনের জন্ম ১৯৮৪ সালের ২১ মে, মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার কয়ারিয়া গ্রামে।

লেখালেখিতে সাদাত হোসাইনের পথচলা খুব বেশি দিনের না২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস আরশিনগর৷ বেস্ট সেলার বইগুলোর তালিকায় যেখান সব সময় নন ফিকশন বইগুলো ছিল সেখানে ২০১৭ সালে প্রথম সাদাত হোসাইনের লেখা জায়গা পায়৷ ২০১৮ সালেও তার বই বেস্ট সেলার এর তালিকায় উঠে আসে৷ ২০১৯ সালে এ অবস্থান আরো এগোয়৷ ফিকশন বই গুলোর মধ্যে বেস্ট সেলার লিস্ট এ ১০ টি বইয়ের মধ্যে ৪ টি বই তারবেস্ট সেলারের তালিকায় তার লেখা ফিকশন বইগুলোর জায়গা পাওয়াটাকে তিনি দেখেন ইতিবাচক দিক হিসেবে৷কারণ মানুষ এখনো এই বইগুলো পড়ে যা নতুন আশার আলো দেখায়৷ 

আলোকচিত্রী সাদাত হোসাইন এখন পুরোপুরি একজন লেখকতিনি নিজেকে সফল মনে করেন কারণ তিনি একজন পরিতৃপ্ত সন্তুষ্ট মানুষতার কাছে এটিই সফলতার মাপকাঠিতার লেখা লেখির অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে তার হতাশাগুলোযতবারই তিনি হতাশ হয়েছেন ততবারই কাজের মাধ্যমে সফলতার খোঁজ করেছেনএই হতাশাই তাকে বারবার পুনর্জন্ম দেয়৷ ছোটবেলা থেকে লেখার জন্য তাকে সবাই নিরুৎসাহিত করতএখন পর্যন্ত তাকে সমালোচনা শুনতে হয়৷তাই তিনি কোনো মানুষের কাছে থেকে নিজের লেখালেখিতে অনুপ্রেরণা খুজে পান না৷ তবে যারা তার লেখা ভালবাসে তাদের এই ভালবাসাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখেন৷ লেখালেখিতে তার বাবা মা সরাসরি অনুপ্রেরণা না হকেও তাদের থেকে যে জীবনদর্শন পেয়েছেন তা তাকে আরো বেশি সৃষ্টিশীল করে তুলেছে৷ তবে তিনি মনে করেন একজন সৃষ্টিশীল  মানুষ কখনো পরিতৃপ্ত হতে পারে না। 

সাদাত হোসাইনের জন্ম মাদারীপুরের প্রত্যন্ত এক গ্রামেযেখানে বিদ্যুৎ ছিল নাস্কুলের পাঠ্য বইয়ের বাইরে অন্য কোনো বই পড়ার সুযোগ ছিল না৷ তবে তার সবসময় গল্পের প্রতি আগ্রহ ছিলতিনি সবসময় তার দাদা দাদি অথবা নানা নানির কাছে গল্প শুনতে চাইতেনএকসময় তিনি তার বয়সী শিশুদের নিজেই গল্প শুনাতে শুরু করেন এবং আবিষ্কার করেন তিনি গল্প বানাতে পারেনতার বাবা যে শাড়িগুলো তার মা এর জন্য আনতেন তা পত্রিকায় মুড়িয়ে দেওয়া হত সেই পত্রিকাগুলো তিনি সংগ্রহ করতেন পড়তেন৷ একদিন তিনি দেখেন সাদাত হোসাইন নামের এক শিশুর লেখা সেখানে ছাপা হয়েছে৷ তিনিও খুব করে চাইতেন তার নাম ছাপার অক্ষরে দেখতে৷ এরপর তিনি কোনো গল্পের একটি অংশ পড়ে বাকিটা নিজের  মত করে বানাতেন৷ এভাবেই তার গল্প লেখার যাত্রাটা শুরু হয়৷ এই ছোট ছোট ঘটনাগুলোই তাকে একজন গল্পকার বানিয়েছে বলে তিনি মনে করেন৷ 

সাদাত হোসাইনের মতে মানুষ হল নক্ষত্রের মত৷নক্ষত্রগুলোর দূরত্ব অসীমকিন্তু দূর থেকে আমরা মনে করে তারা পাশাপাশিমানুষ ঠিক তেমনিজনসমুদ্রে থাকা মানুষ দিনশেষে নিঃসঙ্গবিষাদের সময় একা কান্না করে মানুষএই অপ্রকাশিত অনুভূতি গুলোই মানুষকে করে তোলে নক্ষত্রের মত একাঅস্পর্শ অনুভূতিগুলোই  মানুষকে করে তোলে একাসাদাত হোসাইন লেখালেখি করেন নিজের ভাবনা পাঠকের চাওয়া মিলিয়েইএকসময় তিনি লেখালেখি করতেন শুধু নিজের ভাবনা থেকে তবে এখন তিনি একজন পুরোদস্তুর লেখকতাই তাকে পাঠকের চাহিদাও মাথায় রাখতে হয়৷। 

লেখক সাদাত হোসাইন ডকুমেন্টারি বা সিনেমাতেও নিজের প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন৷ গহীনের শব্দ তার প্রথম সিনেমাএছাড়াও কিছু ডকুমেন্টারির কাজ করেছেনতার ইচ্ছা নিজের বিখ্যাত চরিত্র রেজা কে নিয়ে সিনেমা বানানোরভাল মানের বিনিয়োগ পেলে তিনি নতুন সিনেমায় কাজ করতে আগ্রহীতার মতে বাংলাদেশের নাটক অনেক সমৃদ্ধতবে বাজেট কম থাকায় নির্মাতারা খুব বেশি চরিত্র নিয়ে কাজ করতে পারেন নাতবে ভাল নির্মাতারা অনেক কাজ করছেন যা সবার মন ছুয়ে যাচ্ছেএর পাশাপাশি সাদাত হোসাইন ওয়েব ফিল্ম এও কাজ করতে চান খাতে তিনি অপার সম্ভাবনা দেখেন৷ তবে চলচ্চিত্র জগৎ নিয়ে তিনি হতাশার কথা ব্যক্ত করেন। 

তিনি যে কাজ করে আনন্দ পান, যে কাজগুলো অন্যের ক্ষতি ডেকে আনে না তিনি সেই কাজ গুলোই করেনতার পছন্দের কাজ গল্প বলা তাই যে কোনো মাধ্যমে সুযোগ পেলে তিনি গল্প বলতে চান তা সে সিনেমা, নাটক, ওয়েব ফিল্ম বা উপন্যাসের মাধ্যমেই হোকতার পছন্দের উপন্যাসগুলোর মধ্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত পুতুল নাচের ইতিকথা, চতুষ্কোন তার প্রিয়এছাড়া সমরেশ মজুমদারের যুগ যুগ জিয়ো তার পছন্দের৷ তিনি শিশির মুখোপাধ্যায়ের অন্ধ ভক্তএছাড়াও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শাহেদুজ্জামান হুমায়ুন আহমেদ তার প্রিয় লেখকএছাড়াও থ্রি কমরেডস তার অন্যতম প্রিয় বইতার প্রিয় সিনেমাগুলোর মধ্যে সাইকো, ভার্টিগো, দা বাইসাইকেল থিফ, নো কান্ট্রি ফর ওল্ড ম্যান ইত্যাদি তার পছন্দের সিনেমাএছাড়াও বাংলাদেশের মাটির ময়না, জয়যাত্রা তার পছন্দের সিনেমাতিনি মোস্তফা সারওয়ার ফারুকির একজন বড় ভক্ত 

লিখেছেনঃ রোমান উদ্দীন

সাংবাদিকতায় অনন্য নামঃ রোকেয়া হায়দার

সাংবাদিকতায় অনন্য নামঃ রোকেয়া হায়দার

ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ) বাংলা বিভাগের প্রধান জনপ্রিয় বেতার-মাল্টিমিডিয়ার নারী সাংবাদিক রোকেয়া হায়দার।বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় রোকেয়া হায়দার নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনি আজ নারী সাংবাদিকতার অহংকার। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি সাহস হারাননি। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে গেছেন। নিজের মেধা, যোগ্যতা ও পেশার প্রতি দায়িত্বশীল ছিলেন বলেই তিনি সফলতা পেয়েছেন। শাড়ি পরে সাংবাদিকতা করা যায়, যার একমাত্র উদাহরণ রোকেয়া হায়দার। তাই আজ তিনি ভয়েস অব আমেরিকার মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের বাংলা বিভাগের প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম বেতারের নিয়মিত অনুষ্ঠান ঘোষিকা হিসাবে জীবন শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তখন থেকেই ঢাকা বেতার ও টিভিতে নিয়মিত খবর পড়তেন।১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভয়েস অব আমেরিকার (ভিওএ) আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন ডিসিতে যান। সেই থেকে পুরাদস্তুর সাংবাদিক বনে যান। ২০১১ সাল থেকে ভিওএ’র বাংলা বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের বাংলা বিভাগে তিনিই প্রথম নারী।৩৭ বছরের পেশাগত দায়িত্ব পালনে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য আমেরিকার সম্মানজনক ‘অল স্টার অ্যাওয়ার্ড’ রোকেয়া হায়দারের ঝুড়িতে এসেছে।

ছেলে বেলা থেকেই কথা বলতে প্রচন্ড ভালবাসতেন রোকেয়া হায়দার। তিনি বেড়ে ওঠেন কলকাতায় এবং সেখানে ছিলেন মাধ্যমিক পর্যন্ত। মাধ্যমিকে পড়ার সময় স্কুলের ক্লাস থেকেই কথা বলার শুরু তার। এরপর কলকাতায় অবস্থানকালীন সময়ে আকাশবাণীতে কবিতা আবৃত্তি করেছেন এবং সেখানেই অনুষ্ঠান ঘোষিকা হিসেবেও কাজ করেছেন। এরপর যখন চট্টগ্রামে চলেন আসেন সে সময় বড় বোনের সাথে চট্টগ্রাম বেতারে যেতে শুরু করেন। চট্টগ্রাম বেতারের তৎকালীন আঞ্চলিক মহাপরিচালক আশরাফুজ্জামানের হাত ধরে সংবাদ পাঠ শুরু করেন৷ এভাবেই শুরু এরপর শুধুই এগিয়ে গেছেন স্বমহিমায়৷

রোকেয়া হায়দার বলেন, প্রতিটি পরিবারের হাল ধরে থাকেন একজন মা। পরিবারে মা বা বোনের উপস্থিতি না থাকলে সে পরিবার অনেকটাই অগোছালো থাকে। বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়ন বা উন্নয়নে অনেকখানি এগিয়েছে এবং অনেক বিধিনিষেধ থাকার পরও বাংলাদেশ এ বিষয়ে অনেক সাফল্য পেয়েছে যা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।  একটা সময় পরিবারের হাল ধরবে ছেলে সন্তান এরকম ধারণা প্রচলিতে থাকলেও এখনকাএ সমাজ বাস্তবতায় ছেলে মেয়ে উভয়েই পরিবারকে নিজেদের সর্বোচ্চটাই দিচ্ছে। পরিবারের মা তার সবটুকুই পরিবারকেই দেন যা সকল সমাজ ব্যবস্থা বা সংস্কৃতির জন্য সত্য।  পাশ্চাত্য সমাজের দিকে তাকালে আমরা দেখি নারীদের বিভিন্ন সময় তাদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে আন্দোলন করতে হয়েছে। ন্যায্য মজুরি বা ভোটের অধিকার অনেক আন্দোলনের পর তারা পেয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের দিকে তাকালে আমরা দেখি সেই স্বাধীনতালগ্ন থেকেই রাজনৈতিক অধিকার পেয়েছেন আমাদের নারীরা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী কিংবা স্পিকার সবাই একজন নারী। নারীর ক্ষমতায়নে অন্য অনেক দেশের চেয়ে আমরা অনেক এগিয়ে আছি।

নারীর যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণ এর বর্বরতা রোধে সবার আগে দরকার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। প্রায় সব সমাজেই দেখা যায় নারীর বিরুদ্ধে হওয়া নানা হয়রানির জন্য নারীকেই দোষারোপ করা হয়, তার পোশাক সম্পর্কে কথা বলা হয়। এছাড়াও ধর্ষণ বা নির্যাতনের শিকার নারীদের বিভিন্নভাবে বিব্রত করা হয়৷ এ সমস্যা দেখে উত্তরণের জন্য পুরুষের মনমানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হনে পাশাপাশি পুরো সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজ এই তিনের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পেশাগত জীবনেও নারীরা অনেক অন্যায়ের শিকার হন। সে ক্ষেত্রগুলোয় তাদের নিজেদের যোগ্যতায় মোকাবিলা করতে হবে এবং এগিয়ে যেতে হবে।

পেশাজীবনের পুরোটা সময়ই তিনি শাড়িপরে দায়িত্ব পালন করেছেন এমনকি ক্রীড়া সাংবাদিকতাও করেছেন এই শাড়িতেই। তবে রোকেয়া হায়দার মনে করেন তার পোশাকের কারণে অনেকখানে সমীহ পেয়েছেন যা তার পেশাগত জীবনে সহায়ক হয়েছে। তিনি তৎকালীন ফিফা সভাপতি সেফ ব্ল্যাটারের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন যা ভয়েস অফ আমেরিকার নিউজরুমে এবং বাংলায় প্রচারিত হয়েছিল। তিনি বিশ্বাস করেন এগিয়ে যেতে হবে৷ যেখানে প্রয়োজন সেখানেই নিজের মত করে অগ্রসর হতে হবে।

স্বামীকে হারান ১৯৭১ এ। তিনি এখনকার সেই সময়টাকে মনে করতে চান না। প্রায় ২০ দিন চট্টগ্রামে একা ছিলেন সন্তানদের নিয়ে। সেখান থেকে পাকিস্তান আর্মির চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি কিভাবে বাবা মার কাছে পৌঁছান তা এখনো তার কাছে অবিশ্বাস্য লাগে। এ কারণে এখনো সেই মুক্তিযুদ্ধের সময়ের দিকে তাকালে তিনি বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। সে সময়টাকে তিনি তার স্মৃতিতে রাখতে চান না।

বাংলাদেশ উন্নয়ন,নারীর ক্ষমতায়ণ বা অর্জনে অনেক দূর এগিয়ে গেছে৷তবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, দুর্নীতি, পরমতসহিষ্ণুতার অভাব এ দেশকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে কলুষিত করছে। এ থেকে উত্তরণে সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করেন তিনি। এছড়াও নতুন প্রজন্ম যারা আগামীর নেতৃত্বে আসবে তাদেরকেও এ ব্যাপারগুলোয় সচেতন থাকতে হবে। পাশাপাশি নারী পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে সবক্ষেত্রে তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে।

রোকেয়া হায়দার তার জীবনে পেশাগত কারণে অনেক বিখ্যাত মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তবে এর মাঝে তার নেওয়া মাদার তেরেসার সাক্ষাৎকারটি তার কাছে চির স্মরণীয়। অনেক চেষ্টার ফসল হিসেবে ১৯৮৭ সালে তিনি মাদার তেরেসার সাক্ষাৎকার নিয়ে সফল হন।

ছেলেবেলা থেকে ক্রিকেটের দারুণ ভক্ত ছিলেন তিনি। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে এসে টেনিস খেলার প্রতি তার আগ্রহ জন্মায়৷ ক্রিকেটারদের মধ্যে সৌরভ গাঙ্গুলী, শচীন টেন্ডুলকার, সাকিব আল হাসান বা মোহাম্মদ আশরাফুল সবাই তার অনেক পছন্দের। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রতি তিনি সবসময় আলাদা একটা টান অনুভব করেন। শৈশবে তার প্রিয় ক্রিকেটার ছিলেন নীল-সবুজ চোখের পাকিস্তানি ক্রিকেটার ফজল মাহমুদ। এই ক্রিকেটারের প্রতি তার বিশেষ একটা আকর্ষণ কাজ করত৷ এভাবেই তার ক্রিকেটের প্রতি ভাল লাগার শুরু এবং এ কারণে পেশাগত জীবনেও অনেক সাফল্যও পেয়েছেন তিনি।

লিখেছেনঃ রোমান উদ্দীন

রাশেদা রওনক খান :  গবেষক, লেখক, উপস্থাপিকা এবং একজন শিক্ষক

রাশেদা রওনক খান :  গবেষক, লেখক, উপস্থাপিকা এবং একজন শিক্ষক

রাশেদা রওনক খান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ তম (নৃবিজ্ঞান) ব্যাচের ছাত্রী। থাকতেন জাহানারা ইমাম হলে। হলের জুনিয়রদের যেমন স্নেহ করতেন তেমনি সিনিয়রদের প্রতি ছিল অগাধ সম্মান। ফলে সহজেই সবার প্রিয় ও আস্থা ভাজন হয়ে উঠেছিলেন অল্প সময়ে। নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিটা পরিক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন তিনি। এছাড়াও ক্লাসমেটদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, বিভাগের বিভিন্ন প্রোগ্রাম আয়োজন ও অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মকান্ড তাঁকে বিভাগের শিক্ষক,শিক্ষার্থীদের মাঝে স্নেহের ও সম্মানের পাত্রে পরিণত করে।রওনক খান ২০০৬ সালে জাবিতে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। বেশ কয়েক বছর জাবিতে পড়িয়ে পরবর্তিতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  নৃবিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন।

রাশেদা রওনক খান এর মা প্রফেসর জোহরা আনিস রত্নগর্ভা পুরষ্কার, রোকেয়া পদক, গুণীজন সম্মাননা সহ অনেক পদক পেয়েছেনতিনি ছিলেন কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের প্রিন্সিপালছেলেবেলা থেকে মায়ের কড়া শাসনে তিনি বড় হয়েছেনখুব ভয়ও পেতেন মা কেতবে এখন তার সবথেকে কাছের বন্ধু তার মা৷ ছোট বেলা থেকেই তিনি তার মা কে দেখেছেন বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকতে, সমাজসেবার কাছে নিয়োজিত থাকতেএরপর ও মা এর কাছে থেকে সর্বোচ্চ সময়ই পেয়েছেন তিনি

শিক্ষার্থীদের স্কুলে আনার ব্যাপারে রাশেদা রওনক খান বলেন, স্কুলে শিক্ষার্থী আনার ব্যাপারে নীতিগত দিকগুলো ঠিক করেছে সরকারতবে শিক্ষার্থীরা ঠিকমত স্কুলে যাচ্ছে কি না কিংবা বিভিন্ন বৃত্তির টাকা তারা ঠিকভাবে পাচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ এ সমস্যাটা মূলত দেখা যাচ্ছে নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুদের ক্ষেত্রেঅর্থনীতির বিকাশের সাথে সাথে  অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডগুলো ব্যাপকতা লাভ করেছে আর এই সেক্টরে প্রাধান্য পাচ্ছে শিশুরাকারণ তাদের অল্প খরচে কাজে লাগানো যায়এতে করে শিশুদের পরিবারে কিছুটা স্বচ্ছলতা আসছে এবং অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু শিশুরা স্কুলমুখী হচ্ছে নাএতে করে শিশুদের সম্পদে পরিণত করা যাচ্ছে নাএ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

ছাত্ররাজনীতি নিয়েও বিস্তর লেখা আছে রাশেদা রওনক খানেরইদানীংকালে ছাত্ররাজনীতিতে বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পরেআদর্শের বাইরে অন্য কি কি কারণে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, রাজনৈতিক মতাদর্শের বাইরে গিয়ে কিভাবে রাজনীতি করছে এবং এর ফলে নিজেকে বিশেষ কিছু মনে করা এই বিষয়গুলো নিয়েই লিখেছেন তিনি

সবকিছু সম্ভবের দেশ বাংলাদেশবাংলাদেশে ইতিবাচক বা নেতিবাচক যেকোনো ঘটনাই ঘটতে পারেধর্ষণ যৌন নির্যাতনের মত বিষয়গুলো নিয়মিতই চোখে পড়েক্ষতিগ্রস্ত নারীদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার, এনজিও, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহ সকলকেই এগিয়ে আসতে হবেরাশেদা রওনক খানের মতে ধর্ষণের কারণগুলোকে সংজ্ঞায়িত করা খুব কঠিন৷পতিতালয় না থাকলে একদিকে যেমন ধর্ষণ বেড়ে যেত বলে মনে করা হয় কারণ এখানে মানুষ তার যৌন লালসা মেটাতে পারে কিন্তু ঠিক অপরদিকে শিশু ধর্ষণ বা মৃতদেহকে ধর্ষণের বিষয়গুলোও সামনে উঠে আসছে৷ 

রাশেদা রওনক খান মনে করেন আমাদের উচিত ছিল নিজেদের সংস্কৃতি আঁকড়ে ধরা, সেটাকে লালন করাকিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের সংস্কৃতিতে পশ্চিমা আগ্রাসন, আরব সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ, ভারতীয় সিনেমাগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়এর ফলে আমাদের সংস্কৃতি পরিণত হয়েছে একটি সংকর বা হাইব্রিড সংস্কৃতিতেবিভিন্ন উৎসব এখনো উদযাপন করা হয় তবে সেই উদযাপনে আগের সেই আবেগ কিংবা সৌহার্দ্য  দেখা যায় নাসাংস্কৃতিক বিভিন্ন ব্যাবহারেও এখন অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছেএতে করে আমাদের সংস্কৃতি পরিবর্তিত হচ্ছেতবে আমাদের উচিত নিজেদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখার চেষ্টা করা। 

টক শো এর মাধ্যমে ভীষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন রাশেদা রওনক খানএক্ষেত্রে তিনি সবসময় মাথায় রেখেছেন, বাংলাদেশে গতানুগতিক  অনেক টক শো হয় তার অনুষ্ঠানটি যেন সেরকম না হয়মন থেকে যা সায় দিয়েছে তিনি তাই করেছেনশুরুতে তার কাছে প্রস্তাব ছিল শুধুমাত্র অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করারতবে তিনি এমন অনুষ্ঠান করেছেন যা তার আদর্শের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যে বিষয়গুলো তিনি নিজের অন্তরে ধারন করেনচ্যানেল আই তে প্রচারিত মুক্তিযুদ্ধের কথা তার করা প্রথম অনুষ্ঠান এবং থেকেই তার শুরুএও অনুষ্ঠান গুলো করার পিছনে তার উউদ্দেশ্য ছিল তরুণদের রাজনীতি সচেতন করে গড়ে তোলার প্রয়াস৷ বাংলাদেশে ধরনের অনুষ্ঠান করতে অনেক বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়তবে তার ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটেনিতিনি পরিপূর্ণ স্বাধীনতা পেয়েছেন। 

মানব পাচারের ভয়াবহতা রোধে তিনি মনে করেন সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণএই সচেতনতা তৈরি জন্য সর্বস্তরে প্রচারণা  প্রয়োজনএছাড়াও সরকারের ভূমিকাও এক্ষেত্রে অনস্বীকার্যযারা এই মানব পাচারের সাথে জড়িত সরকারের উচিত তাদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা। 

নিম্ন আয়ের মানুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানবেতর জীবন যাপন করছে শ্রেণীর মানুষ প্রচুর পরিশ্রম করলেও তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারছে নাতবে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া বা সিস্টেমের মধ্যে ধরনের মানুষকে আনলে তারা যেমন উপকার পাবে তার সাথে সাথে অর্থনীতির পরিবর্তন ঘটবে৷এর সাথে সাথে শ্রমবাজারে থাকা শিশুদের স্কুলে আনার ব্যবস্থা করতে হবে৷ আমাদের বিষয়গুলো নিয়ে বাস্তবিক অর্থেই চিন্তা করতে হবেআলোচনা শুধুমাত্র টক শো বা বিভিন্ন সভা সমাবেশে আবদ্ধ থাকলে চলবে না, অন্তরে ধারণ করতে হবেরাষ্ট্রসহ সকল প্রতিষ্ঠানকে ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যেতাহলেই সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব। 

আমরা সকলেই এই রাষ্ট্র, সমাজ পরিবারের কাছে দায়বদ্ধরাশেদা রওনক খান এই দায়বদ্ধতা থেকেই দেশের জন্য, সমাজের জন্য কিংবা নিজের পরিবারের জন্য কিছু করতে চানতিনি বিশ্বাস করেন তিনি তার এগিয়ে চলার পথে সর্বস্তরের মানুষের কাছে ঋণী এবং এর প্রতিদান দেওয়াটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

লিখেছেনঃ রোমান উদ্দীন

 

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান : আমাদের পরিবেশ আন্দোলনের এক পথিকৃৎ 

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান : আমাদের পরিবেশ আন্দোলনের এক পথিকৃৎ 

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান একজন বাংলাদেশি আইনজীবী পরিবেশকর্মী  গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের “পরিবেশ পুরস্কার” এবং প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে “গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ” অর্জন করেন ২০০৯ সালে তিনি টাইমস সাময়িকীর “হিরোজ অফ এনভায়রনমেন্ট” খেতাব লাভ করেন এছাড়া তিনি ২০১২ সালে রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার পান। তিনি শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে যোগ দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)-তে। বেলা-ও তখন মাত্র যাত্রা শুরু করেছে। এরপর ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে বেলা’র সংগঠক ও প্রধান জনাব মহিউদ্দিন ফারুক মৃত্যুবরণ করলে রিজওয়ানা ‘কমনওয়েলথ বৃত্তি’র সুযোগ হাতছাড়া করে বেলা’র প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব নেন। বেলা’র হাত ধরেই লড়ে চলেন পরিবেশের ক্ষতিসাধনকারী নানা চক্র আর ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। তার লড়াই এখনো চলমান

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এক প্রশ্নের প্রেক্ষিতে রিজওয়ানা হাসান বলেন,  বৈশ্বিক উষ্ণতার দিকে তাকালে দেখা যাবে ২৫ বছর আগে রাষ্ট্রগুলো তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে একটি নির্ধারিত মাত্রায় আটকাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল২০১৫ সালেও প্যারিস চুক্তিতে রাষ্ট্রগুলো বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভেতরে রাখতে  অঙ্গীকারবদ্ধ হয় এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার . ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করবে বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রগুলো কী পরিমাণ গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণ করবে তার একটি রূপরেখা প্রণয়ন করেতবে প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রগুলো আইনগত বাধ্যানুগতা থেকে বেরিয়ে আসে এবং গ্রীন হাউস নিঃসরণ মাত্রা ঐচ্ছিকভাবে নির্ধারণের সুযোগ পায়তবে বর্তমানে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার . ডিগ্রিতে আটকে রাখার লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছে নেই রাষ্ট্রগুলোযদি সকল রাষ্ট্র তাদের প্রতিশ্রুতি শতভাগ পালন করে তবুও এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি . ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে ঠেকবেজাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থাগুলোর ধারণা তাপমাত্রা বৃদ্ধির হাত এই শতাব্দীর শেষে ৭-১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হবেযদি তাপমাত্রা ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে যায় তাহলে ৫২ টি দ্বীপরাষ্ট্র মানচিত্র থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশের তিন ভাগের একভাগ ভূমি সাগরে তলিয়ে যাবেতবে এত বড় ঝুঁকির ব্যাপারে বিশ্ব নেতাদের কোনো গঠনমূলক ভূমিকা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। 

বাংলাদেশের মত দেশগুলো সবথেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হলেও বৈশ্বিক তাপমাত্রা হ্রাস বা গ্রীন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমানো নির্ভর করে উন্নত দেশগুলোর উপরতবে বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়গুলো হল, আমাদের কাছে এখন  পোক্ত বৈজ্ঞানিক ধারণা এবং বিকল্প উন্নয়ন মডেল আছেআমরা জানি উন্নত বিশ্বের উন্নয়ন মডেল প্রকৃতির জন্য ভাল নাআমরা যদি এই চিরাচরিত উন্নয়ন মডেল অনুসরণ করি তাহলে আভ্যন্তরীণ পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়াত সমূহ সম্ভাবনা থাকেকিন্তু দুঃখের বিষয় হল আমরাও সেই পুরোনো প্রকৃতিকে শোষণ করার যে উন্নয়ন মডেল তাই অনুসরণ করছি। 

উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের মত ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোকে অভিযোজনের জন্য টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো দেওয়া হয়নিএরসাথে উন্নত দেশগুলো তাদের কার্বন নির্গমন হার কমাতে এখনো আগ্রহী না৷ এক্ষেত্রে বাংলাদেশের করনীয় সম্পর্কে রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাংলাদেশের উচিত দেশিয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রস্তুতি রাখাএছাড়াও ভারত চীনের সাথে থাকা যৌথ নদীগুলোর পানি বন্টন নিয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসাকারণ ভবিষ্যতে আমাদের দক্ষিণ এশিয়া সুপেয় পানির সংকটে পরবে সমস্যা সমাধান হতে পারে একমাত্রপ্রকৃতির প্রতি দরদী’ উদ্যোগ গ্রহণ করলেবাংলাদেশের জন্য আশংকার বিষয় হল আমরা অভিযোজনে এখনো অনেক পিছিয়ে আছিবায়ু দূষণে আমরা এখন দিল্লীকেও ছাড়িয়ে যাই, নদী দূষণে আমাদের অবস্থান ৫ম, জলাশয় হারানোর দিক থেকে আমরা বিশ্বে প্রথম, আইনের শাসনে ১২৫ টি দেশের মধ্যে ১১৭ তম২০১৮ সালে এনভায়রনমেন্টাল পারফরমেন্স আমাদের অবস্থান ছিল ১৮০ টি দেশের মধ্যে ১৭৯ তম বছর আমাদের অবস্থান ১৬২ তে দাঁড়িয়েছে। 

নিজের এবং তার সংগঠন বেলা’র কাজের প্রতিকূলতা সম্পর্কে রিজওয়ানা হাসান বলেন, নারী হিসেবে তিনি সব সময় সামাজিকভাবে প্রতিকূলতার হনএর কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন সমাজ একজন নারীর নেতৃত্ব এখনো হুমকি হিসেবে দেখেএর পাশাপাশি যাদের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর দখল আছে তারাও নানান প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করেএছাড়াও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ন্যাস্ত স্বার্থগোষ্ঠী সরকারকে আলাদা করা যায় নাক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কাছে থেকে বিভিন্ন সময়ে নানান হুমকির সম্মুখীন হতে হয়এই হুমকিগুলো ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় পর্যন্ত আসে৷ তবে সকল প্রতিকূলতার ক্ষেত্রে গ্রীন পিস বা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো সহায়তা করে থাকেজনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সংগঠনগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখে। 

একজন রিজওয়ানা হাসান এবং বেলা’র সার্থকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, দূষণ প্রতিরোধে সফলতা নির্ভর করে রাষ্ট্রর সামগ্রিক অবস্থার প্রেক্ষিতেতবে তাদের সব থেকে বড় সফলতার জায়গা ইস্যুগুলোকে বাচিঁয়ে রাখার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকাপাশাপাশি আদালতের ইতিবাচক রায়, ক্ষেত্রবিশেষে সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তৎপরতাকে তিনি নিজেদের কাজের স্বার্থকতা হিসেবে দেখেন৷এছাড়াও আইনের শাসনের প্রক্রিয়াগুলো যে এখনো চলমান আছে এটিকেই তিনি নিজেদের সফলতা হিসেবে দেখছেন৷

হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন সম্পর্কে তিনি বলেন, ভবন নির্মাণের সময় বিজিএমইএ ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে, তারা নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই ভবন নির্মাণ করে হাতিরঝিলের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্থ করেছে৷ এছাড়াও ব্রিটিশ আমলের আইন তার ব্যবহার নিয়ে রিজওয়ানা হাসান নিজের অবস্থান জানান৷ তার মতে বাংলাদেশ আইনের সংস্কারে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের থেকে অনেক পিছিয়ে আছেতবে কিছু ক্ষেত্রে আইনের পরিবর্তন আসলেও এসব ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারি নি। 

রিজওয়ানা হাসান সংসদে জলবায়ু ইস্যুর গুরুত্ব কতটুকু সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশের সংসদে জলবায়ু বা পরিবেশ নিয়ে আলোচনা সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে বিবেচিত হয় নাতবে কিছু কিছু সাংসদ বিষয়ে কথা বলছেন এবং পরিবেশ রক্ষায় নিজেদের ভূমিকা রাখছেনকিন্তু শুধুমাত্র পরিবেশকে প্রাধান্য দিয়ে কোনো আলোচনা সংসদে হয় না বা কোনো ধরনের আইন পাশ হয় নাতবে সংসদীয় কমিটিতে কোনো আইন উত্থাপিত হলে পরিবেশ নিয়ে কাজ করছেন এমন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিদের মতামতের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়তবে বেশিভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোনো প্রকার পরামর্শ আমলে নেওয়া হয় না। 

সুন্দরবনের জীবনবৈচিত্র রক্ষা নিয়ে রিজওয়ানা হাসান এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সুন্দরবনকে কোনো বিচ্ছিন্ন একটি বন হিসেবে দেখে এর রক্ষা করা সম্ভব হবে নাকারণ এক্ষেত্রে বনের পারিপার্শিক পরিবেশও প্রভাব ফেলেরামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবেশগত ঝুঁকির আশংকা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা কোনোপ্রকার সুরক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারি নিতিনি আমাদের দখলদারী মনোভাবকেও সুন্দরবনের জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেনসুন্দরবন রক্ষায় ইউনেস্কোর কারিগরি পক্ষ বিভিন্ন সহায়তা প্রদাণ করলেও রাজনৈতিক পক্ষ থেকে কোনোরূপ সহযোগিতা এখনো আসে নি বলে তিনি জানানএছাড়াও জাহাজ ভাঙা শিল্প এবং এরসাথে জড়িত শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে নিজের হতাশার কথা জানান তিনিএই শ্রমিকদের জন্য কোনো প্রকার শ্রম আইন মানা হয় না। 

দেশের জন্য পরিবেশ রক্ষায় কাজ করতে আগ্রহী সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দেশের জন্য কাজ করতে চাইলে যেকোনো অবস্থানে থেকেই তা সম্ভব পাশাপাশি কোনো অবস্থাতেই দেশের সম্মান ক্ষুণ্ণ হতে দেওয়া যাবে নাবাংলাদেশের মানুষ প্রাণান্ত পরিশ্রম করছে উন্নয়নের জন্যএই মানুষগুলোর জন্য, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কিংবা পরিবেশ রক্ষায় সকলে নিজের অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন

লিখেছেনঃ রোমান উদ্দীন

 

মাসুমা খাতুন : বাংলায় প্রচারিত পৃথিবীর প্রথম টেলিভিশন অনুষ্ঠানমালার উপস্থাপিকা

মাসুমা খাতুন : বাংলায় প্রচারিত পৃথিবীর প্রথম টেলিভিশন অনুষ্ঠানমালার উপস্থাপিকা

১৯৬৫ সালের জানুয়ারী থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত, বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা বিভাগ মিলিয়ে ৪৬ বছর দর্শক শ্রোতাদের নিয়ে ছিলেন মাসুমা খাতুন । এটি ছিল তার জীবন ও জীবিকা, পেশা ও নেশা। আর দর্শক শ্রোতারাই ছিলেন তার সকল কাজের অনপ্রেরণা বাংলা ভাষায় প্রচারিত পৃথিবীর প্রথম টেলিভিশন অনুষ্ঠানমালা উপস্থাপন করেছেন আটবছর। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা আন্দোলন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের বিপুল বিজয় এবং অবশেষে জল্লাদ পাক বাহিনীর গণহত্যার মুখে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ ও বিজয়লাভ, পাকিস্তানের কারাগার থেকে স্বাধীন বাংলা দেশের মাটিতে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন, ইন্দিরা গান্ধীর বাংলাদেশ সফর এমনি সব ঐতিহাসিক ঘটনার কথা দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করছেন তিনিটেলিভিশনে তার সবচেয়ে প্রিয় কাজ ছিল বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা, ছোটদের আসর পরিচালনা, ক্যামেরায দর্শকদের চিঠিপত্রের জবাব, বিদেশী শিল্পী ও শিল্পীদলের পরিবেশনা উপস্থাপনা। তাদের নাম সঠিক উচ্চারন করা ছিল মাসুমা খাতুনের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেন্জ।

মাসুমা খাতুনের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬০ সালে ৷ পড়াশোনার বদলে ব্যক্তিগত কিছু কারণে তাকে পেশাজীবনে প্রবেশ করতে হয়৷ তিনি ক্লাস ৮ পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণ করেছেন এবং বেসরকারিভাবে মাধ্যমিক পাশ করেন৷ এইটুকু শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েই তিনি পেশাজীবনে প্রবেশ করেন৷খুব বড় কিছু করার স্বপ্ন থেকে তিনি পেশাজীবনে প্রবেশ করেননি বরং কিছু একটা করার জন্যই তিনি চাকরিতে প্রবেশ করেন৷ পরিবারের সাথে তিনি থাকতেন মতিঝিলে৷ সেখানেই ছিল পি আই এ র অফিস৷ সেখান থেকে চাকরিতে যোগদানের প্রস্তাব পান তিনি ৷ সে লক্ষ্যে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলেও এরপর স্থায়ীভাবে যোগদানের বদলে ইস্তফা দেন৷ এরপর বড় ভাইয়ের পরামর্শে পাকিস্তান পর্যটন এ আবেদন করেন এবং সেখান থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে চাকরির প্রস্তাব পান এবং যোগদান করেন৷ এরপর জীবিকাই হয়ে ওঠে তার জীবন ও শিক্ষার জায়গা তিনি চাকরির সুবাধে পাকিস্তানের ভৌগোলিক পরিবেশ, ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে অনেক পড়ালেখা করেন৷ এর সুবাদে তাকে অফিস থেকে পর্যটকদের সাথে পাকিস্তানের বিভিন্ন দর্শনীয়স্থানে পাঠানো হত৷ তিনি তার এই পেশাজীবনে কোথাও বৈরিতার সম্মুখীন হন নি বরং সবখানে সবার স্নেহ ও সমীহ পেয়েছেনএভাবেই তিনি তার পেশাজীবনে প্রবেশ করেন৷ 

তিনি টেলিভিশনে যোগদান করেন ১৯৬৫ সালেতখন থেকেই দেশের পরিস্থিতি অশান্ত হতে শুরু করেছিলসবকিছুই অনেক সংগ্রামের মাধ্যমে টেলিভিশনে প্রচার করতে হত৷ তিনি সে সময় ১৯৬৫ সালের ভারত – পাকিস্তান যুদ্ধ নিয়ে কাজ করেন টেলিভিশনে৷ ১৯৭০ সালের নির্বাচন সংক্রান্ত অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব ও লাভ করেন এ নির্বাচন নিয়ে তার অভিজ্ঞতাও হয় দারুণতবে শেষ পর্যন্ত এ নির্বাচনই ডেকে আনে অনেকের জীবনের শেষ এবং জন্ম হয় এক নতুন দেশের৷ ২৩ মার্চ ১৯৭১ সালে অনুষ্ঠান প্রচারের সময় পাকিস্তানের পতাকা প্রদর্শন ন্স করায় তিনি চাকরিও হারিয়ে ফেলেন। 

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় তিনি ভয়েস অব আমেরিকায় পরীক্ষা দেন এবং ১৯৭২ সালে তার ডাক আসে৷ ১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে তিনি ভয়েস অব আমেরিকাতে যোগদান করেন তার স্বামীর সাথে মিলে ১৯৯৫ সালে শুরু করেন ‘ বাংলা ভালবাসি’ নামে একটি অনুষ্ঠান যা তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে২০০৭ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠান প্রচারিত হতএটি ছিল তার কাছে সবথেকে আনন্দের কাজ। 

সাংস্কৃতিক বিপ্লব পোশাকের পরিবর্তন নিয়ে মাসুমা খাতুন বলেন, তিনি মনে করেন না সাংস্কৃতিকভাবে আমরা পেছনের দিকে চলে যাচ্ছিএখন পুরো বিশ্ব আমাদের হাতের মুঠোয়নারীরা বিভিন্ন কাজে দূর-দূরান্তে বেরিয়ে পরছেনযার কারণে শাড়িতে প্রতিদিনের কাজ করা সম্ভব হয়ে উঠছে নাতাই পোশাকের পরিবর্তনকে তিনি খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন নাতবে তিনি শালীনতার বিষটিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন এবং বর্তমান দুনিয়ায় পোশাককে তিনি খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। 

বাংলাদেশের বিরাট জনসংখ্যা এবং এখনকার সমাজ বাস্তবতায় মেয়েরা নানান কাজে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেযৌন হয়রানি ধর্ষণের পিছনে তিনি যাতায়াত ব্যবস্থাকে কিছুটা দায়ী মনে করেনএছাড়াও আইন ব্যবস্থায় নিরাপত্তার অভাব, সামাজিক অবক্ষয় এর পেছনে দায়ীএসব রোধে তিঞ্জ মনে করেন নিরাপত্তা সংখ্যা, নারী সংগঠন এবং পুরুষদের এগিয়ে আসতে হবেদোষীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবেএতে ধরনের কাজ কমতে পারে বলে তার অভিমততবে তিনি এসকল অপ্রীতিকর ঘটনার থেকে সামগ্রিক উন্নতিকেই বেশি গুরুত্ব দেন৷ নারী স্বাধীনতা এবিং নারীর স্বনির্ভরতাকেই তিনি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখেনএছাড়াও নারীর বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক বিভিন্ন ঘটনা গুলো যে মেয়েরা সামনে আনছে প্রকাশ করছে বিষয়গুলোকে তিনি ইতিবাচক হিসেবে দেখেন। 

ছেলেবেলা থেকেই প্রচন্ড সাহিত্যানুরাগী মানুষ মাসুমা খাতুননজরুল রবীন্দ্রনাথ তার জীবিনে অনেক বড় প্রভাব রেখেছেনতিনি তাদের কবিতা লেখাগুলো পড়তেন এবং এখনো পড়েনতিনি মনে করেন এই দুইজন না থাকলে তিনি  হয়ত দুদন্ড নিশ্বাস নিতে পারতেন না কিংবা বাঁচতে পারতেন নাতিনি একজন অসাধারণ আবৃত্তি শিল্পীও বটে। 

এম হুমায়ুন কবির : এখন প্রখ্যাত বাংলাদেশি কূটনীতিবিদ

এম হুমায়ুন কবির : এখন প্রখ্যাত বাংলাদেশি কূটনীতিবিদ

এম. হুমায়ুন কবির একজন বাংলাদেশী কূটনীতিক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত।তিনি  ১৯৫২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ুন কবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেছেন।তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন প্রবীণ সৈনিক। তিনি ১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৮০ সাল পর্যন্ত সেখানে অধ্যাপনা করেন। হুমায়ুন কবির ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কবির যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসে দ্বিতীয় এবং তারপর প্রথম সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটে প্রথম সচিব হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে দায়িত্ব পালন করেন।তিনি ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে কাজ করেন। ২০০১ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত, তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকটি নেতৃত্বের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন এবং ২০০৬ সাল পর্যন্ত সেখানে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৬ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার ছিলেন তিনি ২০০৭ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন এবং ২০০৯ সাল পর্যন্ত সেখানে কাজ করেন এবং ২০১০ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সচিব পদে অবসর গ্রহণ করেনতিনি বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এর পাশাপাশি তিনি বাওয়ার গ্রুপ এশিয়ার সিনিয়র উপদেষ্টা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক পুরানো এবং তা অত্যন্ত সুদূরপ্রসারীবাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশে বর্তমানে যে কয়টি ভাল প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলো তৈরিতে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ অনুষদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কিন সহায়তার নজির আছে৷ অর্থাৎ বলা যায় বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জায়গায় বলিষ্ঠ যোগাযোগ আছেপ্রতিবছর ৪ থেকে ৫ হাজার শিক্ষার্থী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর লেখাপড়ার জন্য যায় এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে সাহায্য করে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসিডরের সময় ৮০ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং সে সময় দুর্যোগ মোকাবেলা সংক্রান্ত প্রতিটি কাজে যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করেছেতবে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মিশ্র ফলাফল লক্ষণীয়এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের রপ্তানি সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রতবে শুল্কমুক্ত পণ্যের প্রবেশাধিকার  চাওয়া হলেও যুক্তরাষ্ট্র সে সুবিধা বাংলাদেশকে দেয়নিপাশাপাশি গার্মেন্ট সেক্টরে কিছু সমস্যার কারণে জিএসপি সুবিধাও তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্রএই জিএসপি সুবিধা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার ব্যাপারে অনেক সহায়ক ছিলতবে এরপরও বাণিজ্যে আমরা ভাল করছি এবং প্রতিযোগিতা করে টিকে আছি এছাড়া ২০০৮ সালে বাংলাদেশকে দুই বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যার সাহায্যে আমরা ১৭ টি উড়োজাহাজ কিনেছিলামএছাড়া সামরিক ও নিরাপত্তা খাতেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে অনেক সহায়তা দিয়ে থাকেযুক্তরাষ্ট্র আমাদের জাহাজ দিয়েছে, নিয়মিত নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয় এবং হেলিকপ্টার ক্রয় বিক্রয়ের ব্যাপারেও আলোচনা হচ্ছেপাশাপাশি বাংলাদেশে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে 

কোন প্রকল্পের ঋণ বা সহায়তা দেওয়ার আগে ডাটা গোষ্ঠীগুলো প্রথমে লক্ষ্য রাখে আমরা যে প্রকল্পের জন্য টাকা নিচ্ছি তা জনবান্ধব কিনাএরপর তারা দেখে আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের রূপরেখা এবং সন্তোষজনক মনে হলে প্রাথমিকভাবে তারা আমাদের ঋণদানের জন্য আগ্রহী হয়এরপর আরেকটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখে যে দায়বদ্ধতা ও সত্যতা বজায় রাখা যাবে কিনাএ বিষয়টি ঋণ দানের ক্ষেত্রে দাতা গোষ্ঠীর নিকট অনেক গুরুত্বপূর্ণ। 

প্রত্যেকটি দেশের পররাষ্ট্রনীতি শুরু হয় দেশ থেকেইদেশের বাস্তবতা মাথায় রেখে এই বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করা হয়ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ সাথে আমাদের যোগাযোগ বেশি এবং এজন্য উভয় দেশের বৈদেশিক নীতির সকল বিষয় আমরা স্পষ্ট ভাবে অনুধাবন করতে পারিআমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত আমাদের সহায়তা করেছে এবং সেজন্য ভারতের সাথে আমাদের একটি বিশেষ ভাবাবেগের জায়গা আছেতবে জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে ভাবাবেগের থেকে যুক্তি বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেভারত তাদের দেশের স্বার্থ সমুন্নত রাখার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিকতবে ভাবাবেগ এবং ভৌগোলিক বিভিন্ন কারণে ভারতের কাছে থেকে আমাদের চাওয়া বেশিভারতের সাথে সাথে সার্কভুক্ত অন্য দেশগুলো উন্নতি করতে পারলে তা ভারতের জন্য ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবেএজন্য ভারতের উচিত নিজেদের প্রয়োজনেই সহায়তার ক্ষেত্র বৃদ্ধি করা। 

প্রযুক্তিগত উন্নতি বা ডিজিটালাইজেশনে আমাদের অনেক অগ্রগতি হয়েছে তবে এই ডিজিটালাইজেশন বা প্রযুক্তিগত উন্নতির প্রভাব সমাজে পড়েপ্রযুক্তি খাতে তরুণ প্রজন্ম আগ্রহী হলেও আগের প্রজন্ম খুব একটা আগ্রহী হয় নাডিজিটালাইজেশন এর ফলে যাদের জ্ঞান বেশি তারাই প্রভাব বিস্তার করেপাশাপাশি স্বল্প শিক্ষিত জনগোষ্ঠী পিছিয়ে পড়েতাই ডিজিটালাইজেশনের সাথে সাথে যথাযথ জ্ঞানের দরকারডিজিটালাইজেশনের প্রভাবগুলোর ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ভূমিকা না নিলে বৈষম্য বাড়বে আর এর সাথে সাথে দুর্নীতিও বাড়বে 

বাংলাদেশের মানুষ অসাধ্য সাধন করতে পারে৷ ঠিক এ কারণেই ১৯৭১ সালের সময়কার ধ্বংসস্তূপ থেকে আমরা উঠে আসতে পেরেছিএখন শহর আর গ্রামের মাঝে তেমন কোন পার্থক্য আর নেইস্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের পরিণত হওয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছিতবে এ কারণে কিছু কিছু প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবেস্বল্পোন্নত দেশগুলো যে ধরনের সুবিধা পায় সে ধরনের সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত হবএতে করে বিশ্ববাজারে আমাদের প্রতিযোগিতা আরো বাড়বে।। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি করতে হবেশিক্ষা, কৌশল শ্রমিক স্বার্থে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। 

বিভিন্ন দেশে আটকে পড়া বা বিপদগ্রস্ত মানুষদের সহায়তায় কূটনৈতিকভাবে আমাদের আরো সক্রিয় হওয়া প্রয়োজনযাদের কাছে ক্ষমতা আছে তাদের অবশ্যই বিদেশে বিপদগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা করা উচিতকারণ দেশের বাইরে গেলে আমরা সবাই অসহায় হয়ে পড়িএজন্য সক্রিয়, মানবিক সংবেদনশীল হতে হবে কূটনৈতিকভাবে সে পরিবেশ আনতে কাজ করতে হবে সবাইকে একসাথে। 

লিখেছেনঃ রোমান উদ্দিন