একজন জীবন্ত কিংবদন্তি: লুবনা মরিয়ম

একজন জীবন্ত কিংবদন্তি: লুবনা মরিয়ম

দেশীয় সংস্কৃতি চর্চায় যে জাতি যত বেশি সমৃদ্ধ সে জাতি তত বেশি উন্নতি করতে পারে। সংস্কৃতি জীবনের দর্পন। নিজ দেশীয় সংস্কৃতি লালনের মাধ্যমেই ব্যক্তির মাঝে দেশপ্রেম, আদর্শ ও নৈতিকতার জন্ম নেয়।  আমাদের দেশে এমন কিছু মানুষ আছেন যারা সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন কালের গহ্বরে যাতে দেশীয় সংস্কৃতি হারিয়ে না যায়। নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করার জন্য করে যাচ্ছেন নিরলস পরিশ্রম। আজকে এমনি একজন কিংবদন্তির কথা বলবো যিনি সমগ্র বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে উচ্চ শিখরে নিয়ে গিয়েছেন। নিজের দেশের সাথে সাথে নন্দিত করেছেন নিজের নামকেও, সার্থক করেছেন নিজের জন্মকে। তিনি হলেন বাংলাদেশের প্রথিতযশা নৃত্যশিল্পী ও গবেষক, স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন গর্বিত সৈনিক এবং বাংলা সংস্কৃতির ঐতিহ্যের ধারক লুবনা মরিয়ম।

লুবনা মরিয়মের জন্ম ১৯৫৪ সালে। নন্দিত এই নৃত্যশিল্পী মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুজ্জামান ও অধ্যাপক ড. সুলতানা কামালের কণ্যা। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থী ক্যাম্পে শরণার্থীদের সেবা শুশ্রুষার কাজ করেন। বুয়েটে স্থাপত্যকলায় ভর্তি হলেও তৃতীয় বর্ষেই শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে নাচে মনযোগী হন এবং নৃত্যকলা নিয়ে পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে তিনি টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন।

নাচকে কিভাবে জীবনের অংশ করেছেন এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জীবন কখনো সরলরেখার মতো চলে না। সবার জীবনেই আনন্দ ও দুঃখ-কষ্টের সংমিশ্রণ থাকে। লুবনা মরিয়মের জীবনও স্রোতের ব্যতিক্রম ছিলো না। ছোটবেলা থেকেই নানা রকম শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে বড় হয়েছেন তিনি। শৈশবের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন হাসপাতালে তাইতো হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে ডাক্তার হবেন তিনি। স্বল্পভাষী হওয়ায় একা একাই থাকতেন বেশিরভাগ সময়। তাই তার অধ্যাপিকা মা তাকে নাচের একাডেমিতে ভর্তি করে দেন। প্রথমে নাচ তার পছন্দ না থাকলেও ধীরে ধীরে মঞ্চের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে তার। 

 বাংলা ও বাঙ্গালীর সংস্কৃতিকে মনে প্রাণে ধারণ করেন লুবনা মরিয়ম। শিল্পচর্চার সাথে ছেলেমেয়েদের যুক্ত করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। কেননা একমাত্র  শিল্পচর্চার মাধ্যমেই ছেলেমেয়েদের সঠিক মানসিক বিকাশ হয় বলে তার ধারণা। শুধু সংস্কৃতির চর্চা নয় সেই সাথে সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণাও করেন তিনি। দেশ ও জাতির সংস্কৃতি নিয়ে বিভিন্ন ধরণের গবেষণামুলক লেখা রয়েছে তার। সৃষ্টি করেছেন ‘সাধনা (এ সেন্টার ফর দ্যা এডভান্স অব সাউথ এশিয়ান কালচার)’  এর মতো প্রতিষ্ঠান। সাধণা কেন এবং কিভাবে আসলো এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “সাধনা প্রথমে কেবল নাচ-গানের  প্রশিক্ষণ চর্চা  কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দিন যত বাড়ছিলো তিনি তত বেশি অনুধাবন করতে পারছিলেন যে শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁর কাজ সম্পূর্ণ হবে না। বাংলার সংস্কৃতিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে যথাযথ ভাবে তুলে ধরতে হলে সেগুলোর সংরক্ষণ করতে হবে। সেই লক্ষ্যেই তিনি শুরু করেন প্রযোজনা। এ পর্যন্ত ২৬টিরও বেশি পরিচালনা রয়েছে তার।

বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতি বাইরের মানুষের কাছে কেমন এই ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাইরের মানুষের কাছে এদেশের শিল্প সংস্কৃতি কেমন তা ঠিক বলতে না পারলেও দেশের মানুষের গর্ব করা উচিত এ দেশে জন্মেছে বলে। বিভিন্ন দেশ থেকে যেমন নদী এসে একই মোহনায় মিলিত হয় সংস্কৃতির ব্যাপারটিও তার কাছে ঠিক তেমন। সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল আবার সংস্কৃতির সংমিশ্রণও হয়। বিভিন্ন দেশে নানা রকম চিন্তা আছে সেসবের সংমিশ্রণে সংস্কৃতির পরিবর্তন হয়। এদেশের সংস্কৃতিকে মিশ্র সংস্কৃতি বলেন তিনি। এদেশে বৌদ্ধ দর্শন যেমন আছে ঠিক তেমনি চৈতন্য, শ্রীকৃষ্ণ, বৈষ্ণব, আবার ব্রিটেন সহ বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি এক হয়ে যোগ করেছে এক ভিন্ন মাত্রা। এতো ছোট দেশে এতো সংস্কৃতির মিশ্রণ নতুন প্রজন্মের এসব জানা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

বর্তমানে লক্ষ্য করা যায় যে বলিউড ও পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে দেশীয় সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বাঙালির বিয়েতেও চলে এসেছে বিদেশী ছাপ। এই যে সংস্কৃতির হারিয়ে যাওয়ার অবস্থা এই নিয়ে লুবনা মরিয়মের ভাবনা কী তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিবর্তন থামানো যায় না। তবে ঐতিহ্যের সাথে নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। নতুন প্রজন্মের মাঝে সংস্কৃতির ভালোলাগা ও ভালোবাসা তৈরি করা গেলে তারাই এসব চর্চা করবে। 

মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে পরোক্ষভাবে কাজ করেছেন তিনি। তার পিতা এবং ১৫ বছরের ছোট ভাই সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। খুব কাছ থেকে তিনি ও তার পরিবার মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করায় তিনি কখনো মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করেন নি এমনকি তার পিতার কড়া আদেশ ছিল কখনো তাদের বাড়িতে যেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা না হয়। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসে তিনি মনে করছেন এখন সময় এসেছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করার। কেননা, এই প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানেন না। তিনি মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধকে অনেকে ভুলভাবে ব্যাখা করছেন যেটা কখনোই কাম্য নয়। তাইতো তিনি মুক্তিযুদ্ধের ওপরে ‘মহানন্দা’ নামে একটি চিত্রনাট্য উপস্থাপন করেন। মহানন্দা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৪ ডিসেম্বরে মদানন্দার তীরে ৪০টি লাশ পাওয়া যায়। লাশগুলো কার সে সম্পর্কে যেমন কেউ জানে না ঠিক তেমনি লাশগুলোর কোন নথিও পাওয়া যায় নি। কিন্তু এসব সম্পর্কে মানুষের জানা উচিত। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে নানা ধরনের ভুল ব্যাখা হয়। ভারত মনে করে তারা বাংলাদেশকে ১৩ দিনে স্বাধীন করেছে। কিন্তু এই দেশকে ভারত স্বাধীন করেনি। আমাদের দেশের সর্বস্তরের জনগন এই দেশকে স্বাধীন করেছে। অবশ্যই ভারত আমাদের সাহায্য করেছে তবে কৃতিত্ব তাদের নয়। কৃতিত্ব আমাদের দেশের জনগনের। 

মৃত্যুর পর নিজেকে কিভাবে স্মরণীয় করতে চান এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি প্রাতিষ্ঠানিক কোন পরিচয় চান না। তবে একজন সৎ মানুষ হিসেবে মানুষ তাকে মনে রাখুক এইটাই তার প্রত্যাশা।

দেশবরেণ্য এই নৃত্যশিল্পী নৃত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৯ সালে শিল্পকলা পদক লাভ করেন। ২০১৬ সালে ৭১ ফাউন্ডেশন, ২০১৫ সালে জিনাত জাহান স্মৃতি পুরষ্কার সহ নানা ধরনের পুরষ্কারে ভুষিত হয়েছেন তিনি।

গুনী এই শিল্পী দেশের জন্য কাজ করছেন। দেশের শিল্প ও সংস্কৃতিকে সংরক্ষণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। নতুন প্রজন্ম তার এই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি চান, মানষ চিন্তা ও চেতনাকে কাজে লাগিয়ে  এই পৃথিবীকে সুন্দর করে রাখুক। দেশকে বাঁচানোর জন্য নতুন প্রজন্ম এগিয়ে আসুক।

লিখেছেন – রোমান উদ্দিন

তাজুল ইমাম: গুলি, তুলি এবং সুরের ঝংকার

তাজুল ইমাম: গুলি, তুলি এবং সুরের ঝংকার

১৯৭১ এ যখন দেশ যখন ক্রান্তিলগ্নের সম্মূখীন, তখন এদেশের লক্ষ লক্ষ সূর্যসন্তান ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশকে শত্রুমুক্ত করতে। জাত, শিক্ষা, পেশা নির্বিশেষে দেশমাতৃকার সন্তান হিসেবে যুদ্ধ করে তারা আমাদের জন্য ছিনিয়ে আনেন স্বাধীনতা। তেমনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম। তাজুল ইমাম একজন শিল্পী, চিত্রকর, সঙ্গীতজ্ঞ, গায়ক এবং গীতিকার, যিনি কয়েক দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন এবং কাজ করছেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে পড়াশোনা করেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ডিজিটাল আর্ট প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। তাজুল ইমাম প্রখ্যাত বাংলাদেশী রক ব্যান্ড ‘সোলস’ এর প্রধান কণ্ঠশিল্পী ও গীতিকার ছিলেন। কবিতা লেখা ও আবৃত্তি করাও তার নেশা। তাজুল গ্রাফিক্স মিডিয়ার সিনিয়র ডিজাইনার এবং শিল্প ও গ্রাফিক্স পরামর্শক। চিত্রশিল্পের ক্ষেত্রে তিনি তেল, অ্যাক্রিলিক, জলরঙ, কালি, পেন্সিল, মিক্স-মিডিয়া এবং ডিজিটাল ইত্যাদি অনেক শিল্প মাধ্যমে দক্ষ। এত দক্ষতা, এত পরিচয় থাকা সত্ত্বেও তার কাছে জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন এবং সফলতা তার এই মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়। তিনি বলেন, পরাধীনতার শেকল নিজে অনুভব করেছেন বলেই স্বাধীনতা তার কাছে এবং প্রতিটি বাঙালির কাছে একটি অমূল্য ধন। 

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি জানান, সেই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ববর্তী রাজনৈতিক উত্থান-পতনের ব্যাপারে সবাই সচেতন ছিল। তাই তো তখন মাত্র সতেরো বছর বয়সেই তিনি পরিষ্কারভাবে জানতেন এবং বুঝতেন দেশে কী ঘটছে! যখন অস্ত্র বোঝাই এমভি সোয়াত চট্টগ্রাম বন্দরে আসে, তখনই তাঁরা বুঝতে পারেন কাদের বিরুদ্ধে চলবে এই অস্ত্র। নিজেদের সাধ্যমতো তাঁরা প্রতিবাদ করে যান। ২৫ মার্চের ভয়াল রাতে তিনি সপরিবারে চট্টগ্রামের পোর্ট কলোনিতে ছিলেন। সেখানে আক্রমণকারী পাকিস্তানি বাহিনী ও প্রতিরোধকারী স্বল্প সংগঠিত বাঙালী সেনাবাহিনী এবং ইপিআরের গোলাগুলির মাঝে পড়ে যান তাঁরা। সেখান থেকে তার বাবা পরদিনই পুরো পরিবারকে সরিয়ে আনেন এবং দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ভারতীয় সীমান্ত পার হয়ে তাঁরা ভারতের মনুতে পৌঁছান। সেখান থেকেই আরও ১৭ কিলোমিটার দূরে হরিণা রিক্রুটিং ক্যাম্পে যুদ্ধের জন্য তাকে রিক্রুট করা হয় এবং ২০ দিন পর বগাফা ট্রেনিং সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানে ২১ দিন ধরে তিনি হালকা অস্ত্র যেমন, স্টেনগান, গ্রেনেড, থ্রি নট থ্রি, রকেট লঞ্চার ইত্যাদির ট্রেনিং নেন। সময়ের প্রয়োজনে সেদিনের সেই কিশোর অতি অল্প সময়ে মানসিকভাবে এক দায়িত্বশীল পুরুষে রুপান্তরিত হয়েছিল। ট্রেনিং শেষে অপারেশনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের ভেতর দিয়ে পাহাড়ি পথ পেরিয়ে ফটিকছড়ি দিয়ে তাঁরা হাটহাজারী এসে পৌঁছান। সেখানে বদিউল নামের এক সহযোদ্ধার বাড়িতে অস্ত্র লুকিয়ে রেখে অপারেশনের প্রস্তুতি নিতেন তাঁরা। নুরুল বর্ষণ নামে তার প্লাটুনেরই একজন দক্ষ যোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা খাওয়া তথা সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন। আর তাজুল ইমামের দায়িত্ব ছিল অপারেশন পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন। যুদ্ধের সেই সময়ে তাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছে বিভিন্ন গান, বিভিন্ন মানুষ এবং নানা স্মৃতি। বঙ্গবন্ধু তখন দেশের মানুষের এক প্রধান অনুপ্রেরণার নাম, যুদ্ধের এক মূল চালিকাশক্তি। নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে তাজুল ইমাম বলেন, বঙ্গবন্ধু মানুষের হৃদয়ের অতি গভীরে তার জায়গা করে নিতে পেরেছিলেন। সে জন্যেই তো যে জাতির দীর্ঘদিনের ইতিহাস ছিল বৈদেশিক শাসনের ইতিহাস, সেই জাতিই ভেতরের জমাটবাধা ক্রোধকে আশ্রয় করে বিক্রমের সাথে শত্রুর মোকাবিলা করেছে।

তাজুল ইমাম মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তার দ্বিতীয় জন্ম হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর আগে তিনি একজন কিশোরমাত্র, লুকিয়ে বই পড়া, ছোটখাটো গল্প কবিতা লেখার মাঝে যার জীবন সীমাবদ্ধ। সেই কিশোর কোনো ভয়াবহতা না বুঝেই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপ দিয়েছিল। সে জন্যেই আজ আমাদের স্বাধীনতা দিবস কিংবা বিজয় দিবসের মতো দিনে আনন্দের পাশাপাশি বেদনার এক করুণ সুরও তার হৃদয়ে বেজে ওঠে। তার মতো যারা মায়ের জন্য চিঠি লিখে রেখে ঘর ছেড়েছিল দেশকে মুক্ত করতে, তাদের কতজনই আর ঘরে ফিরে আসে নি। কত বন্ধুর সাথে আর কোনোদিন দেখা হয় নি, কতজন কত আজানা জায়গায় চিরনিদ্রায় শায়িত, এই স্মৃতিগুলোয় বারবার তার মানসপটে ভেসে ওঠে। যুদ্ধের পর এক দীর্ঘসময় ধরে তিনি যুদ্ধপরবর্তী মানসিক আঘাত বয়ে বেড়িয়েছেন। তারপর তাকে পলিটেকনিক কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। সেখানে মন না বসায় পরবর্তীতে বড় ভাইয়ের উৎসাহে চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজে ভর্তি হন। এখানে পড়ার সময়ই গানের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যান, যোগ দেন জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘সোলস’ এ। একা চট্টগ্রাম শহরে থেকে গান এবং চিত্রকলা একসাথে চর্চা করতে গিয়ে তিনি শারীরিকভাবে প্রচন্ডভাবে ভেঙ্গে পড়েন। সে সময় নিজের বন্ধুবান্ধব এমনকি শিক্ষকরা স্নেহ ও যত্নে তাকে সারিয়ে তোলেন। তার জন্য বন্ধুর মায়েরা নিজ হাতে খাবার রান্না করে পাঠাতেন। তিনি বলেন, আজন্ম এই সকল স্নেহডোরে তিনি বাঁধা থাকবেন।

যখন সোলস এর সঙ্গে তার যাত্রা শুরু হয়, তখন সদ্য স্বাধীন দেশে তাঁরা ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। ওয়েস্টার্ন ঘরানার সংগীত তখন বাংলাদেশে নতুন। নিজে বাউল শিল্পী হিসেবে তাজুল ইমাম এবং তার ব্যান্ড দেশীয় বাউল সংগীতের সাথে এই পাশ্চাত্য সংগীত এর এক মিশ্রণ ঘটানোর চেষ্টা করেছেন। তাজুল ইমাম জানান, নিজে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে গ্রাম-লোকালয় থেকে বাউল গান সংগ্রহ করেছেন। তারপর সেগুলো নিয়ে পাশ্চাত্যধর্মী সংগীতের সাথে কাজ করেছেন। সেই সকল কাজ তখনকার দর্শক এবং শ্রোতারা লুফে নিয়েছিলেন। সোলস এর তখন ঘরে ঘর পরিচিতি। কিন্তু শীঘ্রই তাদের মনে হল, উচ্চারণ, স্পন্দনসহ বিভিন্ন ব্যান্ডের নিজস্ব গান থাকলেও তাদের নিজেদের কোনো গান নেই। এমনকি সেসময় তাদের পছন্দের সাথে যায় এমন গীতিকারও তাঁরা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ঠিক তখনই ব্যান্ডের বন্ধুদের একপ্রকার জোরাজুরিতেই তাজুল ইমাম গান লেখা শুরু করেন। ‘খুঁজি যাহারে’সহ তার লেখা অনেক গান দীর্ঘ ৪৮ বছর পরও ‘সোলস’ এর নানা আয়োজনে আমরা শুনতে পাই।

সঙ্গীতশিল্পী তাজুল ইমামের পাশাপাশি চিত্রশিল্পী তাজুল ইমামও স্বীয় প্রতিভায় সমুজ্জ্বল। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে চিত্রশিল্প তাকে যুদ্ধের বিভীষিকা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে, থেরাপির মত কাজ করেছে। তারপর থেকেই চিত্রশিল্পের সাথে এক নিবিড় বন্ধনে জড়িয়ে গেছেন তিনি। প্রথম যখন বিদেশে যান তখন নানা ধরনের চাকরি করেছেন। তারপর টেক্সাসের এক আর্কিটেকচারাল গ্রাফিক্স কোম্পানিতে চাকরি নেন। ১৯৯০ এর দিকে আরও কিছু কোম্পানিতে ঘুরে তিনি যোগ দেন হিউস্টনের এক কম্পিউটার কোম্পানিতে। সেখান থেকেই কম্পিউটারের বিভিন্ন কার্যকারিতা তিনি শিখতে থাকেন, তুলির কাজ যে সহজেই কম্পিউটার দিয়ে করা যায় তা বুঝতে পারেন। তারপর তিনি নাসাতে ইন্টারফেস ডিজাইনার হিসেবে যোগদান করেন। এই কাজে যথেষ্ট সুখ্যাতি অর্জন করা সত্ত্বেও তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। তার ছবি আঁকার দক্ষতা লাইফসাইন্স প্রজেক্টের প্রধানের নজর কাড়ে। তার উৎসাহে তাজুল ইমাম লাইফসাইন্স প্রজেক্টের বারান্দায় এক বিরাট ম্যুরাল আঁকেন, যার খ্যাতির কারনে সেটি স্থায়ী প্রদর্শনীতে জায়গা করে নেয়। নিউ ইয়র্কে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে প্রভূত খ্যাতি এবং অর্থ উপার্জন করার পর আবার তার দেশে ফিরে যাবার ইচ্ছা হয়। সেই ইচ্ছা নিয়েই ২০০৬-০৭ এর সময়ে দেশে ফিরেছিলেন। কিন্তু আক্ষেপ করে বলেন, ২৫-৩০ বছরের মধ্যে একটি দেশের সমাজ, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি সব কিছুতেই ব্যাপক পরিবর্তন আসে। চারিদিকের অপরিচিত চেহারার ভীড়ে দেশকে চিনতে না পেরে আবার বিদেশে পাড়ি জমান।

তাজুল ইমাম নিজের ক্ষোভ, দুঃখ, বিষাদ থেকে সাম্প্রদায়িকতা এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে বহু ছবি এঁকেছেন। এমন একটি বাংলাদেশের প্রার্থনাই তিনি করেন, যেখানে সকল ধর্ম, বর্ণ ও জাতের মানুষ এক ভ্রাতৃত্ববোধের অনুভূতি নিয়ে বাস করবে। নিজের ব্যক্তিজীবন নিয়ে তিনি বলেন, তার এই ছন্নছাড়া জীবনে যে মানুষটি শৃঙ্খলা আনতে সচেষ্ট, তিনি তার স্ত্রী। এমনকি তার ছবি আঁকার জন্য আলাদা একটি স্টুডিও তৈরি করে দিয়েছেন তিনি, যেখানে নিশ্চিন্তে শিল্পসৃষ্টিতে মনোনিবেশ করতে পারেন তাজুল ইমাম। তার কন্যাও নিয়মিত বাবার স্বাস্থ্যের এবং শিল্পের খোঁজ নেন। এসব কারণে নিজের স্ত্রী এবং কন্যার প্রতি তিনি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। বর্তমানে তিনি কোলাজের মাধ্যমে শিল্পকর্ম তৈরি করছেন। তিনি মনে করেন, পাথর মানবজীবনের একটী বড় অনুষঙ্গ। সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ইতিহাস, শিল্প, ধর্ম সকল ক্ষেত্রে পাথরের একটি বিরাট উপস্থিতি মানবসভ্যতায় প্রতীয়মান। তাই পাথর নিয়ে, ফেলে দেয়া কাগজের ব্যাগ নিয়ে তিনি বর্তমানে কাজ করছেন। এর বাইরেও তিনি মন্টেসরি এডুকেশনাল ম্যাটেরিয়ালের জন্য বই এর অঙ্কনের কাজ করছেন। এই সূত্র ধরেই ইসলামের ইতিহাস, নবী (সঃ) এর জীবনের ইতিহাস, খালিফায়ে রাশেদীন এবং অন্যান্য নবীদের ইতিহাসের চিত্র বর্ণনা তৈরি করছেন। তাজুল ইমাম পাশ্চাত্যের শিল্পী এবং শিল্প বিপ্লবের ইতিহাস নিয়ে সময়কাল রচনা করেছেন এবং বই লিখেছেন। এছাড়াও মানুষের যোগাযোগব্যবস্থার পরিবর্তন থেকে শুরু করে মুসলিম বিজ্ঞানীদের নানা আবিষ্কার নিয়েও তিনি বই লিখেছেন। এই সময়েও এসেও তাই তাজুল ইমাম অত্যন্ত কর্মব্যস্ত একজন শিল্পী। নিজের কাজের মধ্য দিয়েই তিনি কোনো এক অসম্ভবকে, প্রয়াত শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আহমেদের ভাষায় যাকে বলে জোছনার ফুল, সেই ফুলকে ছুঁয়ে দেখতে চান। আমাদের বিশ্বাস, তার শিল্প, তার কর্ম তাকে সেই অসম্ভবের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেবে।

 

লিখেছেন – রোমান উদ্দিন

মানবতার সেবক: ডা. মাসুদ বকশ

মানবতার সেবক: ডা. মাসুদ বকশ

মানবতার সবচেয়ে বড় পরিচয় পাওয়া গিয়েছে করোনা মহামারীতে। সেই সময় জাত-পাত ভুলে গিয়ে সবাই সবাইকে সাহায্য করেছেন। শুরুর দিকে করোনা আমাদের কাছে ছিলো এক আতঙ্কের নাম। কারোর করোনা হওয়া মানেই সে প্রায় নিশ্চিত মৃত্যু ধরে নেওয়ার মতো অবস্থায় ছিলো। এমন সংকটে কিছু মানুষ একদম সরাসরি মানবতার সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। তারা হলেন ডাক্তার পেশাজীবী সম্প্রদায়। ডাক্তাররা নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে, পরিবারের থেকে দূরে থেকে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। এতে করে অনেকে যেমন প্রাণ হারিয়েছেন, অনেকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। আজকে কথা বলছিলাম এমনই একজন মানবতার সেবকের সাথে যিনি করোনার সময় আমেরিকার সাধারণ মানুষদের জন্য সম্মুখ যোদ্ধা হয়ে কাজ করেছিলেন। শুধু তাই নয়, নিজেও পাঞ্জা লড়ে জয়ী হয়েছেন করোনা যুদ্ধে। তিনি হলেন ডা. মাসুদ বকশ।
ডা. বকশের কাছে জানতে চেয়েছিলাম করোনায় ডিউটি করার অনুভূতি কেমন ছিলো? এর উত্তরে তিনি বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি হবে, তখনও করোনা এতটা ভয়াবহ রূপ লাভ করেনি। তারা ভেবেছিলেন করোনা এতদূর ছড়াবে না কিন্তু হুট করে একদিন এক ট্রাভেলার আসে প্রচন্ড জ্বর নিয়ে। ট্রাভেলার একটা স্টেট থেকে ট্রাভেল করে তাদের স্টেটে ইমার্জেন্সি ডাক্তার দেখাতে যায় কারন তার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর ছিলো। তখন টেস্ট করারও উপায় ছিলো না কিন্তু ট্রাভেলার কে যখন এক্সরে করানো হলো তখন এক্সরে রিপোর্ট দেখে অনুমান করলেন ট্রাভেলার করোনায় আক্রান্ত আর এটাই তাদের প্রথম রোগী”। প্রচন্ড ভয় নিয়ে ডিউটি শুরু করেন বলে জানান তিনি।

তার নিজের উপসর্গ কখন দেখা দিয়েছে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “একদিন ডিউটি করে বাসায় গিয়ে যখন ঘুমাচ্ছিলেন তখন প্রচন্ড কাশিতে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। তার অন্য কোন উপসর্গ ছিলো না তবে কাশির ধরণ দেখে তিনি আন্দাজ করেন কিছু একটা হয়েছে। পরদিন তার ডিউটি ছিল। ডিউটিরত মেডিকেল অফিসারকে কল দিয়ে তিনি বলেন যে তার মনে হচ্ছে ডিউটিতে যাওয়া উচিত হবে না, আগে টেস্ট করানো উচিত। তখন তার একজন কলিগ তাকে টেস্ট করানোর ব্যবস্থা করে দেন। কিছুক্ষণ পর তার হস্পিটালের সিইও তাকে কল দিয়ে বলেন যে তিনি কোভিড পজেটিভ। তবে তিনি আরও জানান, করোনার সময় তার কাশি ছাড়া অন্য কোন উপসর্গ ছিলো না। তাই স্ত্রীকে বলছিলেন, করোনা যদি এমন হয় তাহলে তো ভয় পাবার কিছু নেই। কিন্তু, ৪/৫ দিন পর তার শরীরের অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে। একপর্যায়ে তিনি কোমায় চলে যান।
তিনি লাইফ সাপোর্ট এ যাওয়ার আগের ঘটনাগুলো সম্পর্কে তিনি জানান ,আস্তে আস্তে যখন তার শরীর খারাপ হতে থাকে তখন তার স্ত্রীও জ্বরে আক্রান্ত হন। পরবর্তীতে পরীক্ষা করে দেখা গেলো তার স্ত্রীও করোনা পজেটিভ। ধীরে ধীরে তার অক্সিজেন লেভেল কমতে থাকে। পরবর্তীতে তিনি নিজেই এম্বুলেন্স ডেকে হাসপাতালে যান। কেননা, তিনি ও তার স্ত্রী একাই থাকতেন। কর্মস্থলের কারনে মেয়েরা বাইরে থাকতেন। তখন হাসপাতালে যাওয়ার পর সেখানকার ডাক্তাররা তার অবস্থা দেখে একটা চিকিৎসা দেন যেটা রেকমেন্ডেট ছিলো না। কেননা এতে যে বা যারা চিকিৎসা দিবে তাদেরও আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। তবুও তারা তার ক্ষেত্রে এই চিকিৎসাটা প্রয়োগ করেন। এরপর তার আর কোন স্মৃতি তার মনে নেই বলে জানান তিনি। তিনি তখন কোমায় ছিলেন।

তবে তিনি জ্ঞান ফেরার পর যা যা শুনেছেন সেগুলো আমাদের সাথে বলেছেন। তিনি বলেন, তিনি যখন কোমায় ছিলেন তখন তার মেয়েরা অনেক কষ্ট করেছে। বিশেষ করে করোনার সময় কোভিড সারভাইভারদের কাছ থেকে অনেক কষ্ট করে প্লাজমার ব্যবস্থা করেছেন তার ডাক্তার মেয়ে। তিনি আরও বলেন, তার অসুখের সময় একটা মেডিসিন নিয়ে ডাক্তারদের হয় কেননা ৫৫ বছর বয়সের বেশি মানুষের ক্ষেত্রে মেডিসিন কাজ করে না বরং ইমিউন সিস্টেমকে আরও দুর্বল করে দেয়। এছাড়াও তাকে একমো মেশিনে দেওয়া হবে কি হবে না এটা নিয়েও প্রচন্ড বিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে তার মেয়ে রীতিমত যুদ্ধ করে তাকে একমো মেশিনে দেয়। মেশিনে দেওয়ার ৭/৮ দিন পর ভেন্টিলেটর থেকে তাকে বের করা হয়। তখনও তার জ্ঞান ছিলো না বলে জানান তিনি। তারপর ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরে তার।

ডা. বকশের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, করোনায় তো অনেকেরই মানসিক কিছু সমস্যা দেখা গিয়েছিল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে। তারও মানসিক সমস্যা হয়েছিলো কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, উনার শারীরিক অনেক সমস্যা হয়েছিলো। যেমন- উনার হাতের আঙ্গুল বেঁকে গিয়েছিলো। হাত দিয়ে কোন কাজ করতে পারতেন না – লিখতে পারতেন না, টাইপ করতে পারতেন না। তবে সেই সাথে তিনি জানান, মানসিক দিক দিয়ে তার অবিশ্বাস্য এক পরিবর্তন হয়েছে। তিনি একজন নাস্তিক মানুষ ছিলেন। কিন্তু তিনি যখন কোমায় ছিলেন তিনি প্রার্থনার আওয়াজ শুনতে পান। তিনি পুরুষের গলায় প্রার্থনার ধ্ধনি শুনতে পেতেন। তিনি মন্দিদের ঘন্টাও শুনতে পেতেন এমনকি তিনি খ্রিষ্টের কাছেও মাফ চাইতেন। জ্ঞান ফেরার পর তিনি শুনতে পান, তার পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজন সকলে তার জন্য প্রার্থনার ব্যবস্থা করতেন। তবে তিনি এখনও জানেন না তিনি প্রার্থনা কেন শুনতেন। তবে বর্তমানে তিনি নিজেকে বিশ্বাসী বলে দাবী করেন। মানসিক পরিবর্তনের কথা বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, তার মানসিক কোন পরিবর্তন হয়নি তবে তার স্ত্রী মনে করেন তার ধৈর্য কমে গিয়েছে। তিনি তার মানসিক অবস্থার কথা বর্ণনা দিতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের কথা বিশেষভাবে বলেন। তিনি জানান, তার পরিবার এখনো তাকে নিয়ে আশংকায় থাকেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার প্রথম দিকে তার স্ত্রী অনেক ভয় পেতেন। তিনি ভাবতেন উনি বেশিদিন বাঁচবেন না। তিনি আরও মনে করেন, হাসপাতাল থেকে তিনি যেমন সেবা পেয়েছেন এমন সেবা হয়তো তিনি এখনও পর্যন্ত কাউকে দিতে পারেন নি।

ডা. মাসুদ বকশ বর্তমানে মেডিসিন ও রিজেনারেটেড মেডিসিন নিয়ে কাজ করছেন। তিনি মনে করেন, মানুষেরর সুস্থ জীবন যাপনে ফাংশনাল মেডিসিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি জানান, তার এই প্র্যাক্টিসে অল্প কিছু রোগী রয়েছেন তবে তারা সবাই অনেক সন্তুষ্ট এমং সুস্থ জীবনযাপন করছেন।
মানুষের কাছে তার একটাই প্রত্যাশা – সকলেই সুখী এবং সুস্থ থাকার চর্চা করুক। তিনি মনে করেন, যদি মানুষ সুস্থ থাকার জন্য জীবনযাত্রাকে পরিবর্তন করে তাহলেই তিনি তার কাজের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তিনি মৃত্যুর পর এভাবেই তার কাজের মাধ্যমে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চান।

লিখেছেন – রোমান উদ্দিন

ভাবনার ভাবনাগুলো: আশনা হাবিব ভাবনা

ভাবনার ভাবনাগুলো: আশনা হাবিব ভাবনা

বিনোদন মানুষের মনের খোরাক। এই বিনোদন মানুষ বিভিন্ন মাধ্যমে পেয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো নাটক ও সিনেমা। আর এই নাটক সিনেমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো অভিনয় শিল্পীরা। আজকে এমনই একজন দর্শকপ্রিয় অভিনয়শিল্পীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো যিনি কেবল অভিনয়ের জন্য জনপ্রিয়তা লাভ করেন নি, তিনি একাধারে একজন অভিনেত্রী, নৃত্যশিল্পী, মডেল, উপস্থাপিকা ও লেখক। তিনি তার অভিনয়ের মাধ্যমে যেমন দর্শকের মন কেড়ে নিয়েছেন তেমনি তার নাচের মাধ্যমে মুগ্ধ করেছেন শত শত দর্শককে। তিনি হলেন আশনা হাবিব ভাবনা। তিনি ১৯৯৪ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ঢাকাতেই তার বেড়ে উঠা। বাংলাদেশ লিবারেল আর্টস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি তার উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন।

ভাবনার কাছে প্রথম প্রশ্ন, ভাবনা কী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করে? উওরে ভাবনা বলেন, “আমি কোন পরিচয়েই পরিচিত হতে চাইনা। আমি ভাবনা হিসেবেই থাকতে চাই”। ভাবনাকে বিভিন্ন ইস্যুতে সোশ্যাল মিডিয়াতে কথা বলতে দেখা যায়। মানুষের বিপদে বা যেকোন সমস্যায় ভাবনা নিজের মতামত দেয়। কেন? এই প্রশ্নের জবাবে ভাবনা বলেন, মানুষের জন্য মানুষের যা করা উচিত ভাবনা তাই করে। তিনি মনে করেন একজন আরেকজনের বিপদে পাশে থাকা উচিত। বিশেষ করে তিনি মেয়েদের পাশে থাকা উচিত বলে মনে করেন। কেননা, তিনি মনে করেন মেয়েরা চুপ থাকবে, মেয়েরা নমনীয় থাকব এটাই সমাজ চায়। ভাবনা চুপ করে থাকতে চায় না।

একজন শিল্পী হিসেবে ভাবনার বেড়ে ওঠা কখন এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কখন তিনি শিল্পী হয়ে উঠেন ঠিক মনে নেই কেননা ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বেড়ে উঠেছেন তিনি। তার বাবা হাবিবুল ইসলাম হাবিব একজন নির্মাতা ও প্রযোজক ছিলেন। সেই সূত্রে অনেক অভিনেতা অভিনেত্রীর সাথে তার পরিচয় ছিলো। ছোটবেলা থেকেই তিনি শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। ৩ বছর বয়স থেকে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নাচ শেখেন। তিনি জানান, নৃত্যশিল্পী হতে গিয়ে একসময় মডেলিং শুরু করেন এবং মডেলিং করতে করতে একটা সময় অভিনয়ে যাত্রা শুরু করেন। একটা সময় পরে অভিনয়ের প্রেমে পড়ে যান তিনি। সেই থেকেই অভিনয়ের সাথে নিজেকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ফেলেন।
বর্তমানে কী নিয়ে কাজ করছেন ভাবনা? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, লাল মোরগের ঝুটি সিনেমাটি শেষ করেছেন। সম্প্রতি তিনি দামপাড়া নামক একটি সিনেমার শ্যুটিং শেষ করেছেন। সিনেমাটি মুক্তিযুদ্ধের প্লট নিয়ে। চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ এই সিনেমাটির প্রযোজনা করেন। এই সিনেমাটিতে তিনি শামসুল হকের স্ত্রী মাহমুদা হকের চরিত্রে অভিনয় করেন। মাহমুদা হক বাংলাদেশের প্রথম মহিলা এম্বাসেডর ছিলেন।

ভাবনা তো অনেক চরিত্রে অভিনয় করেছে। এখন পর্যন্ত কোন চরিত্র সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে? উত্তরে তিনি বলেন, সবগুলো চরিত্রই তার কাছে প্রিয়। তবে অনিমেষ আইচের পরিচালিত তার প্রথম সিনেমা ভয়ংকর সুন্দরের চরিত্রটি তার সবচেয়ে পছন্দের। তিনি জানান, লাল মোরগের ঝুটি সিনেমাটিতে পদ্ম চরিত্রটি মুক্তিযোদ্ধার চরিত্র। পদ্ম আদিবাসী একজন মেয়ে। এই চরিত্রটি করার সময় ভাবনার অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। আদিবাসী ভাষায় কথা বলা, তার মতো চলাফেরা করা এসব অনেক কষ্ট করে শিখতে হয়েছে। এমনকি টানা তিনমাস নিজের বাসায় একটা মোরগের সাথে থাকতে হয়েছে তাকে। চরিত্রটি তার কাছে অনেক আদরের। এখন তো ভাবনা একজন বড় পর্দার অভিনেত্রী। এখন যদি ভাবনাকে নাটক করতে দেওয়া হয়, নাটক করতে গেলে ভাবনা কী করবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কাজের ক্ষেত্রে তিনি কোন কম্প্রোমাইজ করেন না। তিনি সবসময় সেরা কাজটিই করবেন।

ভাবনার কাছে জানতে চেয়েছিলাম তিনি ডিরেক্টরের ডিরেকশনে কাজ করেন নাকি নিজের মতো কাজ করেন? এই প্রশ্নের উওরে তিনি বলেন, তিনি সবসময় ডিরেক্টরের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেন। তাকে কোন এজেন্সি বা প্রডিউসাররা নিতে চাননা। কেননা, তিনি ইন্ড্রাস্টিতে কোন দরকারি বন্ধুও বানান না আবার কাউকে মেইন্টেইন করেও চলেন না বলে মন্তব্য করেন। তাই সাধারনত তাকে কেউ কাস্ট করতে চায়না। খুবই বলিষ্ঠ পরিচালকরাই তাকে পছন্দ করেন। তাই তিনিও সবসময় পরচালকদের নির্দেশনা অনুযায়ীই কাজ করেন। তবে তার কাছে যদি মনে হয় স্ক্রিপ্টটা অন্যভাবে করা যায় তবে তিনি ডিরেক্টর ও লেখক দুজনের সাথেই আলোচনা করেন।

ভাবনার কাছে প্রশ্ন ছিলো তার প্রিয় সহ-শিল্পী কে? উত্তরে ভাবনা বলেন, অনেকেই তার প্রিয় যেমন রাইসুল ইসলাম আসাদের সাথে কাজ করতে ভাবনার খুব ভালো লাগে। এছাড়াও মামুনুর রশিদ, শিল্পী সরকার অপু, নাজনীন, তমালিকা কর্মকার উনাদের সাথে কাজ করতে তিনি খুবই স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করেন। এছাড়াও তিনি সজল, মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরি ও ফেরদৌস এর কথা বলেন। তার সম্প্রতী করার কাজটির সহ-শিল্পী ছিলেন ফেরদৌস। এখনো পর্যন্ত ভাবনার কাছে সহ-শিল্পী হিসেবে ফেরদৌসকে সেরা বলে মনে করেন তিনি।

প্রতিটা মানুষের কোন না কোন ব্যক্তিগত মানুষ থাকে যার কাছে নিজের সকল কথা শেয়ার করে একটু স্বস্তি পাওয়া যায়। ভাবনার জীবনে এমন ব্যক্তিগত মানুষ কে? এই প্রশ্নের উওরে ভাবনা জানান, তিনি তার ছোট বোনের সাথে সব শেয়ার করেন। এছাড়াও তার আরও একজন ব্যক্তিগত মানুষ আছেন এবং সেই মানুষটি তার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী। তিনি জীবনের সুখ দুঃখ সবকিছু তার বান্ধবীর কাছে বলেন। সম্পর্কের কথা শুনতে শুনতে জানতে চেয়েছিলাম এই সম্পর্ক নিয়ে কখনো বিরম্বনায় পড়তে হয়েছে নাকি ভাবনাকে? উত্তরে ভাবনা জানান, কোন কিছু আড়াল করতে চাইলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তাইতো তিনি তার সম্পর্কের ব্যাপারে কিছু আড়াল করতে চাননা। তবে সেলিব্রিটি হবার কারনে তিনি এবং তার সঙ্গী অনিমেশ আইচকে অনেক জায়গাতেই দর্শকদের সাথে একটু তিক্ত অভিজ্ঞতার মতো পরিবেশের সম্মুখীন হতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

ভাবনা অভিনয়ের পাশাপাশি লেখালেখিও করছেন। ভাবনার লেখালেখির বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন, ভাবনা এখনো পর্যন্ত ৪ টা উপন্যাস লিখেছেন। গত বছর ছবি আঁকায় মনযোগী ছিলেন বলে কোন বই লিখতে পারেন নি বলে জানান তিনি। তবে আগামী বছর একসাথে দুটো বই লিখার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন তিনি। ভাবনার পছন্দের লেখক কে? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেন প্রিয় কবি, ঔপন্যাসিক অনেকেই আছেন। তবে শাহাদুজ্জামান তার খুব পছন্দের একজন।

ভাবনার প্রিয় সিনেমা কোনটি? এর জবাবে ভাবনা জানান, রোমান হলিডে তার খুবই পছন্দের একটি সিনেমা। আর এন্ড্রো হেনরি তার পছন্দের একজন নায়িকা। মৃত্যুর পর ভাবনা কিভাবে স্মরণীয় হতে চান এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ভাবনা বলেন, তিনি লেখালেখির মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করেন। তিনি যা অনুভব করেন, তিনি যা ভাবেন সবকিছুই তার লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করেন। ভাবনার উপন্যাসের নামগুলো যেমন- গুলনাহার, তারা, গোলাপী জমিন দেখলেই বুঝা যায় উপন্যাসের সবগুলো চরিত্র নারী চরিত্র। ভাবনা মনে করেন পুরুষরা পুরুষ হবার কারনেই অনেক ভাগ্যবান। পুরুষরা সবকিছু খুব সহজে পায় কিন্তু মেয়েদের কষ্ট করে, সংগ্রাম করে অর্জন করতে হয়। মেয়েরা অধিকার ছিনিয়ে আনে। তাই ভাবনা চায় তার বইয়ের মাধ্যমে সে স্মরণীয় হয়ে থাকুক। তার বই পড়ে তার ভাবনাগুলোকে মানুষ জানুক এইটাই তার চাওয়া।

রাজনীতির রহস্যপুরুষ : আব্দুল আওয়াল মিন্টু

রাজনীতির রহস্যপুরুষ : আব্দুল আওয়াল মিন্টু

মানুষের জন্য ভালো কিছু করার স্বপ্ন হয়তো সবাই দেখে, তবে সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবার পথ একরকম হয়না। কেউ সাহিত্য রচনা করে, কেউবা গান করে কিংবা কেউ সমাজসেবা করে। আবার, কেউ স্বপ্ন দেখে আরও বড় পরিসরে। যারা খুব বড় পরিসরে দেশ ও সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন, তারাই হয়তো রাজনীতিকে বেছে নেন স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার হিসেবে। আজ ঠিক এমন একজন মানুষের কথা বলবো যিনি দেশ ও দশের কল্যানের কথা চিন্তা করে নিজেকে যুক্ত করেছেন রাজনীতিতে। অবশ্য তিনি শুধু রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, নিজের পড়াশোনার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন শিল্প ও কৃষির উন্নয়নে। তিনি হলেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ আব্দুল আওয়াল মিন্টু।

আব্দুল আওয়াল মিন্টু ১৯৪৯ সালে ফেনী জেলায় জন্মগ্রহন করেন। তার পিতাও ছিলেন একজন সমাজ সেবক। তাই হয়তো জন্মগতভাবেই পেয়েছেন মানুষের সেবা করার মতো মহান গুণটি। ফেনীতেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন। ১৯৫৮ সালে চট্টগ্রামের মার্কেন্টাইল মেরিন একাডেমি থেকে নৌ বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা ডিগ্রী নেন তিনি। নিউইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে মেরিন ট্রান্সপোর্টেশন বিজ্ঞানে বিএসসি ও এমএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে এগ্রিকালচার অব ইকোনোমিস এ মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে এল.এল.এম এ অধ্যয়ন করছেন ৭৪ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ।

আব্দুল আওয়াল মিন্টু প্রথমেই রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন না। কিছুদিন মেরিনে চাকরি করে চাকরির পাঠ চুকিয়ে দেশে ফিরে ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোনিবেশ করেন তিনি। তারপর ধীরে ধীরে রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বর্তমানে ব্যবসা ও রাজনীতির পাশাপাশি দেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে কাজ করছেন তিনি। কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে কিভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় এবং কিভাবে কৃষিখাতকে উন্নত করা যায়, এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে।
আব্দুল আওয়াল মিন্টু ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড ও জেনারেল লাইফ ইনস্যুরেন্সের পরিচালক। তিনি এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সহ-সভাপতি।

আব্দুল আওয়াল মিন্টু রাজনীতিতে এক রহস্যময় স্থানে অবস্থান করে আছেন। তার রাজনীতি চর্চার শুরুতে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর একজন নিষ্ঠাবান সমর্থক ও নেতা ছিলেন। তবে বিভিন্ন কারনে দলের সাথে ভিন্নমত পোষন করতেন তিনি । এ নিয়ে দলের মাঝে তাকে নিয়ে গুঞ্জনও ছিলো। একটা সময় পর দেখা যায় তিনি দল পরিবর্তন করেন এবং বিএনপিতে যোগদান করেন। তবে বিএনপির সদস্যরাও যে তাকে সাদরে গ্রহণ করেন বিষয়টি এমন নয়। বিএনপির সদস্যরা তাকে আওয়ামীলীগের চর ভাবতেন। এই বি্ষয়ে তিনি বলেন, দলের বিভিন্ন বিষয় তার পছন্দ হতো না, তিনি চাইতেন জনগণের কল্যান। এখানে তিনি আপোষহীন তাই দলের মতের বাইরে গিয়ে তিনি কথা বলতেন। এরজন্য কে কী ভাবলো তাতে তার খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না।

আব্দুল আওয়াল মিন্টুর কাছে প্রশ্ন ছিলো, এইযে ইদানীং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিভিন্ন কার্যকলাপে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের বর্তমান সহিংস রাজনীতির প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে কতটুকু সহায়ক বলে মনে করেন তিনি? উত্তরে তিনি জানান, “আমাদের মূল সমস্যা আসলে রাজনৈতিক। আমরা মুখে নিজেদের গণতান্ত্রিক মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়। বাংলাদেশে বর্তমানে একদলীয় শাসন ব্যাবস্থা বিরাজমান। তবে তিনি অন্যান্য একদলীয় শাসন ব্যবস্থার সাথে তুলনা করে বলেন, বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশ রয়েছে যেখানে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বিদ্যমান। কিন্তু সেসব দেশে অন্যান্য বিরোধীদলের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাদের ভাবনাকে সম্মান জানানো হয় কিন্তু বাংলাদেশে এসব হয় না। তিনি আরও বলেন, আগের বছর নির্বাচন হয়নি। একটি ভালো নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ কিন্তু বাংলাদেশে সেই ধরণের নির্বাচন হয়না। জনগণের কোন ধরণের অধিকার নেই। মানুষ নিজের স্বাধীনমতো মত প্রকাশ ক্রতে পারে না। আর এসব বিষয় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দৃশ্যমান, তাই আমেরিকান সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। তিনি আরও বলেন, তারা যেই আন্দোলন করেন নিষেধাজ্ঞার সাথে তাঁদের আন্দোলনের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তবে তিনি এটা স্বীকার করেন যে, এই নিষেধাজ্ঞা তাদের আন্দোলনের ক্ষেত্রে একটা সুবিধা হতে পারে, তবে এর উপর ভিত্তি করে তারা কোন আন্দোলন করছে না।

রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিরতা এসব হুট করে হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের আগেও ছিলো এখনও আছে। শাসন ব্যবস্থার এই সংকট উত্তরণের জন্য বিএনপির ভাবনা কী এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, একটি দেশের উন্নয়নের জন্য সবার আগে যা প্রয়োজন তা হলো আইনের শাসন। একমাত্র আইনের শাসনের মধ্য দিয়েই গণতান্ত্রিক উপায়ে দেশ পরিচালনা সম্ভব। বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক শুন্যতা, অস্থিরতা ও সহিংসতা বিরাজ করছে। বাংলাদেশকে এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। আর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা জরুরী।

বাংলাদেশে বর্তমানে যে নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে এইসব নির্বাচন থেকে নতুন প্রজন্ম কী শিক্ষা লাভ করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ গত ৫০ বছরে যা অর্জন করেছিলো তা এখন ভঙ্গুর করে ফেলেছে, নিজের দলের মাঝে দলাদলির সৃষ্টি করছে।
বর্তমানে নির্বাচনগুলোতে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে আসলেই তারা সফল হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আর সম্ভন নয়। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের ফলে সরকার সকল প্রতিষ্ঠানকে ভঙ্গুর ও দুর্বল করে ফেলেছে। এদেশে সুশাসন নেই, তাই চাইলেও এই দেশে আর সু্ষ্ঠূ নির্বাচন সম্ভব না বলে জানান তিনি।

আব্দুল আওয়াল মিন্টুর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, বিএনপি যদি আবার ক্ষমতায় আসে তবে তাদের দলীয় এজেন্ডা কী হতে পারে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখনো তারা কিছু ভাবেন নি। যখন নির্বাচন হবে আর তারা অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকবেন তখনই এজেন্ডা নিয়ে ভাববেন। তিনি আরও বলেন, দেশকে পূনরোদ্ধার করা ও দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা বিএনপির দায়িত্ব এখন। তিনি আরও মনে করেন, বর্তমানে বিএনপির সমর্থক অনেক। আওয়ামীলীগের অন্যায় ও অনাচারে দেশবাসী এখন মন থেকে চায় বিএনপি আসুক। এখন শুধু উপযুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যায় বাংলাদেশ দূর্নীতিতে শীর্ষে অবস্থান করছে। অন্যান্য দেশও পূর্বে এমন ছিল; যেমন দূর্নীতিগ্রস্থ দেশ রুয়ান্ডা এখন এসব কাটিয়ে উঠে উন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। বর্তমানে রুয়ান্ডাকে আফ্রিকার সিংগাপুর বলা হয়। বাংলাদেশও এভাবে ঘুরে দাড়াতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আবারও সুশাসনের কথা বলেন। তিনি মনে করেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত কোনধরণের ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার জিডিপির যেই বিবরণ দেন তা মোটেও সঠিক নয় বরং অন্য সরকারের সময় জিডিপির প্রবৃদ্ধি আরও বেশি ছিলো বলে মনে করেন তিনি।

বিএনপি নতুন নেতৃত্ব নিয়ে কিছু ভাবছে কি না এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি প্রতিনিয়ত দলকে সুসংগঠিত করছে। অনেক তরুন রাজনীতিবিদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, বিএনপির মাঝে তরুন প্রজন্মকে নেতৃত্বে এনে দেশের সামাজিক, প্রশাসনিক ও ব্যবসার পূর্ণগঠন করার প্রবণতা রয়েছে।

আব্দুল আওয়াল মিন্টু চান মৃত্যুর পর মানুষ তার কর্মের মাধ্যমে তাকে মনে রাখুক। একজন ভালো মানুষ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চান তিনি।

মাহমুদুর রহমান মান্না: সমাজ সংস্কারের একজন অগ্রনায়ক

মাহমুদুর রহমান মান্না: সমাজ সংস্কারের একজন অগ্রনায়ক

বাংলাদেশের রাজনীতি এবং গণমাধ্যমে এক সুপরিচিত মুখ হলেন মাহমুদুর রহমান মান্না। ছাত্রজীবন থেকে তিনি সমাজ পরিবর্তনের মনন নিয়ে রাজনীতির সাথে যুক্ত। ১৯৬৮ সালে তিনি ছাত্রলীগ এর আহ্বায়ক নির্বাচিত হন এবং চাকসুর জিএস নির্বাচিত হন ১৯৭২ সালে। ১৯৭৩ সালে জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৬ সালে জাসদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে ঢাকায় এসে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। পরবর্তীতে, ১৯৮০ সালে তিনি বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ গঠন করেন। ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয় হয়ে পড়েন। এরপর ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ যোগ দিয়ে ২০০৭ সালে আলোচিত এক এগারো সরকারের সময় বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে সংস্কারধর্মী মনোভাবের কারণে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের পদ থেকে বাদ পড়ে যান। তখন তিনি নাগরিক ঐক্য নামের রাজনৈতিক দল গঠন করেন। বর্তমানে তিনি এই দলের সভাপতি হিসেবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন পূর্বক জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ গ্রহণ করেছিলেন। কবিতার সাথে আলাপচারিতায় তিনি তার অতীত ও বর্তমানের রাজনীতি, দেশের সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরস্থিতি নিয়ে নানা বিশ্লেষণধর্মী বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।

তিনি জানান, দীর্ঘ একটা সময় ধরে তিনি এবং অন্যান্য বিরোধীদলগুলো একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। ২০১৪ এ সকল বিরোধী দলকে বাইরে রেখে নির্বাচন হয়েছে,‌ ২০১৮ তেও নির্বাচনের নামে হয়েছে প্রহসন, তাই এখন দেশের জনগণ তাদের ভোটাধিকার তথা একটি সার্বিক গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি কামনা করেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। এছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরাট বিস্তৃতি, দেশের স্বাধীনতার সাথে তাদের সম্পর্ক স্মরণ করে তিনি বলেন, বিগত ১০-১২ বছরে এই দল তাদের রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে ফেলেছে, মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। তাই মাহমুদুর রহমান মনে করেন, বিরোধীদল হিসেবে ক্ষমতার লড়াইয়ে হেরে গেলেও রাজনীতির মাঠে সরকারের সকল অপকর্ম মানুষের সামনে তুলে ধরতে পেরে তারা বিজয়ী হয়েছেন। এখন তীব্র আন্দোলন ছাড়া দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।

বিরোধীদলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই দীর্ঘসময়ে কেন আন্দোলনগুলো সফলতার মুখ দেখেনি, এর পেছনে যেমন সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন দায়ী, তেমনি বিরোধীদলগুলো তাদের আন্দোলন পরিকল্পনায় বা বাস্তবায়নে ভুল করেছে কিনা, নিজেদের নীতি-কৌশলের ক্ষেত্রে ভুল করেছে কিনা এই প্রশ্নগুলোও করা জরুরি। যেমন, ২০১৪ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি কৌশলগত ভুল করেছিল কিনা এই বিতর্ক থেকেই যায়। এর পাশাপাশি, এমন অনেক সময় গেছে যখন হয়ত আন্দোলন, কর্মসূচি থাকার দরকার ছিল, বলিষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ দরকার ছিল যা দেখা যায়নি। এর পেছনে অবশ্যই নেতৃত্বের একটি অভাব রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। এরসাথে তিনি এটাও বলেন যে, এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয় এবং এই সরকারও স্বাভাবিক নিয়মে ক্ষমতা ত্যাগ করবে না। তাই আন্দোলনই পরিবর্তনের একমাত্র গতিপথ এবং সে আন্দোলনের ধারা এবং রূপরেখা হয়ত মাঠে নামার পরই বোঝা যাবে।

তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক দিক থেকে এদেশের জন্য একটি সুষ্ঠু অবকাঠামো তৈরি করে দিয়ে যাওয়া সম্ভব। একটি বড় সমস্যা হল, এদেশের ভবিষ্যত নিয়ে একেকজন একেক রকম ভাবেন, কেউ হয়ত সমাজতন্ত্র চান, কেউ গণতন্ত্র বা কল্যাণ রাষ্ট্র, আবার কেউ শুধু ক্ষমতা অধিগ্রহন করতে চান। মাহমুদুর রহমান মনে করেন, এদেশের মানুষ অত্যন্ত ধৈর্যশীল, সহনশীল এবং পরিশ্রমী। তাই, এদেশে সব ধরনের পরিবর্তনই সম্ভব। বিশেষ করে যদি তরুণদেরকে উদ্বুদ্ধ করা যায়, তাদেরকে কল্যাণের কাজে ও সুস্থ রাজনৈতিক ব্যবস্থার পুনর্গঠনের কাজে নিয়োজিত করা যায়, তাহলে আগামী দীর্ঘসময়ে দেশ তাদের থেকে সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এদেশের একটি বড় জনগোষ্ঠী দরিদ্র ও বেকার। যদি মানুষই না খেতে পায় তাহলে লোক দেখানো তথাকথিত উন্নয়নে বিশেষ লাভ হবে না। তাই প্রবীন এই রাজনীতিক মনে করেন, প্রতি বছর যে লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয় সেটা রোধ করে এই অর্থ বরং দেশের এই জনগোষ্ঠীর কল্যাণে ব্যয় করা উচিৎ। উন্নতির মাপকাঠি হিসেবে লক্ষ হওয়া উচিৎ শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং বিচারব্যবস্থাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাও এখন ভঙ্গুর যেখান শিক্ষার চেয়ে বেশি সহিংসতা বা বাণিজ্য প্রাধান্য পায়। তিনি বলেন, এই ব্যাপারগুলোতে পরিবর্তন আনতে পারলে বাংলাদেশকে আপাদমস্তক পরিবর্তন করা সম্ভব।

এ ধরনের সমস্যাগুলো ছাড়াও সড়ক নিরাপত্তা, নারীর স্বাধীনতা, বেকারত্ব দূরীকরণের মত সব ব্যাপারেই নিজস্ব কর্মপরিল্পনা আছে বলে জানান মাহমুদুর রহমান। তিনি মনে করেন, এ ধরনের যেকোনো কাজের আগে প্রশাসনিক সংস্কার দরকার ও আধুনিকায়ন দরকার, যাতে করে লেনদেনে দুর্নীতির সুযোগ না থাকে। তার পরিকল্পনা মতে, তিনি ৬ কোটি নিম্ন আয়ের বা দরিদ্র মানুষের ডাটাবেজ তৈরি করতে চান যার উপর ভিত্তি করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের প্রত্যেকের কাছে এক হাজার টাকা করে প্রতি মাসে পৌছে যাবে। এর জন্য হয়ত বাহাত্তর হাজার কোটি টাকা লাগবে, যেটা খুব বেশি নয়। কারণ এদেশে উচ্চবিত্তের অনেকে ঋণ নিয়ে কোটি কোটি টাকা  বাইরে পাচার করে দিচ্ছে, কিন্তু এই টাকা গরীব মানুষদের দিলে তারা তাদের সংসার চালিয়ে দেশের মধ্যেই বিনিয়োগ করতে পারবে। এতে করে এই জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক নিরপত্তা নিশ্চিত হবে। এছাড়া শিক্ষা, বিচারব্যবস্থা, চিকিৎসার মতো ব্যাপারগুলোতেও নজর দেয়া প্রয়োজন। তিনি নিজে কল্যাণ রাষ্ট্রব্যবস্থার একজন প্রচারক, কিন্তু বলেন, কোনো গোড়া কার্যবিধির অনুসরণ না করে প্রয়োজন অনুসারে যখন যে কাজ করা দরকার, তাই করবেন।

দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, আমরা যদি আমাদের ডায়াবেটিক হাসপাতাল, আইসিডিডিআরবি কিংবা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দিকে তাকাই, তাহলে স্পষ্টত বোঝা যায় কম খরচে অতি উন্নত চিকিৎসা প্রদান করা সহজেই সম্ভব। দরকার হলে কমিউনিটি হাসপাতালের মত ব্যবস্থা স্থাপন করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য উপজেলা বা থানা পর্যায়ে সুচিকিৎসা সরবরাহ করা সম্ভব। শিক্ষার ক্ষেত্রেও মনে রাখতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের জায়গা নয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা ও শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা দিয়ে শিক্ষাকে পৌছে দিতে হবে।

স্বাধীনতা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত দেশের রাজনীতির সকল উত্থান-পতন সামনে থেকে দেখা ঋদ্ধ এই রাজনীতিবিদ মনে করেন, আজ পর্যন্ত পরিপূর্ণ গণতন্ত্র আমরা কখনো পাইনি। সে জন্যেই ৫০ বছরে যেখানে থাকার কথা ছিল সেখানে বাংলাদেশ পৌঁছাতে পারে নি। বরং ক্ষমতার বদল পালাবদলের রণক্ষেত্রে পড়ে এদেশের মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে। তাই তিনি উন্নয়নের স্বপ্ন, পরিবর্তনের স্বপ্ন নতুন করে মানুষকে দেখাতে চান। প্রতিনিয়ত এদেশ থেকে যে মেধাগুলো চলে যাচ্ছে, তাদের কাজে লাগানোর মতো সুষ্ঠু পরিবেশ ও ক্ষেত্র গড়ে তুলতে চান। যতদিন বেঁচে আছেন, ততদিন মানুষের সম্মান এবং ভালোবাসা নিয়ে তিনি বেঁচে থাকতে চান।

রাজনীতিবিদ হওয়ার পাশাপাশি মাহমুদুর রহমান মান্না একজন লেখকও, যার বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১৫। সেজন্যেই সামাজিক আন্দোলনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়াও তাঁর স্বপ্ন। মানুষের চিন্তা-ভাবনা দৈন্য দূর করতে তাদের সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করে যেতে চান তিনি। নানা সমস্যায় জর্জরিত আমাদের সমাজব্যবস্থায় মানুষের জন্য কাজ করতে যে মানবিকতা দরকার, সে মানবিকতার চিন্তাও কেউ করে না বলে তিনি মনে করেন। বলেন, জাতিগতভাবে আমরা আবেগ যতটা পেয়েছি, যুক্তিসিদ্ধ ভালোবাসা ততটা পাইনি। আমাদের রাজনীতির কারণেই আমরা সামাজিক ক্ষেত্রে চিন্তাশীল সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছি। নিজের দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বলেন, দলীয় রাজনীতি করেও সবার গ্রহনযোগ্যতা অর্জন করা যায়, সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়, যেমনটা করে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশকে ভালোবেসে, দেশের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থেকে, দেশে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করতে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের প্রতি তিনি আহবান জানান। তার সকল সদিচ্ছা ও শুভচেষ্টা সফল হক এই প্রত্যাশাই রইল।