হুমায়ুন রশিদ : বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তিত্ব

হুমায়ুন রশিদ : বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তিত্ব

সাপ্লাইচেইন এর সমস্যায় জর্জরিত সারাবিশ্বই; উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তা আরও প্রকট। এ সমস্যা সমাধানে প্রায় ৪০ বছর ধরে কাজ করে চলেছেন জনাব হুমায়ুন রশিদ এনার্জিপ্যাক এর পরিচালক হুমায়ুন রশিদ  জড়িত রয়েছেন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এফবিসিসিআই এ এবং ফ্রান্স চেম্বার অব কমার্সের পরামর্শদাতা হিসেবে। বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাঁকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে কমার্শিয়ালি ইমপরটেন্ট পারসন হিসেবে

নিজের প্রতিষ্ঠান এনার্জি প্যাক সম্পর্কে এর পরিচালক হুমায়ুন রশিদ বলেন তাদের মূল মন্ত্র হল,’ pack the energy for the future generation.’ একটি চৈনিক জনশ্রুতি আছে যে প্রতিটি ব্যবসা নির্ভর করে সংখ্যাগত মানের উপর। এনার্জি প্যাকের জন্য এই মান হল ৬ যা নির্দেশ করে পদার্থ ও খনিজ সংক্রান্ত ব্যবসা। এনার্জি প্যাক এর মূল কাজ ও এটি নিয়েই। তিনি ও এনামুল হক চৌধুরি যিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিলে প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেন৷ প্রতিষ্ঠানটি এখন শক্তির উৎপাদন, পরিবহন ও পরিচালনা, যন্ত্রপাতি ও সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করে। তবে তাদের গার্মেন্টস সেক্টরেও বিনিয়োগ আছে৷ তারা এখন বিশ্বে সব থেকে বড় স্যুট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান । তাদের প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১০ হাজার কর্মী নিয়োজিত যার মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই নারী।

 পুরো বিশ্বেই এখন জ্বালানির সংকট চলমানযুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপেও জ্বালানির মূল্য বাড়ছে এবং সাথে সাথে প্রাপ্যতার সংকটেও পরছে দেশগুলোবৈশ্বিক যে সরবরাহের ধারা তার কারণে আমাদের বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে তবে আমাদেরকে এখনো সংকটের মুখোমুখি হতে হয় নি৷ চলমান ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ অনেক বড় প্রভাব ফেলছে এনার্জি সেক্টরেএনার্জি প্যাক বর্তমানে টি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করছেযার ভেতর দুইটি ফার্নেস ওয়েল পরিচালিত এবং অপরটি প্রাকৃতিক গ্যাস দ্বারা পরিচালিতঠাকুরগাঁও চট্টগ্রামে অবস্থিত দুটি ফার্নেস ওয়েল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যথাক্রমে ১১৮ মেগা ওয়াট ১০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে এবং হবিগঞ্জে অবস্থিত একমাত্র  প্রাকৃতিক গ্যাস চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে ১১.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ  উৎপাদন হচ্ছেএই বিদ্যুৎ তারা জাতীয় গ্রিডে বিক্রি করছে৷ তবে সামগ্রিকভাবে উৎপাদন কমার বিষয় নিয়ে হুমায়ুন রশিদ বলেন, জ্বালানির মূল্য বাড়ায় সরকারকে অনেক ডিজেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করতে হচ্ছে যার প্রভাব পড়ছে উৎপাদনে। 

জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বলেন, তারা নিয়ে সেমিনার করেছেন থেকে উত্তরণের উপায় কি কি হতে পারে তা নিয়ে এবং পাশাপাশি সরকারকে পরামর্শ দিতেতারা প্রথমত দক্ষতা বা কার্যক্ষমতা বাড়ানোর ব্যাপারে বলেছেনএর সাথে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্য দিয়েছেনএছাড়া জ্বালানি নিরাপত্তাকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলেছেন৷ শক্তির যোগানের পাশাপাশি ভর্তুকি থেকেও বেরিয়ে আসতে সরকারকে তারা পরামর্শ দেন। 

বাংলাদেশের পার ক্যাপিটা কার্বন নির্গমন হার প্রতিবেশি প্রায় সব দেশের থেকেই কমপরিবেশ দূষণের দিক দিয়ে ভারত চীনের মত দেশগুলো অনেক এগিয়ে আছেতবে বৈশ্বিক জ্বালানি ঘাটতি দেশগুলোকে আরো এদিকে নিয়ে যাচ্ছে কারণে বাংলাদেশে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে ঝুঁকে পরছে৷ এছাড়াও বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ আসছেআর দূষণ কমাতে এখন অনেক আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছেতবে সরকারের বিভিন্নখাতে সামঞ্জস্য না থাকায় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। 

এনার্জি প্যাক নিয়ে হুমায়ুন রশিদ আরো বলেন, এটিই বাংলাদেশের প্রথম কোম্পানি যারা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী লাইট ফ্যান বাজারে এনেছে৷ এছাড়াও তার সৌরশক্তি নিয়ে কাজ করে৷নিজেদের অফিসেও এই ধারা তারা অব্যাহত রেখেছে তারা এজন্য যে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে তা জ্বালানি সাশ্রয়ে বিশেষভাবে তৈরি 

এলপিজি নিয়ে তিনি বলেন বাংলাদেশেও এলপিজির ব্যবহার বাড়ছেমানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে, বিনিয়োগ আসছে সাথে সাথে এর সরবরাহ বাড়ছেকিন্তু খাতে এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমানযার মধ্যে অবকাঠামোগত এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আছেতবে এর উৎপাদনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়পুরো প্রক্রিয়াটি ডিটিও ৪ স্ট্যান্ডার্ড মেনে চালানো হয়। 

ব্যবসার পাশাপাশি এনার্জি প্যাক সামাজিক দায়িত্বের দিকটিও এড়িয়ে যায় নাদক্ষিণাঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম দা কোপে তারা মিঠা পানির ব্যবস্থা করছেন বছর ধরে৷ মাটির প্রায় ১২০০ ফুট থেকে তারা পানি উত্তোলন করেনএছাড়াও প্রতি শনিবার তারা নদীর প্লাস্টিক সংগ্রহ করেন কাজের জন্য তারা পুরষ্কার পেয়েছেন৷এছাড়া গাজীপরে তারা একটি স্কুলে তাদের ব্যবহার করা ল্যাপটপ ডেস্কটপ সরবরাহ করেনশীতকালে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন তারাএছাড়া প্রতিবছর ৩০০ জন ইলেকট্রিশিয়ানকে তারা নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। 

হুমায়ুন রশিদের ইচ্ছা তিনি আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে অবসর নিবেন এবং একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করবেনযেখানে মাধ্যমিকে যারা পাশ করতে পারবে না তাদের ভর্তি করাবেন এবং বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলবেনকাজের পাশাপাশি সংগীতের ভক্ত তিনি সাথে সাথে কবিতাও পড়েন৷ তার পূর্বপুরুষের বাড়ি ছিল শান্তি নিকেতনের কাছেতিনি মনে করেন নিজের দায়িত্ব সবাই ঠিকভাবে পালন করলে তবেই তা পুরো বিশ্বের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। 

এক আশাবাদী শিক্ষাবিদঃ সাইফুর রহমান

এক আশাবাদী শিক্ষাবিদঃ সাইফুর রহমান

সাইফুর রহমান একজন বাংলাদেশী-আমেরিকান তড়িৎ প্রকৌশলী তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন এরপর স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক থেকে ১৯৭৫ সালে মাস্টার্স এবং ভার্জিনিয়া টেক থেকে ১৯৭৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৭৯ সালে অগাস্ট পর্যন্ত টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটি এর সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৭৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভার্জিনিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সহকারী অধ্যাপক হিসেব যোগদান করেন। ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বরে সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৯৮৭ সালের সেপ্টেম্বরে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। তিনি ১৯৯৪ সালের জানুয়ারিতে সেন্টার ফর এনার্জি অ্যান্ড দ্য গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইনস্টিটিউট। তিনি ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৯৯ সালের সেপ্তেম্বর পর্যন্ত ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের ইলেক্ট্রিকাল অ্যান্ড কমিনিকেশন সিস্টেমস ডিভিশনের কর্মসূচী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

. সাইফুর রহমানের জন্ম ঢাকার এলিফেন্ট রোড বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাই তিনি নিজের চোখে দেখেছেন যার মধ্যে ছিল ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান, ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ বা একাত্তরে আমাদের মুক্তির সংগ্রাম তিনি সাত মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সময় রেসকোর্স ময়দানে ছিলেন, ছিলেন ষোল ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের সময়এর মাঝে ২৬ মার্চ সকালে দেখেছেন লাশের মিছিলসেদিন পড়ে গিয়েছিলেন পাকিস্তান বাহিনীর রাইফেলের সামনেও১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন ছিলেন সেই জনযাত্রায়। 

পূর্বতন শিক্ষাব্যবস্থার সাথে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার পার্থক্য হিসেবে ড. সাইফুর রহমান দেখেন শিক্ষার্থীদের ফোকাস বা লক্ষ্যে৷ একসময় শিক্ষার মূল লক্ষ্য ছিল জ্ঞান অর্জন করা আর কালের ফেরে তা এখন হয়ে গেছে ফলাফল নির্ভরএখন সবাই শুধু ফলাফলের পেছনে ছোটে জ্ঞান হয়ে পড়েছে গৌণ৷ তিনি তার নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বুয়েটের শিক্ষার মান নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ দেখেন না তবে শিক্ষা গ্রহণ শেষে তারা কি করছে এটি একটি বড় প্রশ্ন৷ উপরের সারির শিক্ষার্থীদের ভাল করা নিয়ে কোনো প্রশ্ন না থাকলেও মাঝের সারির শিক্ষার্থীরা কি করছে এটি একটি ভাবনার বিষয়৷ তবে আইটি সেক্টরের উন্নতিতে এখন অর্থ উপার্জনের একটি উপায় হয়েছে বলে মনে করেন তিনিতিনি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে ভারতের উদাহরণ টেনে বলেন সেখানে প্রতিবছর অনেক প্রকৌশলী বের হলেও চাকরির সুযোগ পায় নাকারণ তারা ঠিকভাবে শিখে আসে নাএজন্য তিনি জ্ঞান অর্জনে গুরুত্বারোপ করেন

তড়িতাহত হয়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর অনেক মানুষ প্রাণ হারানবজ্রপাতে এখন অহরহ মৃত্যুর ঘটনা শোনা যায়এর কারণ হল বৃক্ষ নিধনকারণ বিদ্যুৎ সবসময় উঁচু স্থানে আঘাত করেগাছ পালা নিধনের ফলে এখন মানুষ হয়ে পড়েছে পুরোপুরি অরক্ষিতএছাড়াও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবে বা মানুষের অসচেতনতায় বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও অনেক দেখা যায় থেকে উত্তরণের জন্য সচেতনতা শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। 

বাংলাদেশ প্রযুক্তিখাতে এগিয়েছে তবে পুরোপুরি সেই স্রোতের সাথে তাল মেলাতে পারছে নাএর কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, প্রতিটি দেশেই অবকাঠামো প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ কোনো খাতে উন্নতির জন্য৷ যুক্তরাষ্ট্রে আইটি সেক্টরের উন্নতির পেছনে সেখানের পরিবেশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণএই পরিবেশের কারণে কোনো খাত অগ্রসর হয়৷ এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে মেধার একটা সম্মেলন দেখা যার কারণে অন্য অনেকেই কাজ করতে আগ্রহী হয়৷ এই ক্রমাগত ধারাই তাদের আরো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেপ্রযুক্তিখাতে উন্নয়নের জন্য সরকারের উচিত একটা পরিবেশ তৈরি করা যেখানে এই খাত এগিয়ে যাওয়ার মত সব উপাদান পাবে৷ এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার দক্ষিণ কোরিয়ার মডেল অনুসরণ করতে পারে। 

বাংলাদেশে বিভিন্ন সেক্টর যেমন কয়লা, গ্যাস, নিউক্লিয়ার এনার্জি, সোলার পাওয়ার,উইন্ড পাওয়ার ইত্যাদি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে বা উৎপাদনের প্রক্রিয়া চলছেতবে এই সেক্টর গুলোর ব্যবস্থাপনাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণস্মার্ট গ্রিড দিয়ে যা খুব সহজেই করা সম্ভব৷ যেমন, আকাশে মেঘ থাকলে সোলার প্যানেল বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে নাতবে এখানে স্টোরেজ ব্যাটারি যুক্ত থাকলে তা কিছুক্ষণের জন্য হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে পারবে৷ তবে বাংলাদেশে স্মার্ট গ্রিড এর পুরোপুরি বাস্তবায়ন সময় সাপেক্ষ ব্যাপারকারণ এজন্য কোথায় কাজ শুরু হবে, কোন পর্যায়ে বেসরকারি সংস্থাগুলো যুক্ত হবে, কোথায় সামর্থ্য আছে বা নতুন করে প্রয়োজন তা নির্ণয় করা জরুরীএছাড়াও এই সিস্টেম চালু রাখা বা এরজন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ বিনিয়োগের ধারাবাহিকতাও গুরুত্বপূর্ণ। 

স্মার্ট গ্রিডের বাস্তবায়ন সম্ভব হলে তা ব্ল্যাক আউট রোধেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম বলে মনে করেন তিনিব্ল্যাক আউটের কারণ হিসেবে আভ্যন্তরীণ সিস্টেম নেটওয়ার্ক এর সমস্যা দায়ীতবে স্মার্ট গ্রিডের মাধ্যমে চলমান সময়েই সমস্যাগুলো বের করা সম্ভব এবং যে স্থানে সমস্যা তা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ব্ল্যাক আউটের সম্ভাবনা কমানো যায়এই বিষয়টিতে স্মার্ট গ্রিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷

ব্যক্তিজীবনে অনেক বিখ্যাত মানুষের সান্নিধ্যে তিনি এসেছিলেনতিনি বিশ্বাস করেন সফল হতে সবার একজন আদর্শ দরকার৷ তিনি ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তার দাদার কাছেতিনি মনে করেন সফলতার পেছনে অনেক ধাপ রয়েছেসবার একটি লক্ষ্য ঠিক করে তার জন্য পরিশ্রম করা গুরুত্বপূর্ণপরিশ্রমের ধাপ পেরোলেই কেবল সফলতা ধরা দেয়তবে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন। 

অবসর সময়ে কবিতা পড়তে ভালবাসেন তিনিনটরডেম কলেজে পড়ার সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঞ্চয়িতা বইটি কিনেছিলেনএখনো বইটি তার নিত্যসঙ্গীকাজের ফাকে তিনি এখনো কবিতা পড়েনএকসময় তারাশঙ্কর, শরৎচন্দ্র ও হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস পড়তেন নিয়মিততবে কাজের কারণে এখন আর উপন্যাস পড়া হয় না তারতার স্বপ্ন সম্পর্কে বলেন, বিপদগ্রস্ত কেউ তার মাঝে বা তাকে দেখে নতুন পথের দিশা বা আশার আলো খুঁজে পেলেই তিনি নিজেকে সার্থক মনে করবেনতিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, ‘ keep the hope alive ‘ এই মন্ত্রে। 

লিখেছেনঃ রোমান উদ্দিন

আদর্শ ও মুক্তচিন্তার পথিক: কামাল হোসেন

আদর্শ ও মুক্তচিন্তার পথিক: কামাল হোসেন

কামাল হোসেন  বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট আইনজীবী, রাজনীতিবিদ এবং মুক্তিযোদ্ধাসচরাচর তাকে “ডঃ কামাল হোসেন” হিসাবে উল্লেখ করা হয়। তিনি বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাদের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭২-এর ৮ই জানুয়ারি জাতির পিতার সাথে তিনিও কারাগার থেকে মুক্তি পান এবং জাতির পিতার সাথেই ১০ জানুয়ারি  লন্ডন হয়ে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি সর্বদাই সোচ্চার। তিনি ব্যক্তিগত সততা, ন্যায্যতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রবক্তা হিসাবে বিশেষভাবে সম্মানিত ১৯৭০ সালের পাকিস্থানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।১৯৭২ সালে আইনমন্ত্রী এবং ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ড. কামাল হোসেন জাতিসংঘের স্পেশাল রিপোর্টারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন । আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যও ছিলেন কামাল হোসেন। ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে ১৯৯৩ সালে গঠন করেন গণফোরাম। তিনি গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণফোরাম  প্রসঙ্গে ড.কামাল হোসেনের অভিমত হল, এটি মানুষের জন্য সুযোগযারা সুযোগ কাজে লাগাতে চায় তারা এগিয়ে আসবে এবং সুস্থ রাজনীতির সাথে জড়িত সকলেই এগিয়ে আসবে এবং গণফোরাম তাদের জন্য মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে৷ গণতন্ত্রের সংকটময় সময়ে সবথেকে বেশি জরুরি  গণমানুষের ঐক্য এবং সুস্থ রাজনৈতিক মূল্যবোধ যার মাধ্যমেই কেবল সুস্থ রাজনীতিকে লালন করা সম্ভবআর এই অবস্থা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হলেই শুধুমাত্র বর্তমান অবস্থার গুণগত উন্নতি সম্ভব৷এক্ষেত্রে সবথেকে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে রাজনৈতিক সহাবস্থান , ঐক্য এবং ইচ্ছাশক্তি। 

নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জনগণকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাবি জানাতে হবেআর এর মাধ্যমেই তৈরি হবে সুন্দর একটু পরিবেশ যেখানে অবাধ, নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে৷তবে এক্ষেত্রে দলগুলোর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণযদিও দলগুলোর আলাদা এজেন্ডা থাকে তবুও জনগণের স্বার্থে তাদের নিজেদেরও মৌলিক বিষয়গুলোতে ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে হবে৷ 

সংবিধান রচনায় কোনো পরিবর্তন সম্পর্কে কামাল হোসেন বলেন, বিষয়ে সবার আগে জনগণের মতামত প্রয়োজন  তারা যদি মনে করে কোনো পরিবর্তন প্রয়োজন সেক্ষেত্রে জনমত যাচাই বাছাই এর মাধ্যমে বিশেষজ্ঞদের মত একত্রিত করে সংবিধানের পরিবর্তন আসতে পারে৷ 

সমাজতন্ত্রের মূল চেতনার সাথে সমসাময়িক সমাজতন্ত্রের ব্যবধান এখনকার বিশ্বাস কার্যকলাপেযারা সত্যিকারের সমাজতন্ত্র সাম্যে বিশ্বাস করে তাদের সাথে বৈষম্য লালনকারী গোষ্ঠীর মৌলিক চেতনাতেই বিস্তর ফারাক লক্ষ্যনীয়আর বর্তমানে এটাই দেখা যাচ্ছে। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অনেক কাছে থেকে দেখেছেন . কামাল হোসেনবঙ্গবন্ধু সবসময় ভাবতেন জনগণ কি চিন্তা করে এবং তাদের চাহিদা সম্পর্কেতিনি বিষয়গুলোই সবসময় তুলে ধরতেন এবং এর উপর ভিত্তি করেই বৃহৎ ঐক্য গড়ে তুলতেনযারা কারণে সবাই সুসংহত হতে পারত৷ এই ঐক্যের রাজনীতির কারণেই বঙ্গবন্ধু নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন৷ তিনি মানুষকে বিশ্বাস করেঝুঁকি নিতেনতিনি সবাইকে খুব সহজেই নিজের আপনজন করে নিতে পারতেনবঙ্গবন্ধুর কাছে সবাই বিশেষ গুরুত্ব পেতেনতিনি সবার চাহিদার কথা শুনতেন তাদের সাথে আলোচনা করতেনএই সবার সাথে সম্পর্ক গড়ার সফলতাই শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৈরি করেছেতিনি ছিলেন একজন অনন্যসাধারণ মানুষ যিনি সবার চাওয়া পাওয়াকে গুরুত্ব দিতেনতিনি ছিলেন জনগণের একজন। 

বঙ্গবন্ধু অসাধারণ  বৈশিষ্ট্যগুলোই  দলমত নির্বিশেষে  সবার কাছে ‘আমার নেতা’ হিসেবে পরিচয় করায়বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব, বক্তব্য এবং সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষমতার কারণে তিনি দলীয় গন্ডি থেকে বেরিয়ে একজন জাতির পিতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেবর্তমানে নেতৃত্বে এই জিনিসের ঘাটতি আছে বলে মনে করেন . কামাল হোসেন। 

তবে আমাদের উচিত আশাবাদী হওয়াকারণ জাতীয় ঐক্যের কথা বঙ্গবন্ধু সবসময় বলেছেন এবং জাতি হিসেবে আমরা সংকটের সময় ঐক্যবদ্ধ হতে পারি যার বহু ইতিহাস রয়েছে৷ এর ভিত্তিতেই বঙ্গবন্ধু নির্বাচন আদায় করেছেনতবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে দলীয় বিভাজনের কারণে ধরণের ঐক্য কঠিনকিছু দল তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেআর সুস্থ, দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতির জন্য দরকার জনগণের ঐক্য তাদের একীভূতকরণ। 

. কামাল হোসেন লেখাপড়া করেন সেন্ট জেভিয়ার্স হাইস্কুলেসেখানকার পরিবেশ, বন্ধুত্ব, ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নীতির কারণে অনেক কিছুই অর্জন করতে পেরেছেন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পেরেছেনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে নীতিগত ঐক্যমত থাকলে অনেক কিছুই অর্জন সম্ভবযারা বিভক্তিতে বিশ্বাস করে এবং এর মাধ্যমে অর্জন করতে চায় তাদের ব্যাপারে সকলের সচেতন থাকা উচিত বলে তিনি মনে করেন৷ 

রাজনীতি সবথেকে বড় সফলতা হিসেবে কামাল হোসেন দেখেন আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের সফলতাকেতবে রাজনীতিতে অনেক বিষয়ে ব্যর্থতাও দেখেছেনরাজনীতিকে অবাধ দুর্নীতি সাম্প্রদায়িকতা থেকে যে মুক্ত করা সম্ভব হয়নি এটিকে তিনি বড় ব্যর্থতা হিসেবেই দেখেন। 

. কামাল হোসেনের বিশ্বাস, ভবিষ্যতে সকলেই সুস্থ রাজনীতি আদর্শকে কেন্দ্র করে একীভূত হবেসংঘাতবিহীন বহুদলীয় গণতন্ত্র থাকবেসংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী দল ক্ষমতায় থাকবে এবং একদলীয় শাসন থাকবে না।  তিনি মনে করেন ১৯৭০ আমরা এমন সাফল্য অর্জন করতে পেরেছিতবে এরপর থেকে বহুবার আমরা একদলীয় গণতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হয়েছি ব্যাপারে সচেতনতা একান্ত কাম্যতিনি আরো মনে করেন, অতীতের রাজনীতি এবং সুস্থ রাজনৈতিক ধারা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে কিভাবে বোঝানো হচ্ছে এটা গুরুত্বপূর্ণ

দুর্নীতি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একটি সামাজিক রোগএর নিরাময়ে সরকারকে কোনো বলিষ্ঠ ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি।  দুর্নীতিকে তারা নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগায় এবং সমর্থন করে এতে করে দুর্নীতি আরো ব্যাপক আকার ধারণ করে৷ এর নিরসনে সুস্থ রাজনীতির ভূমিকা অপরিসীম। 

. কামাল হোসেন আইনের প্রশিক্ষণ নিতেন হুসেন শহীন সোহরাওয়ার্দীর কাছেসেখানেই বঙ্গবন্ধুর সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে এবং পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর প্রচুর সান্নিধ্যও তিনি লাভ করেনতিনি বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেক প্রশ্ন করতেন. কামালের সাথে শেরে বাংলার দেখা হলেও ঘনিষ্ঠতা ছিল না। 

. কামাল বলিষ্ঠ নতুন প্রজন্ম তৈরি করতে চানতবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সঠিক দিক নির্দেশনা গ্রহণের মত অবস্থায় নতুন প্রজন্ম নেই বলেই তার ধারণা৷ তবে তিনি চে্ষ্টা চালিয়ে যেতে চান৷নতুন প্রজন্মকে তিনি উচিত কথা বলার, ঐক্যবদ্ধ থাকার, মানুষের জন্য কাজ করার এবং সর্বক্ষেত্রে উচিত অনুচিত সম্পর্কে অবগত থাকার উপদেশ দেনতিনি  আশা করেন সবাই সুস্থধারায় সৎ সাহস নিয়ে দেশের জন্য কাজ করবে। 

চিন্ময় মুৎসুদ্দি : সাংবাদিকতা জগতের এক দিকপাল 

চিন্ময় মুৎসুদ্দি : সাংবাদিকতা জগতের এক দিকপাল 

মৃদুভাষী, নিভৃতচারী এক সাংবাদিক চিন্ময় মুৎসুদ্দি। আমার সাংবাদিকতা বিষয়ক অন্যতম শিক্ষক। ১৯৭২ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রা’য় সাংবাদিকতা শুরু করেন এবং ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত যুক্ত ছিলেন সাপ্তাহিক বিচিত্রা এবং পাক্ষিক আনন্দ বিচিত্রা’র সঙ্গে। বাংলাদেশে “ফটো সুন্দরী” বিষয়টির অন্যতম কারিগর চিন্ময় মুৎসুদ্দি। চিন্ময় মুৎসুদ্দির সাংবাদিক পরিচয় ছাড়াও তিনি একজন লেখক। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সামাজিক অঙ্গিকার, অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, সংস্কৃতি সাংবাদিকতার স্বরূপ, সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন প্রকাশনার কৌশল, সমকালীন গণমাধ্যম: স্বাধীনতা দ্বায়িত্ব কর্পোরেট পুঁজি ইত্যাদি। এর পাশাপাশি অনুন্নত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে তিনি কাজ করে চলেছেন নিরলসভাবে।

চিন্ময় মুৎসুদ্দির সাংবাদিকতায় আসা এক ধরনের রোমান্টিসিজম থেকেএকটা সময় তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত হন এবং পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোয় নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেনসে অনুষ্ঠান সম্পর্কে ঢাকা চট্টগ্রামের পত্রিকাগুলোয় লেখা ছাপা হতঅনেক সময় লেখকের নাম ছাপা হতএই প্রেরণা থেকেই চট্টগ্রামে আজাদী পত্রিকায় অনুষ্ঠানগুলো নিয়ে লেখা শুরু করেনএভাবে একসময় খেলার রিপোর্টিং শুরু করেনসেখানকার সম্পাদকের সাথে কিছুটা মনোমালিন্য হওয়ার পর চিন্তা করেন ঢাকার পত্রিকাগুলোয় লেখা শুরু করার এরপর তার লেখা গুলো একইভাবে সংবাদ, আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকাগুলোয় ছাপা হতে থেকেচট্টগ্রামে লেখার জন্য কোনো পারিশ্রমিক না পেলেও দৈনিক পাকিস্তান থেকে পারিশ্রমিক পেতে শুরু করেনসাপ্তাহিক হলি ডে তে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন নিয়ে একটি লেখা পাঠান এবং তা বড় করে তার নাম সহ ছাপা হয় থেকে তিনি নতুন উদ্যম অনুপ্রেরণা পান

কলেজের শিক্ষকের সাথে কিছুটা সমস্যা হওয়ায় চট্টগ্রাম ছেড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে আসেন এবং সেখানে কলেজ শেষ করেনএরপর চলে আসেন ঢাকায়ঢাকায় আসার পর বন্ধুদের সাথে যাতায়াত শুরু করেন দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকার অফিসেএকসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হনএরপর একসময় কাজ শুরু করেন চিত্রিতা পত্রিকায় ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর গণ বাংলা, জনপদ বিচিত্রার সাথে যুক্ত হন১৯৭৩ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৯৭ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি একটানা বিচিত্রার সাথে কাজ করেনস্বাধীনতার আগে বিচিত্রা ছিল মাসিক পত্রিকা যা রম্য চরিত্রগুলো নিয়ে কাজ করতকিন্তু স্বাধীনতার পরে প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন আসে ফজল শাহাবুদ্দীন আবারো সম্পাদকের দায়িত্ব নেনবিচিত্রার সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য শাহাদাৎ চৌধুরীকে প্রস্তাব দেন, তিনিও রাজি হনএবারো শুরুটা হয় রম্য চরিত্র দিয়েইতবে বিচিত্রার প্রধান দিক হল এটি বাংলা ভাষায় প্রথম নিউজ ম্যাগাজিন যাকে এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাগাজিন জনপ্রিয়তা বা মানে ছাড়িয়ে যেতে পারে নিবিচিত্রা দুটো বড় অবদান রাখে যার প্রথমটি হল এই ম্যাগাজিনের মাধ্যমে বাংলার তাঁত শিল্প নতুন জীবন পায়এছাড়াও ফটো সুন্দরী প্রতিযোগিতা শুরু করে এই বিচিত্রা ম্যাগাজিনযার মূল ভাবনার অনেকটা অংশ জুড়েই ছিলেন চিন্ময় মুৎসুদ্দিবিচিত্রা ম্যাগাজিনই প্রথম বৃহৎ আকারে ইদ সংখ্যা করার  প্রবণতাটা শুরু করে ১৯৭৫ সালেকভারে ছিল শম্পা রেজা, রেহনুমা আহমেদ, শামীমা পারভীন দিতা শশফিউল্লাহদের মত তারকাদের ছবিম্যাগাজিনের ভেতরে ইদ বাজার নিয়ে লিখতেন চিন্ময় মুৎসুদ্দিবাজার পরিস্থিতি দেখে  শাহাদাৎ চৌধুরী স্থানীয় পণ্য গুলো এগিয়ে নেবার চিন্তা শুরু করেনতা থেকেই শুরু হয় দেশিয় কাপড়ের মাধ্যমে উঠে আসার প্রতিযোগিতা। 

সাংবাদিকতা জীবনে অনেকের কাছে থেকে শিখেছেন এবং আত্মবিশ্বাস পেয়েছেন চিন্ময় মুৎসুদ্দিফজল শাহাবুদ্দীন তাকে বিভিন্ন সময় আত্নবিশ্বাস যুগিয়েছেন, আহমেদ হুমায়ুন বিভিন্ন সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেনতার বিভাগে লেখার সুযোগ করে দিয়েছেনশাহাদাৎ চৌধুরী নানা সময়ে প্রশংসার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস সাহস যুগিয়েছেনএছাড়াও হেদায়েত হোসেন মোর্শেদ ফয়েজ আহমেদের গুণমুগ্ধ তিনিফয়েজ আহমেদ ছিলেন একজন রঙিন চরিত্রসাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন সাহিত্যিক এছাড়াও নীতির ব্যাপারে তিনি ছিলেন অটল

বর্তমান সাংবাদিকতা প্রসঙ্গে চিন্ময় মুৎসুদ্দি বলেন, অনেক প্রকার প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হয়েছেঅবয়বগত সুবিধা বেড়েছেছাপানোর দিক থেকেও অনেক পরিবর্তন এসেছেএটাকেই তিনি প্রযুক্তিগত বা অবয়বগত পরিবর্তন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেনতবে এর পাশাপাশি লেখার বিষয়বস্তু বা কনটেন্টগত তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো অধঃপতন লক্ষ্য করা যাচ্ছেএর কারণ হিসেবে তিনি দেখেন, মালিকরা যেভাবে মিডিয়াগুলো দখল করে নিচ্ছে এবং পেশাগত সাংবাদিকদের অবস্থান আর সেভাবে নেই এখনমালিকরা সবসময় মুনাফার খোঁজে থাকছেনএর পাশাপাশি গ্রুপ  ব্যবসা থেকে আশা মালিকরা মিডিয়াকে অন্য ব্যবসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেযার ফলে কনটেন্ট এর গুণগত উন্নয়ন এর বদলে অধঃপতন হচ্ছে। 

পুনর্জন্ম হলে তিনি মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চানতিনি স্মরণ করেন কাঙাল হরিনাথকেযিনি ঊনিশ শতক বিংশ শতকের শুরুর দিকে কুষ্টিয়াতে পত্রিকা বের করতেনযেখানে তিনি লিখতেন প্রজাদের উপর ইংরেজদের অত্যাচার নিয়েবিভিন্ন সময় অত্যাচারীদের পরিচয় প্রকাশ করতেননিজের জমি বিক্রি করে তিনি এই পত্রিকা চালাতেন৷ চলার পথে তিনি এভাবেই অনেকের কাছে থেকে অনুপ্রেরণা পানভাসানীর সাথে তিনি একসাথে উত্তরবঙ্গের গ্রামগুলোয় ঘুরেছেন এবং অনুপ্রেরণা খুঁজেছেন৷ বাবা মা এর কাছে থেকেও পেয়েছেন অনুপ্রেরণাএখন স্ত্রী কন্যার কাছে থেকেও অনুপ্রেরণা পান তিনিএখন পুরোদমে সাংবাদিকতা না করলেও তিনি পরামর্শ দেন এবং কিছু লেখালেখি করেন। 

গ্লোবাল হিরো অব দি এনভায়রনমেন্টঃ অধ্যাপক ড. আবুল হুসসাম

গ্লোবাল হিরো অব দি এনভায়রনমেন্টঃ অধ্যাপক ড. আবুল হুসসাম

প্রতিবছর বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন ‘গ্লোবাল হিরো অব দি এনভায়রনমেন্ট’ অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করে। ২০০৭ সালের ২৫ অক্টোবর সেই হিরোদের তালিকায় উঠে আসে বাংলাদেশের এক বিজ্ঞানীর নাম। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল হুসসাম। ভূগর্ভস্থ আর্সেনিকযুক্ত পানি পরিশোধন যন্ত্র ‘সনো ফিল্টার’ আবিষ্কারের জন্য ‘গ্লোবাল হিরো অব দি এনভায়রনমেন্ট’ অ্যাওয়ার্ড পান বাংলাদেশের এই বিজ্ঞানী।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ সালে তিনি রসায়নে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৬ সালে স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৮৬ সালে পেনসিলভানিয়ার ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ থেকে অর্জন করেন পিএইচডি ডিগ্রি। ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার রসায়ন বিভাগ থেকে পোস্ট ডক্টরাল ট্রেনিং সম্পন্ন করেন তিনি। ১৯৮৫ সাল থেকে কাজ করছেন জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন ও প্রাণরসায়ন বিভাগে। তিনি সেখানকার অধ্যাপক। এ ছাড়া তিনি রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ড. হুসসাম এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও গ্র্যাজুয়েট লেভেলে পড়ান কোয়ান্টিটেটিভ কেমিক্যাল অ্যানালাইসিস, ইনস্ট্রুমেন্টাল অ্যানালাইসিস, ইলেকট্রো-অ্যানালাইটিক্যাল কেমিস্ট্রি এবং থিওরি অব অ্যানালাইটিক্যাল প্রসেস বিষয়ে।

আর্সেনিক সনো ফিল্টার আবিষ্কার এর গবেষণা প্রক্রিয়া শুরু হয় পরিমাপের মাধ্যমে যেহেতু বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষই পান করার জন্য ভূগর্ভস্থ  পানির উপর নির্ভর করে এবং সেই পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে এর প্রেক্ষিতে আর্সেনিকের পরিমাণ নির্ণয়ের মাধ্যমে গবেষণা প্রক্রিয়া শুরু হয়এর পরের ধাপে এই ভূগর্ভস্থ আর্সেনিক কিভাবে দূর করা যায় তা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়আর্সেনিক শোধনের সহজ উপায় হিসেবে এমন একটি পদার্থ খুঁজে বের করতে তিনি উদ্যোগী হন যা এই আর্সেনিককে শোষণ করবেএর প্রেক্ষিতে তিনি লৌহ বা আয়রন ভিত্তিক পদার্থ আবিষ্কার করেন যা আর্সেনিককে শোষণ করতে সক্ষমএর উপস্থিতিতে ভূগর্ভস্থ পানি ফিল্টার করলে তা হবে আর্সেনিক মুক্তএটি  ‘ Composite Iron Matrix ‘ নামে পরিচিতএই পদার্থের উপর ভিত্তি করেন আবুল হুসসাম আর্সেনিক সনো ফিল্টার আবিষ্কারে সফলতা পান। 

গবেষণার শুরুতে আবুল হুসসামের লক্ষ্য ছিল ভূগর্ভস্থ পানি থেকে আর্সেনিক দূরীকরণের মাধ্যমে তা পানযোগ্য করে তোলাসে লক্ষ্যেই তার আবিষ্কারএখন পর্যন্ত ৪০০০ এর বেশি ফিল্টার চালু রয়েছেএগুলোর মেয়াদ ১৫ বছরের মত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি যে সকল অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ বেশি সেখানে এই ফিল্টার ব্যবহার করে বিষাক্ত পানিকে পানযোগ্য করে তোলা হচ্ছে এবং মানুষ তা পান করছেতবে এর সফলতা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পোক্ত পরিসংখ্যান পাওয়া যায় নিতবে বিজ্ঞানী আবুল হুসসাম এতটুকু নিশ্চিত করতে পেরেছেন যে আর্সেনিক বিষের ফলে উদ্ভূত রোগের বিস্তার আর হবে না। 

এসিড রেইন সম্পর্কে আবুল হুসসাম বলেন, যে সকল অঞ্চল বিশেষত শিলকারখানা সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোতে যেখানে কয়লার ব্যবহার অতিমাত্রায় হয় সেখানে এই এসিড রেইন এর প্রকোপ দেখা যায়কয়লার ধোঁয়ায় থাকে সালফার ডাই অক্সাইডএটি যখন পানির সাথে বিক্রিয়া করে তখন উৎপন্ন করে সালফিউরিক এসিডবৃষ্টির পানির সাথে এটি যখন ভূপৃষ্ঠে পতিত হয় তখনই এই বৃষ্টিকে এসিড রেইন বলা হয়৷ তবে বাংলাদেশে এই এসিড রেইনের প্রকোপ লক্ষ্য করা যায়নি কারণ বাংলাদেশে এ ধরণের কোনো শিল্প কারখানা নেইশিল্প বিপ্লবের সময় এবং এই শিল্প বিপ্লবের কারণেই এসিড রেইনের উদ্ভব হয়েছিলএসিড রেইনের কারণে পানির পি এইচ ফ্যাক্টর অর্থাৎ পানির অম্লতার পরিমাণ বেড়ে যায়পানির এই  অম্লত্ব বৃদ্ধি পাওয়া প্রাণীজগতের জন্য ক্ষতিকরতবে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনের ফলে এই এসিড রেইনের প্রকোপ কমতে শুরু করেছেএখন দেশগুলো বা শিল্পগোষ্ঠী গুলোইপিএ গাইডলাইনমেনে চলে যা আশেপাশের জলাশয়ের পানির পিএইচ এর পরিমাণ নির্ণয় করে বলে সে অঞ্চলে এসিড রেইনের উপস্থিতি আছে কি না। 

আবুল হুসসাম একসময় বিজ্ঞান সাময়িকীতে বাংলায় লিখতেনতবে এখন আর বাংলার লেখালেখি হয়ে ওঠে নাতবে তিনি সবসময় বাংলার বিজ্ঞান চর্চায় ইচ্ছুক এবং গবেষণাতে তিনি এখন ভীষণ মনযোগীতিনি ব্যক্তিজীবনে একজন সাহিত্য অনুরাগী মানুষতবে এখনো গল্প কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি আবুল হুসসামেরব্যক্তিজীবনে আবুল হুসসাম বিয়ে করছেন নিজের পছন্দের মানুষকেই তবে পারিবারিকভাবেই৷ আবুল হুসসামের স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন৷ 

নিজের বেড়ে ওঠা বিজ্ঞানী হওয়ার পিছনের তিনি সবথেকে বড় কৃতিত্ব দেখেন তার বাবা মা এরআবুল হুসসামের বিজ্ঞানী হওয়া বা পড়াশোনা করার কারণ হিসেবে তিনি তার পিতার কথা উল্লেখ করেনবাম ঘরানার রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন আবুল হুসসামের পিতাতার পিতার চিন্তা ধারা তার ছোট ভাইয়ের অর্থনীতি পড়ার কারণ বলেও জানান তিনিআব্দুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দীনের লেখা বিজ্ঞান বিষয়ক বইগুলো থেকে ছোট ছোট পরীক্ষাগুলো হাতে কলমে করে সন্তানদের দেখাতেন তিনি।  এই পরীক্ষাগুলো না বাড়ির পরিবেশ আবুল হুসসামের বিজ্ঞানী হওয়ার পিছনে বড় ভূমিকা রেখেছে৷ তিনি রসায়ন পড়তে উদ্বুদ্ধ হন নিজের পিতার পেশার কারণে। 

আবুল হুসসামের স্কুল জীবনের শিক্ষক ফজলুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর গিয়াসউদ্দিন আহমেদ আমির হোসেনকে আদর্শ মনে করেন তিনিএই মানুষগুলোর থেকে তিনি শুরু থেকেই প্রভাবিত ছিলেন৷ তিনি মনে করেন কাদের সান্নিধ্যে কাজ করছেন এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ

নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আবুল হুসসাম বলেন, নিজের পেশার প্রতি প্যাশন থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণযে কাজ করতে হবে তা প্রথমে ভালো করে শেখা উচিত৷ তাহলে প্রাথমিকভাবে অর্থ না থাকলেও কাজে আনন্দ পাওয়া যাবে, ভাল করে কাজটা শেখা যাবে৷নতুন নতুন কাজ সম্পর্কে জানতে হবে এবং শিখতে হবে নিজের উদ্যোগেনিজের উদ্যোগ বা ইচ্ছা না থাকলে সাফল্য পাওয়া সম্ভব হবে না৷তিনি বলেন, কোনো কাজ নিবিড়ভাবে দশ বছর করলে সেই ধারায় বিখ্যাত হওতা সম্ভব

কুষ্টিয়ার মানুষ হলেও আবুল হুসসামের উপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা লালন ফকির কারোই প্রভাব নেইছেলে বেলায় তিনি বহুবার লালনের দর্গায় গেছেন৷ ছেলে বেলায় বাড়িতে কোনো অতিথি এলেই তিনি তাদের শিলাইদহ কুঠি বাড়ি এবং মোহিনী মিল ঘুরিয়ে নিয়ে আসতেন৷ তিনি প্রচুর সাহিত্যকর্ম অধ্যয়ন করেনররবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বইগুলো তার বিশেষ পছন্দের৷ একসময় সংগীত এর তালিম নিয়েছেন এবং নিজেও শিখেছেন। 

তিনি সবসময় বিশ্বাস করেন সাহিত্য বিজ্ঞান বাংলায় চর্চা করা উচিত১৯৭৩ সালে বিখ্যাত বিজ্ঞানী সত্যেন বোস নিজের লেখা চিঠিতে বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার কথা বলেছেন বিষয়ে আলোকপাত করে তিনি বিজ্ঞান সাময়িকীতে চিঠিও পাঠিয়েছিলেনএর কারণ হিসেবে আবুল হুসসাম মনে করেন, বিজ্ঞান শেখা জানার বিষয় এবং তা নিজের মায়ের ভাষাতেই সবথেকে বেশি সম্ভব

 

সামিউল ইসলাম পোলাক ও স্বপ্নীল সজীব: হাজার বছরের সংস্কৃতিতে তারুণ্যের প্রতিনিধিত্ব

সামিউল ইসলাম পোলাক ও স্বপ্নীল সজীব: হাজার বছরের সংস্কৃতিতে তারুণ্যের প্রতিনিধিত্ব

সামিউল ইসলাম পোলাক বাংলাদেশের একজন তরুণ জনপ্রিয় বাচিকশিল্পী। দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁর অনবদ্য স্বর দিয়ে তিনি শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে বাস্তবতাকে ছাড়িয়ে গেছেন এবং কবিতা আবৃত্তিকে একটি ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। রবীন্দ্র কাব্যে আবৃত্তিতে তার অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বাংলাদেশে এবং এর বাইরেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা, সম্মান এবং খ্যাতি অর্জন করেছেন। শান্তিনিকেতনে পরমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পোলাক সম্পূর্ণ মহিমায় রবি ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি আয়ত্ত করেছেন। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে তাঁর সূক্ষ্মতা এবং বাগ্মীতা তাকে বহু প্রশংসা পদক এনে দিয়েছে যার মধ্যে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের স্বর্ণপদক প্রাপ্তি তাঁর সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতার প্রতীক হিসাবে দাঁড়িয়েছে। পোলাক কাব্যকে বিশ্বব্যাপী দর্শকদের কাছে উপস্থাপন করার জন্য বিশ্বের নানা প্রান্তে ভ্রমণ করেছ এবং বাংলাদেশের জন্য গর্ব ও সম্মান বয়ে এনেছেনবাংলাদেশ থেকে জাতীয় স্বর্ণপদকের পাশাপাশি, তিনি “দ্য বেঙ্গল’স প্রাইড অ্যাওয়ার্ড”, “মিনার্ভা রবীন্দ্র পদক”, “কবি নজরুল পদক ২০২২”-এও সম্মানিত হন। অপরদিকে স্বপ্নীল সজীব তরুণ প্রজন্মের শিল্পী হিসেবে শ্রোতাদের কাছে এরই মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন। মাত্র ৫ বছর বয়সে মঞ্চে তাঁর গান গাওয়া শুরু। তাঁর খালা, উচ্চাঙ্গ সংগীতশিল্পী লুত্ফর নাহার লতার কাছে তাঁর গানের হাতেখড়ি হয়। এরপর ছায়ানটে রবীন্দ্রসংগীতে কোর্স করেছে, তালিম নিয়েছেন বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কাছে। লোকসংগীত গেয়ে ১৯৯৮ ও ২০০০ সালে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। ২০১১ ও ২০১৩ সালে রবীন্দ্র সম্মেলনে প্রথম স্থান অর্জন করেন। ২০১২ সালে ‘চ্যানেল আই নব গান নব প্রাণ’ প্রতিযোগিতায় টপ ফাইনালিস্ট হয়েছিলেন। ওই বছরই প্রকাশ পায় তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘টেগোর ট্রেজারি’ এবং কলকাতা থেকে দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ভাঙা-গড়ায় রবীন্দ্রনাথ’। এছাড়া স্বপ্নীল সজীব বাংলাদেশ-ইন্টারন্যাশনাল ফেম অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ অনুষ্ঠানে ২০২১ সালের শ্রেষ্ঠ সংগীতশিল্পী হিসেবে সম্মাননা গ্রহণ করেন।

সজীব জানান সঙ্গীতের জগতে এমন পথচলার জন্য তাকে নানা সময় নানা সংগ্রাম করতে হয়েছে এবং করে যেতে হচ্ছে। কখনো পরিবারের সাথে, কখনো সমাজের সাথে, এমনকি কখনো নিজের সাথেই নানা যুদ্ধ করতে হয়েছে। বর্তমান প্রজন্ম রবীন্দ্র, নজরুল এবং পঞ্চকবিদের গান নিয়ে খুবই কম আগ্রহ বোধ করে। এই প্রজন্মের কাছে এ ধরনের গান পৌঁছে দেয়ার তাড়না থেকেই তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতের সাধনায় নিজেকে নিবেদন করেছেন। তিনি জানান, এখনো নানা সময় নানা ধরনের বিড়ম্বননায় পরতে হয়। অনুষ্ঠান করতে গিয়ে হয়তো নিজের মতো করে গাওয়ার সুযোগ পাননা, আয়োজকরা সেই কিছু ধরাবাধা গান করতে বলেন, কিংবা এমন প্রত্যাশা রাখেন যা তাঁর ব্যক্তিত্ব ও চর্চার পরিপন্থী। এর সাথে যোগ হয়েছে করোনা মহামারী, এই সব কিছু মিলিয়েই অনেক বাঁধার মুখোমুখি হয়েই তিনি নিজের সাধনা চালিয়ে যাচ্ছেন। আশা করছেন, এখন সবকিছু কাটিয়ে যে ধারায় আবার সবকিছু শুরু হয়েছে, তা বজায় রাখলে সামনে আরও ভালো ফলাফল আসবে। পোলাক বলেন, নিজের যাত্রাপথে তাকে খুব বেশি বাঁধার সম্মূখীন হতে হয়নি। ছোটবেলায় আবৃত্তি শুরু করার পর পড়াশোনা এবং অন্যান্য কাজের ভীড়ে একসময় এই চর্চা হারিয়ে যেতে বসেছিল। তারপর আবার শুরু করে আজকের এই অবস্থানে আসা। সে জন্যেই অনেকসময় পোলাক নিজেকে দুর্ঘটনাবশত হওয়া শিল্পী হিসেবে পরিচয় দেন। সে ব্যাপারে আবার আপত্তি জানিয়ে সজীব বলেন, পোলাক নিজের প্রতিভা এবং দীর্ঘসময়ের চেষ্টার ফলেই এক অসাধারাণ শিল্পী হয়ে উঠেছেন। এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং সাধনার ফসল। 

বাচিকশিল্পী হিসেবে পোলাক রবীন্দ্রনাথের বাইরে আর কিছু কেন আবৃত্তি করতে চান না, এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, যুগের তালে গা ভাসিয়ে দেয়া খুবই সহজ। কিন্তু কাউকে না কাউকে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির ধারক হয়ে তা বয়ে নিয়ে যেতে হবে। এছাড়া, রবীন্দ্রনাথের কথা, শব্দ, মানুষের মাঝে নতুন বোধ সৃষ্টি করে, তাদেরকে আলোকিত করে। তিনি চান, তাঁর শ্রোতারা যাতে রবীন্দ্রনাথের বাণীর মাধ্যমেই আত্মোপলব্ধির সুযোগ পান। এখানে আরেকটি বড় ব্যাপার হচ্ছে, মানুষ কোন সাহিত্যের মাঝে নিজেকে খুঁজে পায় তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পোলাক আধুনিক যুগের সাহিত্যের চাইতে, চরিত্রগুলোর চাইতে, রবীন্দ্র সাহিত্যেই নিজেকে বেশি করে খুঁজে পান। বর্তমানে দাঁড়িয়েও অতীতের সেই সময়ের মাঝে তিনি নিজেকে আরও প্রবলভাবে আবিষ্কার করেন। এভাবে নিজের চর্চার মধ্যে, পঠনের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাওয়া তাঁর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সজীবও গলা মিলিয়ে বলেন, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁরও এক আত্মিক যোগ রয়েছে। তবে মজা ব্যাপার হল, তিনি দুবার জাতীয় পুরষ্কার কিন্তু পেয়েছেন লোকগীতিতেএছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্টিভালে তিনি সত্তর হাজার দর্শকের মাঝেও ফোক গান গেয়েছেন। কিন্তু দর্শকের কাছে, আপনজনদের কাছে, তাঁর রবীন্দ্রসঙ্গীতের বরাবরই আলাদা কদর রয়েছে। সজীব বলেন, তিনি কিছু ভালো গান করে যেতে চান যা মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে, তাঁর নিজের প্রজন্মের শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করবে। এখানে রবীন্দ্রনাথের পাশাপাশি অন্য কবিদের কথাও তিনি নিজের কন্ঠে ফুটিয়ে তুলতে চান। এর বাইরে তিনি নিজের মৌলিক সৃষ্টির দিকেও এখন মনোযোগ দিতে চান এবং সর্বোপরি নিজের কাজের মাধ্যমে বাংলা ভাষাটাকে আরেকটু সমৃদ্ধ করে যেতে চান।

সামিউল ইসলাম পোলাক এবং স্বপ্নীল সজীব ব্যক্তিগতভাবে খুবই কাছের দুজন মানুষ। তাদের মাঝে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধে অনুপ্রাণিত এক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সবসময় বিরাজমান। সজীব জানান, এক দশকের বেশি সময় ধরে দুজন একসাথে থেকেছেন। পোলাক বড় ভাই এবং শিক্ষকের মতো তাকে সবসময় দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন, কোথায় গিয়ে কীভাবে কথা বলতে হবে, কী ধরনের ব্যবহার করতে হবে তা ধরে ধরে শিখিয়েছেন। পোলাক নিজেও বলেন, সজীব বয়সে অনেক ছোট হলেও গায়ক স্বপ্নীল সজীবের প্রতি তাঁর আগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে। তাঁর গানের যে ব্যপ্তি, যে পরিধি এবং শুধু উপমহাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী সে যে জায়গা অর্জন করেছে, তা নিদারুণ গর্বের ব্যাপার। ঠাট্টাচ্ছলে নিজেকে একটু অলস, একটু ঢিমেতালের দাবী করে পোলাক বলেন, স্বপ্নীল সজীব থাকলে যেকোনো কাজে তিনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। সজীব সমস্ত কাজ সহজেই সামলে নিয়ে পোলাককে নিস্তার দিতে পারেন।

এই দুই অত্যন্ত প্রতিভাবান শিল্পী শিল্পচর্চার পাশাপাশি নানা মানবতামূলক কাজেও নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। স্বপ্নীল সজীব “স্বপ্নীল ফাউন্ডেশন” নামে নিজস্ব একটি সংগঠনের মাধ্যমে পথশিশু, সুবিধাবঞ্চিত এবং বস্তির শিশুদের গান শেখানোর কাজ করেন। পিছিয়ে পড়া শিশুদের বাংলাদেশের সাথে, এদেশের সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে অত্যন্ত ছোট পরিসরে কাজ শুরু করে বর্তমানে এই সংগঠন প্রায় পাঁচ বছর ধরে এটি কাজ করে যাচ্ছে। এদেশের দীর্ঘ সময়ের সংস্কৃতির একটি বড় বৈশিষ্ট্য হল এর অসাম্প্রদায়িক সহাবস্থান। কিন্তু বর্তমানে সাম্প্রদায়িকতার একটি সুর নানা অপকর্মে এবং অপচেষ্টায় ফুটে উঠছে। পোলাক বলেন, সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষের সহাবস্থান এদেশের সবসময়ের ঐতিহ্য। এখানে এত ভেদাভেদ কখনো ছিল না। বরং আমরা যদি দেশ, দশ এবং দলের ঊর্ধ্বে গিয়ে ভাবতে পারি তাহলে দেখবো আমরা সবাই এক বিশাল পৃথিবীর সমান অংশ। এই ঘটনাগুলো ধর্মীয় না যতটা, তার চেয়ে বেশি দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার। সজীব যোগ করেন, মানুষের মাঝে এই একাত্মতার বোধ সৃষ্টি করার জন্যেই সংস্কৃতির চর্চা দরকার। সংস্কৃতির মাধ্যমেই মানুষের মাঝে উদারতা জন্ম নেয়, ভালোবাসা জন্ম নেয়। তাঁরা যখন বড় হয়েছেন, তখন এক সুস্থ সংস্কৃতির মধ্যে বড় হয়েছেন বলেই কখনো কোনো সংকীর্ণতা তাদের মাঝে জন্ম নেয়নি। বরং সকল ধর্মের মানুষের সাথে একাত্ম হয়ে সকল উৎসব উপভোগ করেছেন। এমনকি তাঁরা যে রবীন্দ্রনাথের কবিতা চর্চা করেন কিংবা যে সুর এবং রাগে সঙ্গীতচর্চা করেন, সবই তো তথাকথিত হিন্দুস্থানি সংস্কৃতির অংশ। শুধুমাত্র নিজেদের ঐতিহ্যগত মুক্তচিন্তা আছে বলেই তাঁরা এসব ধ্যান ধারনা ত্যাগ করে সকল আয়োজনে এবং উদযাপনে প্রাণ খুলে শরিক হতে পারেন। তিনি আরও বলেন, একটি নির্দিষ্ট চক্রই সকল দেশে এধরনের সাম্প্রদায়িক অপকর্ম ঘটিয়ে থাকে। আমাদের উচিৎ আধুনিক মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করে তোলা। এই দেশ আমাদের সবার রক্তের দামে অর্জন করা। তাই সব ভেদাভেদ দূর করেই দেশের জন্য কাজ করতে হবে। পোলাক বলেন, এ ধরনের সহনশীলতা শিক্ষা পরিবার থেকেই আসে। সব মানুষই এক সময় অন্ধকারে থাকে, তার উত্তরণের জন্য তাকে শিক্ষা দিতে হয়, জ্ঞান দিতে হয়, সংস্কৃতির সংস্পর্শে আনতে হয়। তখনই একজন মানুষের চিন্তার ক্ষুদ্রতা দূর করা সম্ভব।

শান্তিনিকেতনের অভিজ্ঞতা নিয়ে সজীব বলেন, সেখানকার শুধু শিক্ষক নয়, প্রকৃতিও শিক্ষা দেয়। বিশেষ করে একজন বাংলাদেশী শিল্পী হিসেবে তাঁর জন্যে রবীন্দ্রচর্চার এই অভিজ্ঞতা খুবই গর্বের। কারণ রবীন্দ্রনাথকে আমাদের অর্জন করে নিতে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের আগে যেখানে রবীন্দ্রচর্চা নিষিদ্ধ ছিল, সেখানে আমারা স্বাধীনতার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চার অধিকারকেও ছিনিয়ে এনেছি। এছাড়া তিনি আরও যোগ করেন, আমাদের দেশে হয়ত শান্তিনিকেতনের মতো প্রতিষ্ঠান নেই, কিন্তু তবুও আমরা নিজেদের জায়গা থেকে শুদ্ধভাবে রবীন্দ্রচর্চা করে যাচ্ছি। যেখানে পশ্চিমবঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সুর নিয়ে, গানের দৃশ্যায়ন নিয়ে এমন অনেক নিরীক্ষা হচ্ছে যা হয়ত রবীন্দ্রনাথের ভাবধারার সঙ্গে বেমানান। সেখানে আমরা এদেশে বেশ পরিশীলিতভাবে রবিন্দ্রচর্চার ধারাটি বজায় রাখছি। আর শান্তিনিকেতন এবং রবীন্দ্রভারতী সজীবের জন্য বরাবরই একটি তীর্থস্থানের মতো, যেখান থেকে তিনি অনেক কিছু শিখে আসতে পারেন, যেখানকার নির্যাসে অনুপ্রাণিত হতে পারেন। পোলাকও নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রনাথের নিজের হাতে তৈরি করা জায়গা। তাই এর মাহাত্ম্য অসীম এবং এর কার্যক্রম, আচরণ সবকিছুতেই বারবার রবীন্দ্রনাথ প্রতিফলিত হন। রবীন্দ্রনাথের প্রকৃতিপ্রেমকে অনুসরণ করেই এখানে শ্রেণিকক্ষের বাইরের শিক্ষাকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। কুষ্টিয়া কিংবা শাহজাদপুরের কুঠিবাড়িতে গেলেও এমনই প্রকৃতির সান্নিধ্য উপলব্ধি করা যায়। শান্তিনিকেতনে বসেই যেহেতু উনার প্রকৃতির অনেক নিখুঁত বর্ণনাগুলোর সৃষ্টি, সে জন্যেই রবীন্দ্রনাথকে চিনতে হলে, তাঁর প্রকৃতিপ্রেমকে উপলব্ধি করতে হলে তাঁর তৈরি করা সেই আশ্রমেই যেতে হবে। সজীব বলেন, ওখানকার সংস্কৃতি একটা মানুষকে কতটা সহজ পথে চলতে হবে এই শিক্ষাটা দেয়। সেজন্যেই সেখানকার শিক্ষা, ভালোবাসার জন্য তাঁরা আজীবন নিজেদের ভাগ্যবান মনে করবেন।

মানুষ প্রতিনিয়ত নতুন নতুন স্বপ্ন দেখে, নতুন কিছু অর্জন করতে চায়। জীবনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জনের পরও আরো অনেক অধরা ইচ্ছা কাম্য রয়ে যায়। পোলাক জানান, তাঁর প্রপিতামহ অখন্ড ভারতে তাফসীলসহ সমগ্র কোরআন শরীফ অনুবাদ করেছিলেন। বর্তমানে এটি ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকেও প্রকাশিত হয়। তিনি তাঁর প্রপিতামহের এই কাজগুলোকে নিজের কন্ঠে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করতে চান। নিজেদের পূর্বপুরুষের উত্তরাধিকারকে এই কাজের মাধ্যমে তিনি সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। আর এর বাইরে তাঁর আজীবনের স্বপ্ন হল সবসময় সুখী থাকা। অবসাদ, বিষাদের মতো সব নিরানন্দ অনুভূতিকে পাশে সরিয়ে সবসময় আনন্দে থাকাই তাঁর জীবনের লক্ষ্য। সজীব বলেন, তিনি স্বপ্ন দেখেন, তিনি একদল ভালো মানুষ তৈরি করবেন। তিনি যে শিশুদের নিয়ে কাজ করেন তাদেরকে তিনি আলোর পথ দেখাতে চান। তাঁর আজন্ম লালিত স্বপ্ন, এসব নিগৃহীত, অবহেলিত এসব শিশুদেরকে তিনি আলোকিত করতে চান। উপমহাদেশের বাইরে, বৃহত্তর বিশ্বের কাছে বাংলা গানকে পৌঁছে দেয়া তাঁর আরেকটি বড় স্বপ্ন। হলিউড বা এমন অনেক বড় মঞ্চে তিনি ভিন্ন ভাষাভাষীদের কাছে বাংলা গান তথা বাংলাদেশকে উপস্থাপন করতে চান। সেই লক্ষ্য নিয়েই তিনি নিজের মতো করে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এই বাংলা গান দিয়েই স্বপ্নীল সজীব স্মরণীয় হয়ে থাকতে চান। বাংলা গানের ভেতর দিয়ে, বাংলা গানকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিয়ে তিনি মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চান। সামিউল ইসলাম পোলাক বলেন, তিনি মানুষের ভালোবাসায় এবং নিজের বিশেষত্বে স্মরণীয় হতে চান। নিজের পরিশ্রম, প্রত্যয় এবং অধ্যবসায় দিয়ে নিজেকে তিনি অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান এবং সেই কাজের মধ্য দিয়ে, ভালোবাসার মধ্য দিয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চান। তাঁরা দুজনই নিজ নিজ ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে নিজেদের অনন্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ কথা অকপটে বলা চলে যে, তাদের হাত ধরেই তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি সঞ্চালিত হবে, শেকড়ের সাথে তরুণদের যোগাযোগ সুদৃঢ় হবে।

লিখেছেন – রোমান উদ্দিন